বাংলাদেশের বুকে বড় বিপদ কাপ্তাই! জলশূণ্য হবে বিশ্বপ্রাণ শোকাচ্ছে দঃ আমেরিকারও, ভয়ানক পরিণতি

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাংলাদেশের বুকে এ কোন নতুন বিপদ? কাপ্তাইয়ের সিস্টেমেই প্রাণ শোকাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার? টিটিকাকা হ্রদের জল শুকিয়ে কাঠ। কোন অভিশাপে বিশ্বের এতো এতো মিষ্টি জলের হ্রদগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে? কোন চালে খেলছে জলবায়ু? কী ঘটছে পৃথিবীর বুকে? এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেঁচে থাকার জলটুকু পাবে তো বিশ্বের এতো এতো মানুষ? পৃথিবী থেকে জল উবে যাচ্ছে? কিভাবে এমন হাল হলো? এর জন্য দায়ী কে? দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ বাংলাদেশের রাঙামাটির ‘কাপ্তাই’ এর জল অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে।দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম হ্রদ বলা ভালো প্রাণ ‘টিটিকাকা’ ও এইভাবে শুকিয়ে যাচ্ছেত। তথ্য বলছে ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে আশঙ্কাজনকভাবে মধ্য এশিয়ার আরাল সাগর, মধ্যপ্রাচ্যের মৃত সাগরের মতো বিশ্বের অর্ধেকের বেশি বড় হ্রদ ও জলাধার শুকিয়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে কৃষি, জলবিদ্যুৎ, মানুষের ব্যবহারের জল নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ বাড়ছে। আর সেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাণ টিটিকাকা হ্রদ।

মধ্য আন্দিজ পর্বতমালার প্রায় ১২ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এই উচ্চতার জন্যই এটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ নৌযানযোগ্য হ্রদ বলা হয়। তবে সর্বোচ্চর খেতাব পেলেও এই উচ্চতাই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সূর্য অনায়াসেই এর জলকে ছুঁতে পারে। ফলে জলের বাষ্পীভবনও ঘটে খুব সহজেই। তাই এইভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাণ। তাপমাত্রার পাশাপাশি খরাও এর অন্যতম কারণ। হ্রদের চারপাশে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। যাদের বেশির ভাগই মাছ ধরা এবং কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। তাই টিটিকাকার জল শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। নৌ চলাচল ব্যাহত হওয়ায় লেকের চারপাশে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও কমছে। পর্যটন অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু সংকটের কারণে টিটিকাকার পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। সংকটগুলো চরমসীমায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে, খোলা আকাশের নীচে নীল জলের চোখ জুড়ানো সমাহার এখন অতীত।

শুধু টিকিকাকা বললে ভুল হবে। দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ এর রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদ এখন দিনদিন জনবসতিতে পরিণত হচ্ছে। দখলের হিড়িক চলছে বছরের পর বছর। পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচারে বন উজাড়, নাব্যতা সংকট ও অনাবৃষ্টির কারণে বড় বিপর্যয়ের মুখে রাঙামাটির ‘কাপ্তাই হ্রদ’। হ্রদ সৃষ্টিতে কাপ্তাইয়ে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, রাঙামাটির ৮ উপজেলায় নৌ যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যটন ব্যবস্থা ও জলে ভাসা জমিতে চাষাবাদসহ বহুমুখী সুবিধা। কিন্তু অবৈধ দখলের কবলে পড়ে দিনদিন নাব্যতা কমে যাওয়া সহ হ্রদের সুযোগ-সুবিধাগুলো লোপ পাচ্ছে। ১৯৬০ সালে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সৃষ্টি কাপ্তাই হ্রদের এখন বয়স প্রায় ৬২ বছর। বয়সের ভারে নাব্য সংকটে পড়া কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং নিয়ে শুধু কথার পিঠে কথা হয়েছে, কাজ শুরু করা যায়নি আজ পর্যন্ত। তাই গত কয়েক বছরে গ্রীষ্মের মরসুমে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কাপ্তাই দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টিটিকাকা, কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যবর্তী কাস্পিয়ান সাগরের ও একই পরিস্থিতি। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিষ্টি জলের উৎসগুলো এভাবেই ক্রমাগত শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রায় তিন দশক ধরে প্রতি বছর ২২ গিগাটন হারে জল শুকিয়ে গেছে। আর, পৃথিবীর মিষ্টি জলের প্রায় ৮৭ শতাংশই সঞ্চয় করে রাখে প্রাকৃতিক হ্রদ এবং জলাধারগুলো। সেগুলোর এই হাল হলে, বিশ্বজুড়ে এতো এতো মানুষের কী হবে? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলো আরও শুষ্ক হয়ে উঠছে এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলো আরও আর্দ্র হয়ে উঠছে। আর্দ্র অঞ্চলেও উল্লেখযোগ্য হারে জল কমে যাচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা মোটেই গোটা বিষয়টাকে হালকা ভাবে দেখছেন না। এই পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য তাঁদের। কিন্তু দায়ী কে এই পরিস্থিতির জন্য?

বিশ্বের ২ হাজার বড় হ্রদ নিয়ে করা নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মানুষের ক্রমাগত ব্যবহার, বৃষ্টিপাত প্রবাহের পরিবর্তন, অবক্ষয় ও ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেই হ্রদের জলর স্তর কমে যাচ্ছে। ১৯৯২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৫৩ শতাংশ জল কমে গেছে। অর্থাৎ শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয় যে বিপর্যয় পৃথিবীর বুকে ঘনিয়ে আসছে তার জন্য দায়ী মানুষ নিজে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version