রাশিয়া বিক্রি করে যুদ্ধের খরচ জোগাচ্ছেন পুতিন? যুদ্ধের জন্য সব করতে পারে যে দেশ

।। প্রথম কলকাতা ।।

রাশিয়া কি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে? রহস্য ঘনাচ্ছে! যুদ্ধের খরচ জোগাতে পুতিন তলে তলে কী করছেন? ঘুনাক্ষরেও কেউ টের পাচ্ছে না যুদ্ধে এতো এতো টাকা ঢালছে রাশিয়া, অথচ মানুষগুলো খেতে পাচ্ছে কি? যুদ্ধের টাকা আসছেই বা কোথা থেকে? মস্কোতে চলছে বড় খেলা। যুদ্ধের জন্য সব করতে পারে একটা দেশ। তার নাম রাশিয়া। তাই যে টাকা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো সহ অন্যান্য খাতে খরচ করা যেত সেই টাকা যুদ্ধে ঢালছেন পুতিন। আগামী বছর রাশিয়ার মোট খরচের এক-তৃতীয়াংশ মানে ১০৯ বিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষায় খাতে খরচ করা হবে, অলরেডি ঠিক হয়ে গেছে।

আরও বড় কথা হলো, রাশিয়ার জিডিপির ৬ শতাংশ যুদ্ধের পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা একটা যুদ্ধের পেছনে প্রোটিন এত এত টাকা ইনভেস্ট করছেন অথচ, রাশিয়ার পরিস্থিতি কিন্তু ভালো নয়। রাশিয়ার মানুষ চাপের মুখে পড়েছেন। মাখন, মাংস এমনকি রুটির দাম বেড়ে গেছে। এ ছাড়া রাশিয়া বিপুল পরিমাণে পণ্য আমদানি করে। টেলিফোন থেকে শুরু করে ওয়াশিং মেশিন, গাড়ি, ওষুধ, কফি—এমন আরও অনেক কিছু আমদানি করতে হয়, কিন্তু রুবলের দরপতনের কারণে ক্রেতারা সমস্যায় পড়ছেন। পণ্য আমদানি করতে বা নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে ডলার সহ বিদেশি মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে। এই কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবেলের মান ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়, অর্থাৎ তাৎপর্যপূর্ণভাবে ডলারের বিপরীতে রুবেলের মান ১০০ ছাড়িয়ে যায়। যেটা রাশিয়াকে আরো বিপদে ফেলে দিয়েছে।

তাছাড়া, সরকারি ব্যয় ও ঋণ বৃদ্ধির কারণে চাপের মুখে থাকা অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দ্রুততার সঙ্গে নীতি সুদহার ১৩ শতাংশে উন্নীত করেছে। মূল্যস্ফীতির রাশ টানতেই এই উদ্যোগ। নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা দেশটার মানুষের পক্ষে ঋণ নেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে, আর তাতে প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি জটিল থেকে আরও জটিল হবে। এদিকে আগামী মার্চে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভ্লাদিমির পুতিন স্বীকার করে নিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ও দুর্বল রুবল টেনশন বাড়াচ্ছে। খরচের রাশ টানতে সরকারের পক্ষে হয়তো নির্বাচনের আগে সামাজিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা সম্ভব না-ও হতে পারে।

মানে, একটা বিষয় পরিষ্কার রাশিয়ার মানুষগুলো চাপের মুখে পড়ে গেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার বাজেটের বড় একটি অংশ যুদ্ধ খাতে চলে যাচ্ছে। বাজেট থেকে অতিরিক্ত ৯.২ শতাংশ জাতীয় নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। যুদ্ধে যাঁরা আহত বা নিহত হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণে বড় একটি অঙ্ক ব্যয় করতে হচ্ছে। আবার নতুন অধিকৃত অঞ্চলগুলোর পেছনেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে রাশিয়াকে মোটকথা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া উজাড় করে দিচ্ছে। একটা কথা মনে করিয়ে দিই, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়ার একটি স্লোগান আছে, “সবকিছু যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য”। যুদ্ধের জন্য রাশিয়া সব করতে পারে। সব দিতে পারে। সম্প্রতি রুশ সরকারের ব্যয় পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী কিন্তু সেই স্লোগানেরই রিপিটেশন করেছেন। বুঝতে পারছেন তো তাহলে যুদ্ধ জিততে পুতিন কতদূর যেতে পারেন। কিন্তু, এটাও ঠিক বর্তমানে রাশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতটা খারাপ মনে হচ্ছে আসলে ততটাও কিন্তু নয় বলা যায় মিশ্র প্রকৃতির।

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সময় পশ্চিমা দেশগুলো যেমন ভেবেছিল, রাশিয়ার অর্থনীতি বাস্তবে অতটাও কিন্তু ভেঙে পড়েনি; বরং মস্কো ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে এখনো ভালোভাবে টিকে আছে। পশ্চিমারা রাশিয়ার তেল না কিনলেও তেল কেনার খদ্দেরের অভাব হয়নি দেশটি আর ফলে দেশটির পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অর্থায়ন করা সম্ভব হয়েছে-হচ্ছে। দেশটির প্রায় সব শ্রমিকের হাতে এখন কাজ আছে, তাঁদের সাপ্তাহিক মজুরি বেড়েছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর দেশটার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২.৫ শতাংশ, অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রবৃদ্ধির হারের দিক থেকে ছাড়িয়ে যাবে রাশিয়া। তবে পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা কিরকম হবে সেটা এখন থেকেই আন্দাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সাথে সাথে পুরো চিত্রটা আরো বেশি পরিষ্কার হবে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version