।। প্রথম কলকাতা ।।
Pakistan: পাকিস্তানের রাজনীতিতে কি শেষের শুরুর ইঙ্গিত? যখন অর্থনৈতিক দুরবস্থা ছাপিয়ে, রাজনৈতিক সংঘাত মুখ্য হয়ে উঠেছে, একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। তখন একটাই প্রশ্ন বারবার শিরোনামে উঠে আসছে, কোন দিকে মোড় নিচ্ছে পাকিস্থানের রাজনীতি? কি ঘটতে চলেছে? একসময় যে সেনার “প্রিয়ভাজন” ছিলেন ইমরান খান, এখন সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গেই জোর টক্কর চলছে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর। এরই মাঝে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন ইমরান খান। কিন্তু সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ করতে গিয়ে এটা কি বলে ফেললেন ইমরান? বলেছেন, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান, যা এখন বাংলাদেশ তাঁদের জনগণের ওপর কি অত্যাচার চালানো হয়েছিল তা এখন তাঁরা আন্দাজ করতে পারেন। কিন্তু সেনাবাহিনীদের কাঠগড়ায় তুলতে গিয়ে যে আত্ম সমালোচনা করলেন ইমরান, তা কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? পাকিস্তানের রাজনীতিতে কি বিরাট কোনো রদবদল ঘটতে চলেছে? ক্ষমতায় না থেকেও সেনাবাহিনী যেভাবে পুরোপুরি ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছে, এবার সেই ট্রেন্ডের বদল ঘটবে?
প্রধানমন্ত্রী পরিচালিত পাকিস্তান আসলে সেনাবাহিনী পরিচালিত, তাই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের ভালো সম্পর্ক থাকাটা আবশ্যক নয়, অত্যাবশ্যক। শুরুটা হয়ে গিয়েছে অনেক আগে থেকেই। ১৯৪৭ সালে জন্মের পর থেকেই পাকিস্থানের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী ঢুকে পড়েছিল। সেনা শাসন পাকিস্তানে নতুন নয়। ইতিহাস বলছে, সামরিক বাহিনী দেশটাতে বরাবরই ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেছে। অতীতে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার পূর্ণ মেয়াদে পাকিস্থানের ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। নিরাপত্তা ইস্যুতে সেনাবাহিনীকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে সরকারের খুব কাছাকাছি থেকে, সেনাবাহিনী প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জন্ম থেকে অর্ধেকের বেশি সময় পাকিস্থান মিলিটারি দ্বারা শাসিত হয়েছে। বলা হয়, পাকিস্থানে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক, আর প্রধানমন্ত্রী হলেন দ্বিতীয় প্রধান ক্ষমতাধর। এমনকি, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি আর প্রতিরক্ষানীতি ঠিক হয় সেনা সদর দফতরে, সেখানেও বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর কোন এখতিয়ারই নেই। এগুলো থেকে একটা চিত্র ভীষণভাবে পরিষ্কার যে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর জায়গা ঠিক কোথায়।বুঝতে হবে, এটাই পাকিস্তানের ট্রেন্ড।
কিন্তু এই চেনা সমীকরণটা বদলে যেতে শুরু করেছে। সাজানো ছক ভাঙতে শুরু করেছে। আর এতেই যত বিপত্তি। শুরুটা প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাত ধরেই। আর যার হাত ধরে এই ছক ভাঙ্গার খেলা শুরু হয়েছে, সেই ইমরান খান আপাতত সেনাবাহিনীর চক্ষুশুল। একসময় সেনার সাহায্যেই পাকিস্থানের ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। ব্যাস, দূরত্ব সৃষ্টি হয় ইমরান আর সামরিক বাহিনীর মধ্যে। এরপর পাকিস্থান মুসলিম লিগের শেহবাজ শরীফ ক্ষমতায় এলে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নামে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তার দল পিটিআই। ইমরানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্থান সামরিক বাহিনীর পরোক্ষ অসহযোগিতার কারণেই ক্ষমতায় টিকতে পারেননি তিনি। সেনাবাহিনীর ছত্র ছায়ায় থেকে সমালোচিত ইমরান নিজেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২০২২ সালের ২১ অক্টোবর দুর্নীতির অভিযোগে ইমরানের ওপর পাকিস্থানের নির্বাচন কমিশন ৫ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যে কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ইমরান। খারিজ করা হয় তার সংসদ সদস্য পদও। এরপর থেকেই পাকিস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। শক্তিশালী জনসমর্থন পেতে থাকে ইমরানের দল পিটিআই। সংবিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষের দিকে পাকিস্থানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, এমনকি এই ১৪ মে পাঞ্জাব প্রাদেশিক পার্লামেন্টের নির্বাচন এর নির্দেশ দিয়ে রেখেছিল সুপ্রিমকোর্ট। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার আর্থিক দুরবস্থার অজুহাত দেখিয়ে তা স্থগিত করে রেখেছে। অথচ, পিটি আই প্রধান ইমরান খান অবিলম্বে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন আর তারই রেশ চলছে পাকিস্তানে। অর্থনৈতিক সংকটকে পেছনে ফেলে রাজনৈতিক সংঘাত যেভাবে পাকিস্তানে এই মুহূর্তে মুখ্য হয়ে উঠেছে, তাতে যেভাবে গোটা পাকিস্তান তছনছ হচ্ছে জ্বলছে, পুড়ছে। আসলে, ইমরান খানের পতনের পর পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন করে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় শুরু হয়েছে। তাঁর বিদায়ের নেপথ্য কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে দেশটার সেনাবাহিনীকে। প্লাস পয়েন্ট হলো জনসমর্থন পেয়েছেন ইমরান খান। আর সেটাকেই এনক্যাশ করে ইমরান পরপর ছক্কা হাকাচ্ছেন। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে গ্রেফতার, ন্যাবের হেফাজতে রাত কাটানো, তাঁকে বিষ ইঞ্জেকশন পুশ করে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ, এই সব কিছুই যেন ইমরানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে গুড ইমেজ তৈরি করছে। বারে বারে প্রশ্ন উঠেছে গ্রেফতারি কি ইমরানের জন্য শাপে বর হলো? প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের কাম ব্যাক করার চান্স বাড়লো? আরো বেশি বাড়লো কি ইমরান খানের জনপ্রিয়তা?
অন্তত বিশ্লেষকরা তো তাই বলছেন, তাঁরা বলছেন এভাবে আরও হাইপ পাচ্ছেন ইমরান খান আর এটা কখন ঘটছে পাকিস্তানে? একদিকে যখন চরম আর্থিক সংকটের কারনে ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে, যখন পাকিস্তানের মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে পারছে না তখন কিনা ইমরান খান আন্দোলন করে নির্বাচনের পথে হাঁটতে চাইছেন, বদল ঘটাতে চাইছেন। এরমধ্যেই ইমরানকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা। পাকিস্তানকে কোন দিকে ঠেলে দিচ্ছে? পাকিস্থানের এমন নড়বড়ে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবথেকে বড় প্রশ্ন কে বা কারা গঠন করবে পরবর্তী সরকার? এবার কি পাকিস্তানে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে সেনাবাহিনীর সরে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে? কোন গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে পাকিস্থানের রাজনীতি? আপাতদৃষ্টিতে জটিল সমীকরণ হলেও, এটাই পাকিস্তানের রাজনীতির শেষের শুরু কিনা তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম