ভারত যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও গভীর! মোদির রাষ্ট্রীয় সফর কীসের ইঙ্গিত?

।। প্রথম কলকাতা ।।

যখন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান সবদিক থেকে বিঔপদে, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে, পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন গতি পাচ্ছে। প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
সারবেন একান্ত বৈঠক। কিন্তু এই বৈঠকের নেপথ্যে লুকিয়ে কোন কারণ? নরেন্দ্র মোদীর এই সফরে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে? শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পরপর এতগুলো দেশে মোদির সফর! কীসের ইঙ্গিত? কি মত বিশেষজ্ঞদের? জানা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর ঠিক এই সময়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মোদিকে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণের বিষয়টাই কূটনৈতিক মহলকে রীতিমতো ভাবাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসন্ন সফর যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে। সময় ও পরিস্থিতির বিবেচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই রাষ্ট্রীয় সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বুঝতে হবে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিরাট বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ভারত। যে চ্যালেঞ্জে পশ্চিমা বিশ্ব বা রাশিয়া, পক্ষপাতিত্ব করছে না ভারত। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে। ব্যালেন্সের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। একূল ওকূল দুকূলই বজায় রাখছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্থানে যখন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে টানটান উত্তেজনা চলছে, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হচ্ছে, তখন ভারত সব দিক থেকে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। সে দিক থেকে ভাবতে গেলে অবশ্যই সময় এবং‌ পরিস্থিতি দুটোই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু, কি জানা যাচ্ছে এই সফর সম্পর্কে? কেন এই রাষ্ট্রীয় সফর? দুই দেশেরই কিন্তু বেশ বড় প্ল্যানিং রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করে, করছে। আর এই সফ‌রে পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রে দু পক্ষের সহযোগিতার সুযোগ নিয়েই পর্যালোচনা করবেন দুই নেতা। এই সফর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত প্রযুক্তি অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে যৌথ অঙ্গীকারকে আরও শক্তিশালী করবে। না এখানেই শেষ নয়। প্রযুক্তি, বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা, গবেষণা, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, মহাকাশ ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে এই সফর।

জি-২০ সহ বহুপক্ষীয় বিভিন্ন ফোরামে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা জোরদার করার উপায় নিয়েও হবে আলোচনা। একটা মুক্ত, উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে নিজেদের মত বিনিময় করবেন তাঁরা। কিন্তু এই রাষ্ট্রীয় সফর কি? কি হয় এই শহরে? রাষ্ট্রীয় সফর বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি, সর্বোচ্চ প্রকাশ। যুক্তরাষ্ট্রে এই সফরগুলো রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় পরিপূর্ণ থাকে। যেমন ‘ফ্লাইট লাইন’ অনুষ্ঠান, যেখানে সফররত রাষ্ট্রপ্রধানকে বিমানবন্দরে অবতরণের পরই অভ্যর্থনা জানানো হয়, হোয়াইট হাউসের তরফে হয় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান। থাকে নৈশভোজের বন্দোবস্ত, কূটনৈতিক উপহার বিনিময়, ব্লেয়ার হাউসে সময় কাটানোর আমন্ত্রণ ও ‘ফ্লাগ স্ট্রিট লাইনিং’।

এই ক্ষেত্রে কি কি হবে?

সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, করবেন একান্ত বৈঠক। তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ফার্স্টলেডি জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে ২২ জুন একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেবেন মোদী। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন মোদি। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হলেও, সেগুলো কিন্তু কোনোটাই রাষ্ট্রীয় সফর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত ৯ বছরের মধ্যে এটাই যুক্তরাষ্ট্রে মোদির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। এর আগে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জো বাইডেন এখনও পর্যন্ত দুজন রাষ্ট্রপ্রধানকে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, একজন গত বছরের শেষ দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, দ্বিতীয়জন চলতি বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে।
এরপর তৃতীয় কোনো নেতা হিসেবে মোদিকে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানালেন তিনি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় চলতি মাসেই অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও পাপুয়া নিউগিনি সফর করবেন মোদি, এরপর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। আগামী ১৯ মে থেকে তার এই সফর শুরু হবে, শেষ হবে ২৪ জুন ৩৭ দিনের এই সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদির অন্তত চারবার বৈঠক হবে বলে মনে করা হচ্ছে
কিভাবে? চলতি মাসের ১৯ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত জাপানের হিরোশিমা শহরে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। এরপর পাপুয়া নিউগিনিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন, তারপর অস্ট্রেলিয়ায় কোয়াড নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন। এসব সম্মেলনের প্রত্যেকটাতেই মোদির পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন বাইডেনও। পর্যায়ক্রমে তিন দেশের সফর শেষে মোদি যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২১ জুন থেকে ২৪ জুন, চারদিনব্যাপী এই সফর অনুষ্ঠিত হবে। তাই আপাতত, পড়শি ও শত্রুদেশগুলোর নজর মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের দিকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version