সাগরের তলায় ভারত-শ্রীলঙ্কা কানেকশন! এক যুগের চমক ফেরি সার্ভিসেই

।। প্রথম কলকাতা ।।

সাগরের গভীরে ভারত শ্রীলঙ্কার জবরদস্ত কানেকশন। মাত্র ১ ঘন্টাতেই ভারত টু শ্রীলঙ্কা? রহস্যের আধার এই রুট। ১২ বছরের চমক, চেরিয়াপানি জুড়ে দিল দুদেশকে। শ্রীলঙ্কার উপর থেকে চীনের কালো ছায়া সরছে? ফেরি সার্ভিসে লুকিয়ে কোন ফর্মুলা? মোদী ম্যাজিকে ভারতের আরও কাছে এই দ্বীপদেশ। জলপথেই হবে ধামাকা। ভারত-শ্রীলঙ্কার মধ্যে ফেরি সার্ভিস শুরু। সমুদ্রপথে তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনম থেকে ফেরি পৌঁছাবে শ্রীলঙ্কার জাফনায়। সময় লাগবে মাত্র ৩ ঘন্টা। ফেরিতে উঠতে পারবে সর্বোচ্চ ১৫০ জন যাত্রী। ৪০ কেজি পর্যন্ত মালবহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোনও টাকা গুনতে হবে না যাত্রীদের। এতে বড় বেনিফিট হবে ভারত সহ দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কার।

নতুন এই ফেরি সার্ভিস দুই দেশের উপকূলীয় এলাকায় পর্যটন ও বাণিজ্য জোয়ার আনবে। দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। একইসঙ্গেই এই ফেরি সার্ভিস ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মোড হিসেবে বড় ভূমিকা পালন করবে। দুই দেশের প্রসিদ্ধ তীর্থক্ষেত্রগুলোর জন্য পুণ্যার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এই জলপথ। ট্যুর অপারেটররা লাভের মুখ দেখবে। ‘চেরিয়াপানি’ নামের এই ফেরি প্রতি দিন যাতায়াত করবে দুই দেশের মধ্যে। খুব অল্প খরচেই প্রতিবেশী দেশ দু’টোতে পাড়ি দিতে পারবে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মানুষ। এই ফেরি সার্ভিস এর দায়িত্বে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া’। ভারত কথা রাখে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ২ দিনের সফরে ভারত এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। সেই সময়ই ফেরি সার্ভিস বাস্তবায়ন নিয়ে কথা হয়ে গেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। আর এবার সেই আলোচনায় পড়লো শিলমোহর। ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক আরও জোরদার হলো। শুরু হলো নতুন করে।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও সমুদ্রপথে নিত্য যোগাযোগ ছিল ভারত শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ১৯৮২ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে জলপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পর ২০১১ সালে ফের ফেরি পরিষেবা চালুর জন্য মউ স্বাক্ষর করে দুই দেশ। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর অবশেষে ১২ বছর পর চালু বহু প্রতীক্ষিত সেই ফেরি পরিষেবা। এই জলপথে ব্যবহার করে বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটকেরাও সহজেই এই দ্বীপরাষ্ট্রে যেতে পারবেন। কিন্তু, ভারত শ্রীলঙ্কার মধ্যে জলপথে সম্পর্ক জোরদারের ফলে চীন কতটা এফেক্টেড হবে? বড় প্রশ্ন। একসময় চীন-শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক ওই সময় বেশ জোড়ালো হয়েছিল। পূর্বতন দুই শাসক মাহিন্দা এবং গোতাবায়া রাজাপক্ষের আমলে চিন-শ্রীলঙ্কা বোঝাপড়া ‘উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি’ পেয়েছিল বলে মনে করেন অনেকেই। আর প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের শাসনে? সমীকরণ বদলাচ্ছে? শ্রীলঙ্কা তার অবস্থান বদলাচ্ছে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জোর জল্পনা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। তাহলে, ভারত কি ম্যাজিক জানে?

আসলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার ভাঁড়ারও প্রায় শূন্য। চীনের ঋণের জালেই দ্বীপরাষ্ট্রটি অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন সে দেশের মানুষই। তাই শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব নিয়ে বহু বার ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষকে। এখানেই চীনের চাল ফেল করে গেছে? ভারত সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে। শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক ভাবে দুঃস্থ হয়ে যাওয়ার পর সে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। ফলে শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের সম্পর্ক এখন অনেকটাই পোক্ত বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। সম্পর্কের সাময়িক শীতলতা কাটিয়ে উষ্ণ হয়েছে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক। যে সম্পর্ক গোটা শ্রীলঙ্কার উপর চীনের প্রভাব কমাতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে বলাই বাহুল্য, তাতে এক্সট্রা অক্সিজেন জোগাবে এই ফেরি সার্ভিস।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version