India-China Relationship: ভারত চীনের অন্নদাতা, যুদ্ধ বাঁধলে ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি! দুই দেশ একে অপরকে সমঝে চলে কেন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

India-China Relationship: ভারত(India) চীনের(China) অন্নদাতা! যুদ্ধ বাঁধলে খাদ্য সংকটে পড়বে চীন! দুই দেশের মধ্যে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও এখনো যুদ্ধ বাঁধেনি, কারণটা কি? দুই দেশ যেন একে অপরকে একটু সমঝে চলে। রপ্তানি আর আমদানির দিক থেকে ভারত চীন একে অপরের উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধ বাঁধলে ফ্যাসাদে পড়বে দুই দেশই। ভারত চীনে এমন এক জিনিস পাঠায় যার জন্য চীনের মুখে কুলুপ আঁটা। সীমান্তে বারংবার উত্তেজনার পারদ ছড়ালেও ভারত কখনোই যুদ্ধ(War) চায় না, তবে ভারতের পেছনে লাগলে চীনকে ছেড়ে কথা বলবে না।

সীমান্তে যতই সংঘর্ষ হোক না কেন চীনের অন্নদাতা ভারত! সমীক্ষা জানলে আপনি একটু চমকে যাবেন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারত নাকি চীনে বেশি পরিমাণে চাল রপ্তানি করে। গত দু বছরে এই দুই দেশের সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় বারংবার যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিক্ততার পরেও কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখনো অটুট। ড্রাগনের দেশের জন্য ভারত এখনো অন্নদাতার ভূমিকা পালন করছে। পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারী কালীন চীন শুধুমাত্র ভারত থেকে চাল আমদানি করেছেন প্রায় ১৬.৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত গোটা বিশ্বে মোট চাল রপ্তানি করেছিল ২১২.১০ লাখ মেট্রিক টন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র চীনে রপ্তানি করা হয়েছে ৭.৭ শতাংশ। চীনে যে পরিমাণ চাল রপ্তানি করা হয়েছে তার মধ্যে ১৫.৭৬ লাখ মেট্রিক টন শুধুমাত্র ভাঙাচাল।

যাকে পাতি কথায় খুদ বলা হয়। চীন সবথেকে বেশি পরিমাণে এই ভাঙা চাল কেনে ভারত থেকে। মূলত চীন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, মায়ানমারের থেকে চাল কিনত। চীনের চাহিদা অনুযায়ী অত পরিমাণে বাড়তি চাল এই দেশগুলির ভাঁড়ারে নেই। তার উপর চালের দরের কাছে চীন পেরে উঠছিল না। উপরন্তু টন প্রতি প্রায় ৩০ ডলার কমে ভারত থেকে চাল কেনার সুযোগ রয়েছে। তাই চীন আপাতত চালের জন্য ভরসা করে ভারতের উপর। গোটা বিশ্বজুড়ে যে চাল ব্যবসা হয় তার ৪০ শতাংশ হয় ভারতে, আর গোটা বিশ্বে যত পরিমাণ ভাঙা চাল রপ্তানি করা হয় তার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রপ্তানি করে ভারত একাই। চীন ছাড়াও প্রায় ১৫০ টিরও বেশি দেশে ভারত চাল রপ্তানি করে থাকে।

চালের পাশাপাশি ভারত চীনে রপ্তানি করে খনিজ জ্বালানি, তেল, পরিশোধিত তামা, তামার মিশ্রণ, তুলোর সুতো যেখানে প্রায় ৮৫ শতাংশ তুলো থাকে, আনকারডেড এবং আনকম্বড তুলো, পেট্রোলিয়াম তেল , বিল্ডিং তৈরির পাথর যেমন গ্রানাইট, বেলে পাথর, ব্যাসল্ট পোরফিরি প্রভৃতি, লোহা আকরিক, রোস্টেড আয়রন পাইরাইট , উদ্ভিজ্জ চর্বি এবং তেল যেমন জোজোবা তেল, কৃত্রিম কোরান্ডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং হাইড্রোক্সাইড , সাইক্লোনিক এবং সাইক্লোটারপেনিকের সাথে সাইক্লিক অ্যালকোহল, উইগের জন্য টেক্সটাইল উপকরণ যেমন মানুষের চুল, উল এবং পশুর লোম, বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য, সামুদ্রিক খাবার প্রভৃতি।

অপরদিকে ভারতের সঙ্গে চীনের রাজনৈতিকভাবে সেভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নেই কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি কিন্তু চীনের। যেখানে ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে একসময় চীনের জায়গা ছিল। যদিও এখন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে হটিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির জায়গা করে নিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চীনে ভারতের রপ্তানি বাড়লেও সেই প্রবৃদ্ধিকে অনেক গুন ছাপিয়ে যায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য। ভারতে চীনা পণ্যের বয়কটের শোরগোল পড়লেও সম্পূর্ণভাবে বয়কট করা অসম্ভব। কারণ সেক্ষেত্রে মাত্র ৩০ শতাংশ আমদানি পণ্যের বিকল্প রয়েছে। ভারত সরকার এখন আত্মনির্ভরের উপর বেশি জোর দিয়েছে। চীনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা কাটাতে এখন দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। যদিও ভারত ইতিমধ্যেই চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ৩২৭টি পণ্যের বিকল্প খুঁজে বার করেছে। দ্যা কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স ২০২০ সালের চীন থেকে ভারতে আমদানি করা পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করে, যেখানে প্রায় তিন হাজারটির মতো পণ্য ছিল।

সেই তালিকায় রয়েছে রান্নাঘরের জিনিস, লাগেজ, হ্যান্ডব্যাগ, গার্মেন্টস, খেলনা, টেক্সটাইল, গিফট, কসমেটিক্স, ঘড়ি, রত্ন, গয়না, হেলথ প্রোডাক্ট, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র, মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ, ফার্নিশিং ফেব্রিক, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, পেনিসিলিন, সোলার প্যানেল, টেলিকম যন্ত্রাংশ, মোবাইল ,ক্যামেরা, প্রভৃতি। আবার এমন কিছু পণ্য রয়েছে যা একমাত্র চীন রপ্তানি করে থাকে। ভারতীয় মোবাইল বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ দখল করে রয়েছে ভিভো, ওপোর মতো কোম্পানি। যদি দুই দেশের যুদ্ধ বাঁধে তাহলে দুই দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আমদানি রপ্তানির দিকে থেকে দুই দেশ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ভারত থেকে চীনে সম্পূর্ণভাবে ভাঙা চাল রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে চীনের কোষাগারে টান পড়তে পারে। কারণ চীনের চাহিদা মেটানো অন্যান্য দেশের পক্ষে যেমন সম্ভব নয় তেমন দামেও পেরে উঠবে না চীন। ভাঙা চাল দিয়ে চীনে পশু খাদ্য, ওয়াইন এবং নুডুলস বানানো হয়। চীনের সবথেকে জনপ্রিয় অন্যতম খাবার হল নুডুলস। যুদ্ধ বাঁধলে চীন যে খাদ্য সংকটে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অপরদিকে ভারতে চীন থেকে আমদানি করা হয় চিকিৎসার বিভিন্ন উপকরণ, কাঁচামাল এবং ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version