।। প্রথম কলকাতা ।।
ডলার সংকটে একে অপরের পাশে দাঁড়াল ভারত বাংলাদেশ। রুপিতে বাণিজ্যের উদ্বোধন হল দুই দেশের মধ্যে। বহু আলাপ আলোচনার পর সাকসেস পেল পরিকল্পনা। কিন্তু খচ খচ করছে একটা প্রশ্ন। আদৌ কি এই পদক্ষেপ দুই দেশের জন্য লাভবান? ডলারের চাপ কমাতে গিয়ে অন্য কোন বিপদে পড়বে না তো? কী মনে করছে বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা?
মঙ্গলবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এইচ.ই. মোঃ শাহরিয়ার আলম গুলশানে ইস্টার ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে ইবিএল-ইন্ডিয়া বিজনেস ডেস্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই দেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে সহায়তা করবে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে উন্নীত করবে। এই উদ্যোগ বৈদেশিক মুদ্রার নিট চাহিদা কমাতে পারে, USD, চলতি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত বাণিজ্য প্রবাহের নিষ্পত্তির জন্য এবং ব্যবসা করার খরচও কমিয়ে দেবে। এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাঙ্ক, ইস্টার্ন ব্যাংক, অপরদিকে ভারতের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আর আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।
ডলারের পরিবর্তে রুপিতে বাণিজ্য হলে কে বেশি লাভবান হবে, এই নিয়ে এখন তুমুল বিতর্ক। বাংলাদেশের বহু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এখনো পর্যন্ত রুপি বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। যদি ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর বারংবার ওঠানামা করে তাহলে প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের লেনদেনে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারের পণ্য, আর রপ্তানি করেছে মাত্র ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি রপ্তানির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। প্রশ্নটা এখানেই। আমদানির এই এত পরিমাণ রুপি বাংলাদেশ কোথায় পাবে? আরেকটা জিনিস নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মন খচখচ করছে। গত দেড় বছর ধরে যেভাবে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার দর পতন ঘটছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বিনিময় হার নির্ধারিত না থাকলে মুশকিল।
যদিও এটি আশঙ্কা মাত্র। কারণ বাংলাদেশ রুপি এবং টাকা উভয়ের মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিল। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করে। এই লেনদেন প্রক্রিয়ার প্রথম দিকে অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হলেও, ধীরে ধীরে তা বাড়বে এবং এক পর্যায়ে টাকায়ও লেনদেন চালু করা হবে। এতদিন বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারতকে বাংলাদেশ যে পরিমাণে ডলার দিত সেটা আর দিতে হবে না। উপরন্তু প্রতি ডলারে সাশ্রয় হবে এক টাকা। হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বাঁচবে ২০০ কোটি ডলার। সেটাই বা কম কিসের। এছাড়াও অন্য উদ্বৃত্ত মুদ্রা রুপিতে রূপান্তর করে সহজে লেনদেন করা যাবে।
এর ফলে দুই দেশের মধ্যে মার্কিন ডলারের চাপ কমবে। একটু হলেও স্বস্তি মিলবে রিজার্ভে। হিসাব বলছে, মাত্র এক বছর আগে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪১.৮ বিলিয়ন ডলার, যা এই বছরের জুলাই মাসে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৯.৯৭ বিলিয়ন ডলার। এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে রুপির ব্যবহার আন্তঃসীমান্ত সীমান্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক হতে চলেছে। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বিশেষ পে কার্ড চালু হবে। যার দুর্দান্ত সুযোগ পাবে বাংলাদেশের মানুষ। টাকা সংযুক্ত হবে ভারতের রুপির সঙ্গে। এই কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষরা ভারতে ভ্রমণ কোটায় খরচ করতে পারবেন ১২ হাজার ডলারের সমপরিমাণ রুপি। এখানে মানি চেঞ্জ লসের পরিমাণটাও কম। খরচ কমবে প্রায় ৬%। অপরদিকে, আন্তর্জাতিক ময়দানে আরও পোক্ত হচ্ছে ভারতীয় মুদ্রা। এর আগেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারত রুপিতে বাণিজ্য শুরু করেছিল। এবার সেই তালিকায় নতুন করে সংযোজন হচ্ছে বাংলাদেশ আর আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া। যদি এভাবেই বিশ্বের অন্যান্য দেশ নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করে, তাহলে ডলার সংকটের আর ভয় থাকবে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম