বাংলায় কিভাবে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো ? রয়েছে গায়ে কাঁটা দেওয়া কাহিনী

।। প্রথম কলকাতা ।।

কালীপুজো শেষ, এবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় মেতে ওঠার পালা। জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা বললেই চোখের সামনে ভাসে চন্দননগরের কথা। শীতের পরশ মেখে এবার পুজো দেখতে যাবেন নাকি গঙ্গাপাড়ের এই শহরে? আপনি তো জানেনই, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই বিশাল বিশাল মন্ডপ চোখ জুড়োনো আলোকসজ্জা। মন্ডপ আলো করে থাকে ডাকের সাজের প্রতিমা। আপনি বলবেন, ঐতিহ্যে সাবেকিয়ানায় জগদ্ধাত্রীপুজোকে ঘিরে চন্দননগর যে খ্যাতি অর্জন করেছে, বাংলার আর কোনও অঞ্চল তা পারেনি। ঠিক তাই। ইতিহাস তার সাক্ষী। এই বাংলার কোথায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয় জানেন কি? চন্দননগরেই বা জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হল কী ভাবে? চলুন তা জেনে নেওয়া যায়।

জগদ্ধাত্রীপুজো মানেই গোটা বাংলা চন্দননগরমুখী। দিন দিন তার জৌলুস বেড়েই চলেছে। এই সময় এলে আরও একবার দুর্গাপুজোর স্বাদ পায় বাঙালি। ঘুরে ঘুরে আলো, মন্ডপ, প্রতিমা দেখার মজাই আলাদা। কিন্তু কিভাবে শুরু হল এই পুজো? জানেন সেই কাহিনী? দীর্ঘদিন ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল চন্দননগরে। তৎকালীন ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তিনি ছিলেন নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে ১২ লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন।নজরানা দিতে অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দি করেন।কারাবন্দি থাকার কারণে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিজয়া দশমীর দিনে নৌকায় ফেরার পথে তিনি সিংহবাহনী এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় কার্তিক শুক্লা নবমীর সময় জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোর আয়োজন করার জন্য। সেই মতো চন্দননগরের গঙ্গাপাড়ের নিচু পট্টি চাউল পট্টি এলাকায় নৌকা থামিয়ে এই পুজোর আয়োজন করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী দু’জন মিলে।

চাল পট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসেন পুজোর জন্য। শুরু হয় প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর। শোনা যায় পরের বছর থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবী প্রতিমার আরাধনা শুরু করেন নিজের রাজ বাড়িতেও। আবার অনেকে বলেন, চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন হয় ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে ইন্দ্রনারায়ণ চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন।যদিও এ কাহিনি নিয়ে মতান্তর আছে। কারণ, ইন্দ্রনারায়ণের মৃত্যু হয়েছিল ১৭৫৬ সালে। তাই ১৭৫৬ সালে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন আদৌ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিমত আছে গবেষকদের মধ্যেই। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মতে, এই পুজোটি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৭১০ খৃষ্টাব্দে শুরু করেছিলেন। তিনি নাকি কোনও এক কারণে দুর্গা পুজোর সময়ে তৎকালীন নবাবের হাতে বন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন পরের মাসের অর্থাৎ কার্তিক শুক্লা নবমীতে এই পুজো করার জন্য। ছাড়া পেয়ে তিনি জগদ্ধাত্রী সঙ্গে সূচনা করেন। সময়কাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধরা হয় এই পুজো শুরু সর্বপ্রথম কৃষ্ণনগরে। এর পরে চন্দননগর বা অন্যান্য স্থানে জগদ্ধাত্রীপুজোর প্রচলন হয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version