Iron Dome: আয়রন ডোম ভেঙে দিলো হিজবুল্লা, যু’দ্ধ’বিরতি চুক্তি নয় কঠিন পরিণতি

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Iron Dome: আয়রন ডোমকে ফাঁকি , ইসরায়েল নাকি হিজবুল্লাহ? যুদ্ধে জিতবে কে? বেকার হয়ে গেল ইসরায়েলের প্রাণ ভোমরা আয়রন ডোম! ইসরায়েলের যুদ্ধ কৌশল চুরি করতে, ইসরায়েলের মধ্যেই হানা দিল হিজবুল্লাহ। যুদ্ধ বাঁধলে জিতবে কে? ইসরায়েল নাকি হিজবুল্লাহ? কে বেশি শক্তিশালী? যুদ্ধের পরিণতি শেষ পর্যন্ত গাজার মতো হবে না তো? শিক্ষা নিচ্ছে লেবানন। এবার হয়ত উল্টে মাত দিতে পারে ইসরায়েলকে। চোখে ধুলো দিতে হিজবুল্লাহ চলছে নতুন কৌশলে। মদদ দিচ্ছে ইরান। ইসরায়েলের অন্দরে ঢুকে পড়ল হিজবুল্লাহর ড্রোন, চুরি করল প্রচুর সিক্রেট। জানেন, ড্রোনের ক্যামেরায় ঠিক কী কী ধরা পড়েছে? ইসরায়েলকে মাত দিতে লেবাননের এ কোন ভয়ঙ্কর প্রস্তুতি?

 

•ইসরায়েলের গর্ব ভাঙল হিজবুল্লাহ, ড্রোন দিয়ে চালাচ্ছে নজরদারি

ইসরায়েলের আয়রন ডোম, যার কিনা বিশ্বজোড়া নাম। সেই আয়রন ডোমের চোখকে ফাঁকি দিচ্ছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে একগুচ্ছ শত্রু। তাই দেশটা প্রথম থেকেই, কঠোর আকাশ প্রতিরক্ষা সুরক্ষা প্রযুক্তি অর্থাৎ আয়রন ডোম দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছে। কিন্তু এভাবে আর কদিন? কারণ, যে ভাবে হিজবুল্লাহ উঠে পড়ে লেগেছে, আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের শক্তিশালী করছে, তাতে কিন্তু ইসরায়েলের সামনে বড় বিপদ। মনে করেছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের ভিতরে গোয়েন্দা ড্রোন পাঠিয়ে দিয়েছে লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, ড্রোনটি দিয়ে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের প্রায় সাড়ে ৯ মিনিট একটা ভিডিও করেছে। ভিডিওতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা ইসরায়েলের মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ। ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে তার ছবি এখন চলে এসেছে হিজবুল্লাহর কাছে। প্রশ্নটা তো এখানেই, যে আয়রন ডোম নিয়ে ইসরায়েলের এত গর্ব, সেই গর্ব কি তাহলে ভেঙে দেবে হিজবুল্লাহ্?

 

বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ যে রকেট মজুদ করছে, তা দিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিল তেল আবিব। যার জেরে উত্তপ্ত লেবানন আর ইসরায়েলের সীমান্ত। তখন থেকেই মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করার পরিকল্পনা করে ফেলে ইসরায়েল। ২০১১ সাল থেকে কাজ শুরু করে দেয় আয়রন ডোম। আর সেই আয়রন ডোমকেই এবার টক্কর দিতে চলেছে হিজবুল্লাহ। ইতিমধ্যেই উচ্চগতির, কম উড়ন্ত ড্রোন মোতায়েন করে ফেলেছে। গোয়েন্দা পাঠিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ড্রোন ধারণ করছে ইসয়েলেল স্থাপনা গুলোর ভিডিও। ফলতেইসরায়েলিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো স্বাভাবিক। কারণ যখন শত্রুপক্ষ দেশের মধ্যে ঢুকে গতিবিধির ওপর নজর রাখে, তার মানে বুঝতে হবে সেই শত্রুপক্ষ কম শক্তিশালী নয়। হিজবুল্লাহ যে আক্রমণের সমস্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা তো আগেই জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তুতি যে এতটা সূক্ষ্ম তা বোঝা যায়নি।

 

আয়রন ডোমকে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম সফল এবং শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এবার তাকেই মাত দিতে চলেছে হিজবুল্লাহ। সত্যি সত্যি যদি আয়রন ডোমের প্রযুক্তি হিজবুল্লাহর কাছে হেরে যায়, তাহলে কিন্তু চাপে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রও। কারণ রকেট আর আর্টিনারি হামলার বিরুদ্ধে ব্যাপক কার্যকর এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি তৈরি করেছে ইসরায়েলের রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেম আর ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ। যেখানে সহযোগিতা রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এত উন্নত একটা প্রযুক্তি কিনা হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা ড্রোনকে ধরতেই পারলো না। উল্টে সেই গোয়েন্দা ড্রোন ইসরায়েলের মধ্যে ঢুকে ভিডিও ধারণ করল। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হতবাক দেশটার নিরাপত্তা বিভাগ।

 

আর কেনই বা হবে না? ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর স্থানগুলোকে হিজবুল্লাহ চিহ্নিত করে ফেলেছে। প্রকাশিত ফুটেজে রয়েছে নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত ইসরায়েলের দিমোনা আণবিক চুল্লি, তেল আবিবের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, রামাত ডেভিড বিমান ঘাঁটি, লেবানন উপকূলের কারিশ গ্যাসক্ষেত্র এবং নেভাতিম বিমানঘাঁটি। এছাড়াও রয়েছে হাকিরিয়া কমপ্লেক্স। যেখানে ইসরায়েল সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এবং অনেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার বাড়ি রয়েছে।

 

•যুদ্ধে জিতবে কে? বিস্ফোরণের রূপ নিচ্ছে ছাই চাপা আগুন

কূটনৈতিক মহলের ধারণা, যদি লেবাননের ইরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে ইসরায়েলের পুরোদমে যুদ্ধ বেঁধে যায়, তখন কিন্তু নেতানিয়াহু ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। একই আশঙ্কা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা। ধারণা করা হচ্ছে, আয়রন ডোম সহ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ঠিক যতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তার থেকেও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন রয়েছে হিজবুল্লাহর কাছে। আর তাই হয়তো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলোর মাধ্যমে হিজবুল্লাহর হামলা পুরোপুরি ঠেকানো যাবে না। প্রশ্নটা উঠছে এখানেই। কারণ হিজবুল্লাহ শুধুমাত্র একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়, পিছন থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় দেশসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বড় সাপোর্ট রয়েছে। তাদের থেকে যদি গুচ্ছগুচ্ছ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ অস্ত্রের সাপোর্ট পায়, তা ইসরায়েলের সমকক্ষ হতে বেশি সময় লাগবে না। বলা হয়ে থাকে, হিজবুল্লাহ নাকি ইসলামিক জিহাদের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী। সুনির্দিষ্ট ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র সহ বহু অস্ত্র দিয়ে বছরের পর বছর এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সাহায্য করে আসছে ইরান। তাই কূটনৈতিক মহলের ধারণা, হিজবুল্লার কাছে বড়সড় অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। আর যেগুলো হামলা ঠেকাতে পারে একমাত্র আয়রন ডোম। কিন্তু এবার জিজ্ঞাসার মুখে সেই আয়রন ডোমও। এমনকি হামাসের থেকেও হিজবুল্লাহর হাতে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন রকেটের সংখ্যা বেশি। যার মধ্যে অধিকাংশটাই স্বল্প পাল্লার। যার কিছু কিছু ইসরায়েলের বেশ ভিতরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ইসরায়েলি বাহিনীর ধারণা, হিজবুল্লার কাছে আছে প্রায় দেড় লক্ষ ক্ষেপণাস্ত্র আর রকেট।

 

অপরদিকে মার্কিন সরকারের তথ্য বলছে, হিজবুল্লাহর কাছে আছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার যোদ্ধা। যদিও এই সশস্ত্র সংগঠনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর মতে, তাদের সংগঠনে যোদ্ধা সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি। রয়েছে বিশেষ বাহিনী রেদওয়ান ফোর্সের সদস্যরা। যাদের সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পক্ষে লড়াই করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই হিজবুল্লার জন্যই কিন্তু একটা সময় ইসরায়েল লেবানন থেকে পিছু হটার বাধ্য হয়েছিল। তাহলে কি, সেই দিন ফিরে আসতে চলেছে? আর তাই হয়ত, যুক্তরাষ্ট্রর কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যদি বড় আকারে সত্যি যুদ্ধ বেঁধে যায় তাহলে কিন্তু তা ধ্বংসাত্মক রূপ নিতে পারে। কারণ ওদিকে হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বহু আলাপ আলোচনা করেও কোন কাজ হয়নি। উল্টে ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে।

 

দেখুন, যদি গাজায় একটা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হত, তাহলে কিন্তু ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর মধ্যে হয়ত বা একটা কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে সমস্যাটার সমাধান হত। আর সেই চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন মার্কিন সরকারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিনিধি। কিন্তু সেখানেও যেন কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। হিজবুল্লাহ বহুদিন ধরেই বলছে, গাজায় যতদিন না অস্ত্র বিরতি হবে, ততদিন তারা ইসরায়েলের উপর হামলা চালিয়ে যাবে। তবে সেই ধিকে ধিকে আগুন যে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটবে এ তা কে জানতো।

 

•ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর পুরোনো শত্রুতা, চলছে পাল্টা হুমকি

২০০৬ সালেও এই দুই পক্ষ একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল। সেই সময় ইসরায়েলের ভিতরেও ঢুকে পড়েছিল হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। লেবাননের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর। শুধু তাই নয়, দেশটিতে সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে তাদের। গত শতকের আশির দশকে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে তৈরি করেছিল এই হিজবুল্লাহ। যাকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো সহ উপসাগরীয় আরব দেশ, আরব লীগ এবং ইসরায়েল। বহুদিন ধরেই লেবাননের সীমান্তে বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোয় ইসরায়েলের উপস্থিতির বিরোধিতা করছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের যুক্তি, তাদের মূল লক্ষ্য ইসরায়েলের উত্তরে থাকা লেবানন সীমান্ত থেকে হিজবুল্লাহকে পিছু হটানো। লেবানন সীমান্তে একটা নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করা। কারণ হিজবুল্লাহর হামলার কারণে উত্তর ইসরায়েল থেকে বহু বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছেন। ওই জায়গা নিরাপদ হলে তারা আবার পুনরায় সেই স্থানে ফিরে আসতে পারবেন।

 

কারণ ইসরায়েলিদের নিজেদের ঘর ফেরাতে চাপে রয়েছে ইসরায়েল সরকার। যদি পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে নাকি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। শোচনীয় পরাজয় ঘটবে লেবাননের। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ। তিনি লেবাননের বিরুদ্ধে নতুন কৌশল অবলম্বনে সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। আবার ওদিকে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর যুক্তি, যদি ইসরায়েল লেবাননের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তাহলে কিন্তু লেবানন কোন নিয়মের তোয়াক্কাই করবে না। যুদ্ধ বাঁধলে ইসরায়েলের কোন স্থানে আর নিরাপদ থাকবে না। শুধু তাই নয়, যদি সাইপ্রাস লেবাননে হামলার জন্য ইসরায়েলকে বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়, সেক্ষেত্রে ওই দেশটাকেও ছাড় দেবে না হিজবুল্লাহ। দুই পক্ষই কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী, ইসরায়েলের পাশে যেমন পশ্চিমারা রয়েছে, তেমনই হিজবুল্লাহর পাশে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ। তাই যুদ্ধ হলে তার পরিণাম খুব একটা ভালো হবে না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version