পাকিস্তানে হিন্দুরা রাজ করছে! এখানে মুসলিমরা মানায় দীপাবলি, আজব গ্রাম

।। প্রথম কলকাতা ।।

পাকিস্তানের মধ্যেই রয়েছে এক টুকরো ভারত। হিন্দু মুসলিমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকে পাকিস্তানের এই গ্রামে। দীপাবলি থেকে ঈদ পালন হয় আলাদাভাবেই জানলে অবাক হবেন! কেউ শান্তি ভঙ্গ করতে এলে এরা কী করে জানেন? হিন্দুদের গায়ে কেউ হাতও লাগাতে পারে না পাকিস্তানের এই গ্রামে। গোটা পাকিস্তানে মুসলিমরা যতটা নিরাপদ এই গ্রামে হিন্দুরাও ঠিক ততটাই।মন্দিরের ঘন্টার ধ্বনিতেই ঘুম ভাঙে সকলের।ভাবতে পারছেন পাকিস্তানের মতো একটা দেশ যেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর চরম অত্যাচারের খবর প্রায়দিনই শোনা যায় সেখানে এই গ্রামে হিন্দু মুসলিমরা একে অপরের ভাই ভাই। শুনলেই অবাক লাগে না! পাকিস্তানের বাণিজ্যিক শহর করাচি থেকে ২৭৫ কিলোমিটার পূর্বে এবং ভারতের রাজস্থান সীমান্ত ঘেষেই প্রায় মিঠি নামক একটি মরুগ্রাম রয়েছে এই গ্রামে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে কোনও বিদ্বেষ নেই।

তথ্য বলছে মিঠিতে প্রায় ৬০ হাজার হিন্দুরা বসবাস করেন। মুসলিমরা এই গ্রামের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০ ভাগ। মানে গোটা পাকিস্তানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হলেও এই গ্রামে সংখ্যাগুরু তবুও তারা মিলেমিশে একাকার। এখানে মসজিদ আর মন্দির এক সারিতে। মন্দিরের ঘণ্টা আর আজানের ধ্বনির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই কিন্তু এমনটা কীভাবে সম্ভব? পাকিস্তানের অশান্তির আঁচ কেন পৌঁছতে পারে না এই গ্রামে? সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাই বলছেন মিঠিতে হিন্দু মুসলিমদের সম্প্রীতি আজকের নয়, নাই নাই করে প্রায় ২০০ বছরের। এর মানে দেশভাগে কোনও প্রভাবই এদের মধ্যে পড়েনি। অনেকেই বলেন প্রভাব পড়েনি কারণ তারা পড়তে দেননি। তাদের ভালোবাসা ও একে অপরকে শ্রদ্ধার কাছে হার মানে বিদ্বেষ-ঘৃণা।এখানে ধর্মীয় উৎসবে একে অন্যকে মিষ্টি ও অন্যান্য উপহার দেয়া হয় তা সে দীপাবলি হোক বা ঈদই হোক না কেন।

স্থানীয় অধিবাসীরা বলেন ১৬ শতকের শুরুতে শান্তিকামী হিন্দু সম্প্রদায় এই গ্রাম গড়ে তোলে। মিঠির একটাই সমস্যা যে এখনকার মাটি উর্বর নয় সহজে জল ঢোকে না এই জমিতে ফলে চাষাবাদও কম হয়। এখানকার মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তারা শান্তিপ্রিয়। কম ইনকাম, গরিব তারা তবুও তাতেই খুশি। মিঠিতে ৩৬০টি মন্দির আছে যার মধ্যে ১২টি সচল। বাকি মন্দিরগুলোর জমি বেআইনি হওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না। আরেকটা অবাক করা তথ্য শুনবেন? মিঠি গ্রামে কোনো গরু বেঁধে রাখা হয় না। হিন্দু মুসলিম উভয়ই গরুর প্রতি যত্নবান। হিন্দুরা মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আসেন আর মুসলিমরা হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যায়। মহররমে তো উভয়ই চাঁদা দিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রমজান মাসে কেউ প্রকাশ্যে খায় না। হলির আয়োজনে মুসলিমরাও চাঁদা দেয়।

অবিশ্বাস্য লাগবে শুনতে মিঠিতে অপরাধের হার পাকিস্তানের যেকোনও জায়গার চেয়ে কম মাত্র ০.২%। এর মানে পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে কম অপরাধ হয় এই শহরে। এখানে ধর্মীয় অশান্তি হয়নি কোনও দিন। জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ঘটেনি কোনও দিন। চেষ্টা করে কোনও পাকিস্তানি মৌলবাদী সংগঠন মিঠিতে জাল বিছাতে পারেনি। হিন্দু মুসলিমরা যৌথভাবে সেই জাল কেটে দিয়েছেন। পাকিস্তানের কোল মাইনিং অথরিটি থর-পার্কার জেলার ৯৬০০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে ১২ ব্লকের কয়লা খনি আবিষ্কার করেছে। যার মধ্যে ৭৫০ বিলিয়ন টন কয়লা আছে বলে অনুমান করছে সরকার। চীন থেকে এক্সপার্ট আসছে পাকিস্তান সরকার বাড়াতে চায় মিঠি শহরের পরিধি তৈরী করতে চায় রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো। মিঠির বাসিন্দারা এককাট্টা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাঙতে পারে এমন কিছুই করা চলবে না। বাইরের লোকের এখানে থাকা চলবে না। দিনে দিনে আসুন, কাজ করুন, দিনে দিনেই শহরে ছাড়ুন। তাঁরাও চান এলাকার উন্নতি হোক কিন্তু উন্নয়নের নামে মিষ্টি মিঠিতে মৌলবাদের আমদানি চলবে না। পাকিস্তানের সাংবাদিকরাই বলেন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অস্থিরতা যতই বাড়ুক না কেন মিঠির শতবছরের ঐতিহ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি। এর একটাই কারণ, সেটা হলো তাদের ভাতৃত্ববোধ অত্যন্ত প্রবল।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version