রমরমিয়ে চুলের স্মাগলিং, আসছে কারি কারি সোনার মোহর, ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে ভয়ানক খেলা

।। প্রথম কলকাতা ।।

রমরমিয়ে চলছে চুলের স্মাগলিং। ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে ঠায় দাঁড়িয়ে লাইনম্যান? সুড়ঙ্গপথে মুঠো মুঠো সোনার মোহর পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ? গোছা গোছা চুল কিনছে ফেরিওয়ালা, তারপর আপনার অলক্ষ্যে চলছে কোন ভয়ানক খেলা? ভারত বাংলাদেশকে জড়িয়ে বড় চক্র। চুলের বদলে এতো এতো সোনা? কোথাকার জল কোথায় গড়াচ্ছে? তল খুঁজছে বিএসএফ, জাল বিছাচ্ছে দুঁদে গোয়েন্দারাও। ঘুণাক্ষরেও আপনি টের পাচ্ছেননা। অথচ, আপনার জমানো বা কাটা চুল বর্ডার ক্রস করে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশে। কখনও ঘাসের বস্তায়, কখনও আবার প্যাকেটে করে কাঁটাতারবিহীন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে মানুষের মাথার চুল। তার বদলে পড়শি দেশ থেকে এই পারে ঢুকছে গুচ্ছ গুচ্ছ সোনার বিস্কুট।সাঙ্ঘাতিক, তাহলে ডিরেক্ট পয়েন্টে আসা যাক কিভাবে আপনার চুল এতোগুলো হাত পেরিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে? কোন কাজেই বা লাগছে?

মাথা আঁচড়ানোর সময় উঠে আসা চুল অনেকেই জমিয়ে রেখে দেন। হয়তো আপনিও ফেরিওয়ালারা সেই সব চুল কিনে নেন অল্প দামে। স্যাঁলোতে কাটা চুলও সংগ্রহ করেন ফেরিওয়ালারা। পরে সেই চুলই পাড়ি দেয় বিদেশে। আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা কেজি দরে কেনা চুল বর্ডার পেরোলেই ২০-২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। ইদানিং সময়ে বিশ্ব জুড়ে উইগ বা পরচুলার মারাত্মক ডিমান্ড। গত এক দশকে বাংলাদেশেও তার বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ ওই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শুধু বাংলাদেশ বললে ভুল হবে, ভারত থেকে পাচার হওয়া মানুষের চুল বাংলাদেশ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে চীন, ইন্দোনেশিয়া, এমনকি মালয়েশিয়াতেও। বর্ডার পেরোনো সেই চুলের দাম মেটানো হচ্ছে সোনার বিস্কুট দিয়ে।

কয়েক বছর আগেও এই ব্যবসার দারুণ রমরমা ছিল।কোভিডের সময় এই ব্যবসা একটু ডাউন চললেও, সম্প্রতি এই চুল পাচার চক্র আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে। গরু, জাল টাকা, নারী পাচার নয়, এবার  চুল পাচার আটকানোই বিএসএফের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চুল পাচারের লেনদেন সোনার বিস্কুট দিয়ে কেন হয়? জানা যাচ্ছে মিয়ানমার হয়ে চোরাপথে যে সোনা ঢোকে বাংলাদেশে, তার দাম স্বাভাবিক ভাবেই কম। অন্তত ভারতের বাজারের সোনার দামের থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ কম। ফলে, এই পারের কারাবারিরা মানুষের চুলের বিনিময়ে সোনা পেলে তাঁদের মুনাফার অঙ্ক অনেক বেশিই হয়। নদিয়ার চাপড়া এবং আন্দুলিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত জুড়ে এই ‘বিনিময় প্রথা’তেই চুল পাচারের রমরমা কারবার চলছে। বিএসএফের তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এই কারবারের সঙ্গে জড়িত স্থানীয়দের অনেকেই প্রথম দিকে এই ব্যবসাকে খারাপ চোখে দেখতেন। পরে যখন তাঁরা দেখলেন, প্রচুর টাকা রোজগার করা যায়, তাঁরাও এই চুলের ব্যবসায় এলেন। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে সোনার আমদানিও শুরু হল। তবে ওপার থেকে সোনা নিয়ে এইপারে ঢোকায় যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। তারপরেও কারবার চলছে। হাতিশালা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আদিলিয়া এবং চাপড়া ব্লকে চুলের কারবার বেশি সক্রিয়।কম করে ১২ হাজার পরিবার এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। তবে, বাহিনীর তৎপরতায় সাম্প্রতিক সময়ে চুল পাচারের কারবার অনেকটাই কন্ট্রোল করা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে ফের এই চক্রের সক্রিয়তা শুরু হলে কড়া অ্যাকশন নিতে যে দ্বিধা করবে না ভারত সেটা একেবারে পরিষ্কার।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version