গ্র্যাণ্ড প্ল্যানিং, চীনকে বোকা বানিয়ে বড়লোক হবে ভারত! ডিকার্বনাইজেশনই মূল মন্ত্র, পথ দেখাবে যুক্তরাষ্ট্র

।। প্রথম কলকাতা ।।

চীনের আপত্তিকে গ্রাহ্য করছে না যুক্তরাষ্ট্র। নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপ মানে পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীতে প্রবেশের সুবর্ণ সুযোগ ভারতের হাতে। পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে ভারতকে ফুল মার্কস দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই এনএসজি আসলে কী? কে এই গোষ্ঠীতে যুক্ত হতে পারে? কারা পেতে পারে সদস্যপদ? কোন যুক্তিতে চীন, ভারতকে বাধা দিয়ে আসছে? বৈশ্বিক ডিকার্বনাইজেশন এর লক্ষ্যে কী প্ল্যানিং করছে ভারত যুক্তরাষ্ট্র? এনএসজিতে যুক্ত হলে টার্গেট পূরণে ভারত যুক্তরাষ্ট্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। কোন কোন দিক থেকে মুনাফা লুটবে ভারত বর্ষ? প্রথমেই জানতে হবে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপ মানে পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী কী? পারমাণবিক সরবরাহকারী দেশগুলোর একটা জোট যারা পারমাণবিক রপ্তানি এবং পারমাণবিক-সম্পর্কিত রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ২০১৫ সালের ভারত সফরে এসে প্রেসিডেন্ট ওবামা ভারতকে এনএসজির সদস্য করার কথা দেন। আর, ভারত বলে আসছে তারাও এই গোষ্ঠীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য।

বুঝতে হবে শক্তিক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ অ-জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সহ পরিবেশ রক্ষার জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো যদি নয়াদিল্লিকে রাখতে হয়, তবে তাকে পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী মানে এনএসজির সদস্য হতেই হবে। তাছাড়া, এনএসজি-এর সদস্য হলে ভারতে বাণিজ্যের পরিবেশ অনেক উন্নত, অনেক স্থিতিশীল হবে আর ঠিক সেই কারণেই ভারত দীর্ঘদিন ধরে এনএসজিতে যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন জানিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা বলেছে পরমাণু প্রযুক্তি ও অস্ত্র ভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ, নিজস্ব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরমাণু কর্মসূচি সম্পাদন এবং শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পালনে দায়বদ্ধতা দেখানোয় ভারত এনএসজির সদস্য পদের ন্যায্য দাবিদার। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অপব্যবহার না করার ক্ষেত্রেও ভারত সাফল্য দেখিয়েছে। ফলে ভারত এনএসজিতে ঢুকতেই পারে।

আর তাই এবার ভারতকে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপে প্রবেশের জন্য সরাসরি আহ্বান জানালো যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে সমস্ত প্ল্যানিং হয়ে গেছে। বৈশ্বিক ডিকার্বনাইজেশন এর লক্ষ্য পূরণে পারমাণবিক শক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে ভারত যুক্তরাষ্ট্র। দেশের জলবায়ু, জ্বালানি রূপান্তর, জ্বালানি নিরাপত্তার চাহিদা মেটাতে পারমাণবিক শক্তিকে প্রয়োজনীয় বলে নিশ্চিত করেছেন মোদী ও বাইডেন। এই দুই নেতা দেশীয় ও রফতানি বাজারের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের কম্প্যাক্ট মড্যুলার রিয়্যাক্টর টেকনোলজির উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করেছেন। এছাড়াও আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতে ছয়টি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড মানে এনপিসিআইএল এবং ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক কোম্পানির ডব্লিউইসির মধ্যে চলমান আলোচনার কথা। কিন্তু, এরপরেও সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। সত্যিই কী এনএসজিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ইচ্ছে পূরণ হবে? কারণ, ভুলে গেলে চলবেনা। এনএসজিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকলেও, চীন কিন্তু ভারতের প্রবেশ রোখার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। বরং পাকিস্তানকে যুক্ত করার দাবি তুলেছে বেইজিং।

চীনের যুক্তি, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এন পিটিতে ভারত সই করেনি, করতেও চায় না। তাহলে কোন ভিত্তিতে এনএসজিতে যুক্ত হতে চায় ভারত? যদিও এর পাল্টা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে ভারতের দায়বদ্ধতা দুর্দান্ত।ভারতের পরমাণু কর্মসূচি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই ভারত অবশ্যই এনএসসি তে যুক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লিবিয়া উত্তর কোরিয়ার সহ অনেক দেশে পরমাণু প্রযুক্তি পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে, পাকিস্তান এর কপালে শিঁকে ছেড়ার চান্স নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে, বলা যায় এনএসজিতে প্রবেশের বড় সুযোগ রয়েছে ভারতের সামনে। ১৯৭৪ সালে একটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের পারমাণবিক ডিভাইস বিস্ফোরণের পর এনএসজি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে, নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার গ্রুপে ৪৮ জন সদস্য রয়েছে – আর্জেন্টিনা, সাইপ্রাস, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ইতালি, নরওয়ে, স্পেন, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জাপান, পোল্যান্ড, সুইডেন, বেলারুশ, এস্তোনিয়া, কাজাখস্তান, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, রোমানিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, ফ্রান্স, লিথুয়ানিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, গ্রীস, মাল্টা, সার্বিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, স্লোভাকিয়া, ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং স্লোভেনিয়া। এখন এই ৪৮ টি দেশ নিয়ে তৈরি এনএসজি গোষ্ঠীতে ভারত কবে যুক্ত হয় সেটাই দেখার অপেক্ষা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version