মহালয়ার স্মৃতিতে রয়ে গিয়েছে গ্রামোফোন, হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য কলকাতার কোথায় পাবেন ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাক্সের ওপর বড় থালার মতো কালো রঙের রেকর্ড অনবরত ঘুরে চলেছে। তার ভিতর বাজছে আগমনী গান। ঠিক সেই সময় ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাওয়া দু একজন দাঁড়িয়ে উঁকিও মারছেন। এই যন্ত্রটিকে বলা হয় গ্রমোফোন বা কলের গান। এই যন্ত্রণটির সাথে এখন অনেকের পরিচয় নেই। বহুদিন আগে অ্যান্টিক তকমা লেগেছে এর নামের আগে। গ্রামোফোন বা কলের গান এখন অতীত। অথচ একটা সময় ছিল যখন মহালয়ার ভোরে বাড়ির ছোটবড় সবাই মিলে হাঁ করে গ্রামোফোনে শুনত মহিষাসুরমর্দিনী রেকর্ড পেরিয়ে ক্যাসেট, সিডি পেরিয়ে সিঙ্গলস আধুনিকতায় মোড়া ব্যস্ত শহরে কেমন আছে কলের গান?

কানে ব্লুটুথ হেডফোন গোঁজা প্রজন্ম এগিয়ে চলেছে আধুনিকতার সুরে। গ্রামোফোনের পাশে বসে এখন পুরনো কয়েকটি পরিবারের ড্রয়িংরুমে শোপিসের জায়গা দখল করে আছে দু-একটি গ্রামোফোন রেকর্ড। ১৮৮৮ সাল! জার্মান-বিজ্ঞানী এমিল বার্লিনারের সৌজন্যেই ফোনোগ্রাফ যন্ত্রের নাম হয় গ্রামোফোন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের গবেষণাগারে এই
যাতে কবিগুরুর গান রেকর্ড ছিল। নিউ মার্কেটের পাশে মির্জা গালিব স্ট্রিটের এমনকি এখনও দোকানের বাইরে সাজানো থাকে নস্ট্যালজিয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ঠিক সেই বছরই গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম পুজোর গান। এর ১৪টি রেকর্ড শারদাবলী নামে ছিল দাম ৩ টাকা ১২ আনা। সেকালের হিসেবে যেটা অনেকটাই বেশি। প্রথমবারের সেই রেকর্ডে গান করেছিলেন সেকালের সব বড়-বড় শিল্পীরা।

কে মল্লিক, মানদাসুন্দরী দাসী, সরলা বাঈ , রবীন্দ্রগানে অমলা দাশ একটা সময়ে এ শহরেরই কত গুণী মানুষ এসে কিনে নিয়ে যেতেন রেকর্ড। এই নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত তারপর সবই বন্ধ হয়ে গেল। কলের গানকে দূরে সরিয়ে এল টেপ রেকর্ডার। এরপর ছোট ফিতের ক্যাসেট রেকর্ডার। একটি ক্যাসেট এপাশ-ওপাশ মিলে চলত এক ঘণ্টা। একে একে এল সিডি- ডিভিডি। বিবর্তনের ধারায় এই ছোট্ট জিনিসও বোঝা হয়ে গেল। হাতের মুঠোয় পেন ড্রাইভে এখন সব রাখা যায়। আর এখন আধুনিক স্মার্ট ফোন দিয়ে পকেটে পকেটে বিশ্বের সব গান।

এই প্রজন্ম গ্রামোফোন রেকর্ড কী জানে না! একসময় শুধু রেকর্ড সংগ্রহ করাই ছিল একেক সঙ্গীতপ্রেমীর নেশা। পুজো আসলেই কের্ড কেনার ধুম পড়ত দোকানো দোকানে। কিন্তু সেই ছবি আজ আর নেই। পুজোর ঢাকের শব্দ, কাশের বন, শারদ-সাজ ও পূজাবার্ষিকীর পাশে যেন কলকাতার বুকে এককোণে পড়ে থাকে কলের গান। ক্যামেরায় মনোজিত্ রায়ের সাথে শান্তনু মজুমদারের রিপোর্ট, প্রথম বাংলা ব্যুরো।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version