গাজার মাটির নীচে বিছানো হামাসের জাল, সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কই ইসরাইলের জীবন্ত ফাঁদ! কী হয় সেখানে

।। প্রথম কলকাতা ।।

লোহার বর্মে নিজেদের ঢেকে রাখে হামাস? কেন হামাসের গায়ে এতটুকু আঁচও লাগছে না? কোথায় থাকে এরা? গাজার নীচে হামাসের এক অন্য জগৎ। কী চলে এর ভেতর? আপনি আন্দাজ করতে পারছেন না। হামাসকে নির্মূল করা ইসরাইলের জন্য কি এতটাই সোজা হবে? গাজার মাটির নীচে মাকড়সার জালের মতো কি বিছিয়ে রেখেছে হামাস? রিস্ক বাড়ছে, ইজরায়েলের স্থল অভিযান মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। আসল যুদ্ধটা হবে মাটির নীচে? হামাসের সুড়ঙ্গ ইসরাইলের জীবন্ত ফাঁদ। মাটির উপরে যে গাজা কে দেখছেন সেটা আসলে কিছুই না। আসল খেলাটা চলে মাটির নীচে। পুরো গাজার নীচে ছড়িয়ে রয়েছে হামাসের সুড়ঙ্গের অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক।যা ইসরাইলি বাহিনীর জন্য একটা মূর্তিমান আতঙ্ক। তাহলে কী আসল যুদ্ধটা মাটির নীচে? একটা জিনিস ভেবে দেখেছেন? গাজায় যতই ইসরাইল মারণাস্ত্রের হামলা চালাচ্ছে, ততোই সাধারণ মানুষের মৃত্যু মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। কিন্তু হামাসের টিকিটাও ছুঁতে পারছে না ইসরাইল। কেন?

হামাসের গায়ে আঁচ অব্দি লাগছে না। এখান থেকেই রহস্যের শুরু। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার মাটির নীচে অন্য জগৎ আছে হামাসের। শত শত কিলোমিটারের সুড়ঙ্গ। এসব সুড়ঙ্গ দিয়েই সামরিক সরঞ্জাম গাজায় নিয়ে আসে হামাস। মাটির নীচে সুবিশাল সেই সুড়ঙ্গ কতটা বিস্তৃত আন্দাজ করাও কঠিন। এই সুড়ঙ্গগুলোকে গাজার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়। সাধেই কী বিশ্বের সবচেয়ে বড় “উন্মুক্ত কারাগার” হিসেবে পরিচিত প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকা? ২০০৭ সালে হামাস প্রথম সুড়ঙ্গ নির্মাণ করে গাজা উপত্যকা ও মিশরের মাঝামাঝি অংশে। মূলত, ইসরাইলের অবরোধ এড়িয়ে প্যালেস্টাইনের জন্য পণ্য সরবরাহ করতে সুরঙ্গ নির্মাণ করা হয়। পরে ওই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৩ সালে ইজরাইলমুখী সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু করে হামাস। ওই সময় ইজরাইল-গাজা সীমান্তে হামাস তিনটে সুরঙ্গ নির্মাণ করে। এরমধ্যে দুটো সুড়ঙ্গ বিস্ফোরকে ঠাসা। যেগুলো ইজরাইল এবং মিশর ধ্বংস করার চেষ্টা চালালেও পুরোপুরি পেরে ওঠেনি। এখনো এর বেশিরভাগ অংশ অক্ষত। হামাস সহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীরা, তাদের বিভিন্ন খতরনাক ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ, রকেট ওই সুড়ঙ্গে লুকিয়ে রাখে। হামাস যোদ্ধাদের গোপন আশ্রয়ের ঠিকানা হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এই সুরঙ্গগুলো। এমন কি এই সুরঙ্গের ভেতরে রয়েছে সমরাস্ত্র তৈরির কারখানাও বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস ইরান থেকে সুরঙ্গ পথে গাজায় অস্ত্র নিয়ে আসে। এছাড়া গাজায় অস্ত্র উৎপাদনের জন্য উপকরণও পাঠায় তারা।

মাটির নিচে এতো এতো বাঙ্কার। ওইসব বাঙ্কার শুধু হামাস সহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীদের জন্য যাতে তারা ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালাতে পারে। বোমাবর্ষণ করতে পারে। তাহলে বুঝতে পারছেন ইসরাইলের স্থল অভিযান কতটা চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে? হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গত দু সপ্তাহ ধরে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। স্থল হামলার অংশ হিসেবে গাজা সীমান্তের কাছে ৩ লাখেরও বেশি সেনা ও কয়েকশ ট্যাংক জড়ো করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজায় স্থল হামলা চালিয়ে ষ হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে, সেখানে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু পুরো বিষয়টা কি এতটাই সহজ হবে? এই অপারেশন এর ক্ষেত্রে গাজার নীচের বিস্তৃত সুরঙ্গ টেনশন বাড়াচ্ছে। ইজরায়েল ও জানে এগুলো এমন এক একটা সুড়ঙ্গপথ যা লম্বায় প্রায় ৪১ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১০ কিলোমিটার। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই টানেলকে বলে ‘গাজা মেট্রো’। ২০২১ সালেও ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত হয়েছিল। সেই যুদ্ধের পরে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দাবি করেছিল যে এয়ারস্ট্রাইকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি টানেল ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু হামাস তখন বলেছিল যে তাদের টানেল ৫০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং এর মাত্র পাঁচ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে।

হাতে মারতে না পেরে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছে ইজরায়েল অর্থনৈতিক ভাবে গাজাকে একেবারে কোণঠাসা করে রেখেছে তারা। চারদিকে প্রাচীর তুলে ষ গাজাকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বহির্জগতের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য হয়ই না গাজার। তাই সেখানে বেকারত্বের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই, নিষেধাজ্ঞার জেরেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ওই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে আজ থেকে ১৬ বছর আগে গাজায় মাটির নীচে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু করেছিল হামাস বাহিনী। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ওই সুড়ঙ্গ পথ ধরে পড়শি দেশ মিশর থেকে গোপনে পণ্য আদান প্রদান করা! খাবার ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ওই পথ ধরেই নিয়ে আসা হত একসময়। পরে ধীরে ধীরে সুড়ঙ্গগুলো হয়ে ওঠে হামাসের সামরিক ঘাঁটি। একদিকে যেমন পণ্য আদানপ্রদান চলে, অন্যদিকে তেমনই ওই সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করেই ইজরায়েলে হামলা চালানোর উপায় বের করে হামাস যোদ্ধারা বলাই বাহুল্য, ইজরায়েলের উপর হামলায় ওই সুড়ঙ্গপথই হামাসের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। হামাসের দাবি, অনেক গোপন সুড়ঙ্গ আছে যার নাগাল পাবে না ইজরায়েলি সেনারা ওই সুড়ঙ্গেই নিজেদের অন্য পৃথিবী তৈরি করেছে এরা। সেখানে বসেই ইজরায়েলকে শেষ করার আরও বড় প্ল্যানিং করছে হামাস।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version