জল্পেশ মন্দির থেকে রহস্যময় মিষ্টি, জলপাইগুড়ির এত সৌন্দর্য আর কোথাও পাবেন না

।। প্রথম কলকাতা ।।

জল্পেশ মন্দির থেকে রহস্যময় মিষ্টি, চা বাগিচা থেকে পাহাড়ে সৌন্দর্য, প্রতিবেশী দেশের গা ঘেঁষে আছে জলপাইগুড়ি। এটা শুধু একটা জেলা নয়, আজ জলপাইগুড়ি সম্পর্কে এমন কিছু শুনতে চলেছেন, যা আগে শোনেননি। পুরোটা শুনলে এখানে না গিয়ে থাকতে পারবেন না। গর্ব হবে জলপাইগুড়ি বাসীর।

সমৃদ্ধ জেলা জলপাইগুড়ি।সম্ভবত জলপাই ফলের নাম থেকে এই জেলার নামকরণ। জন্ম ১৮৬৯ সালে। আয়তন প্রায় ৩৩৮৬ বর্গ কিলোমিটার। এখানে স্নাতক কলেজ, কারিগরি কলেজ থেকে শুরু করে গ্রন্থাগার, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, হাসপাতাল, রাজ্য হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল রয়েছে। সুবিধার্থে বড় বড় শহরে যাওয়ার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। জেলাটির সৌন্দর্য বর্ধন করছে জয়ন্তী আর বক্সা পাহাড়। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত নল রাজারগড় চিলাপাতা। বিখ্যাত মন্দিরের মধ্যে রয়েছে বটেশ্বর, জল্পেশ, জটিলেশ্বর, দেবী চৌধুরী রানীর মন্দির, শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির প্রভৃতি। চিকিৎসার সুব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে প্রায় ১২০ টা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। রেলপথ রয়েছে প্রায় ৪৫৭ কিলোমিটার। এই জলপাইগুড়িতেই ভারতের প্রথম ফরেনসিক সাইন্স ল্যাবরেটরি তৈরি হয়েছিল। দর্শনীয় স্থানের তালিকাটা বড্ড লম্বা। চাপরামারি, গরুমারা,চা বাগিচা চালসা, বন বাংলো মূর্তি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হলং প্রভৃতি। জলপাইগুড়ির মাটিতেই বারংবার উচ্চারিত হয় কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম। তারা হলেন উপেন্দ্রনাথ বর্মন, খগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, কুমুদিনীকান্ত চক্রবর্তী, চারুচন্দ্র সান্যাল, ননী ভট্টাচার্য প্রমুখ।

জলপাইগুড়িতে রয়েছে এমন এক মিষ্টি, নাও মুখে দিলেই নাকি মাথার চাঁদি পর্যন্ত মিষ্টি হয়ে যায়। কি শুনে অবাক হলেন তো? এখানেই পাওয়া যায় বেলাকোবার চমচম। বেশ শক্ত এবং কড়া মিষ্টি। চামচ দিয়ে কাটলে বেরিয়ে আসে নরম রসালো অংশ। জলপাইগুড়ির যে কোন জায়গা থেকে শুধু গাড়িতে উঠে বলবেন, বেলাকোবার মিষ্টি খেতে যাবেন, ব্যাস আর কিছু বলতে হবে না। ড্রাইভার আপনাকে ঠিক পৌঁছে দেবে এই চমচমের দোকানে। দুধ, ময়দা, চিনি, ছানা মিশিয়ে অভিনব কায়দায় তৈরি হয় এই মিষ্টি।

হিমালয়ের পাদদেশে তরাই ডুয়ার্স অঞ্চলে থাকা জলপাইগুড়ির প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। পর্যটকের জন্য ভীষণ বিখ্যাত। মোটামুটি বক্সা আর ভুটান সীমান্তবর্তী অঞ্চল ছাড়া এই জেলার অধিকাংশ অঞ্চল নদীবাহিত উর্বর পলিমাটি সমৃদ্ধ। বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ঠান্ডার সময় শীত পড়ে কাঁপুনি দিয়ে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যায় কখনো ৮ ডিগ্রির নিচে। গ্রীষ্মে গড় উচ্চতা থাকে প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বঙ্গে বন্যা হলে প্রথমেই আতঙ্ক গ্রাস করে এই জলপাইগুড়িতে। একটাই কারণ, জলপাইগুড়িতে নদীর সংখ্যা প্রচুর। এই জেলার নদীগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটা ব্রহ্মপুত্র নদীগোষ্ঠী, আর একটা গঙ্গানদী গোষ্ঠী। ব্রহ্মপুত্র নদীর গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, গদাধর, বক্সা, ডিমা, জয়ন্তী সহ প্রায় ২৩ টা নদী। অপর দিকে গাঙ্গেয় গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম মহানন্দা এবং তার উপনদী। তবে প্রধান নদী সাতটা। তিস্তা, জলঢাকা, তোর্সা, কালজানি, রায়ঢাক, সংকোশ আর ডায়না। বুঝতেই পারছেন, বর্ষার সময় বরফ গলা জলের সঙ্গে বৃষ্টির জল একসাথে পড়তেই ভয়ঙ্কর বন্যা দেখা দেয় তিস্তা নদীতে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিচারে, জলপাইগুড়ি ভীষণ ইম্পরট্যান্ট। কারণ একটাই, এর সীমানা রয়েছে বেশ অনেকগুলো রাজ্য এবং দেশের সঙ্গে। জলপাইগুড়ির উত্তরে আছে দার্জিলিং জেলা এবং ভুটান। দক্ষিণে কোচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশ। পূর্বে অসম। সময় করে একদিন ঘুরে আসতে পারেন জলপাইগুড়ি থেকে। কথা দিচ্ছি, আশাহত হবেন না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version