।। প্রথম কলকাতা ।।
First Women Firefighter: বুঝেছিলেন, এক ঘেঁয়ে চাকরি তার জন্য নয়। চ্যালেঞ্জিং কিছু করতে হবে। বাংলার এই মেয়ের এখন দৈনন্দিন লড়াই আগুনের সঙ্গে। তরতরিয়ে মই বেয়ে ওঠা, আগুন নেভানোর নানা টেকনিক তাঁর কাছে জলভাত ব্যাপার। চারিদিকে আগুন দেখে বিন্দুমাত্র ভয় পান না। প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি। ইনি শুধু কলকাতার নয়, গোটা দেশে প্রথম বিমানবন্দরের মহিলা দমকল কর্মী। প্রথম কলকাতার পরিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অগ্নিযোদ্ধা তানিয়া সান্যালকে(Taniya Sanyal) জানাচ্ছে স্যালুট। তানিয়া সাধারণ মেয়ে থেকে কীভাবে হয়ে উঠলেন অগ্নিযোদ্ধা? চলুন, আজ বলব সেই গল্পই।
ছোট থেকে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই তানিয়া বড় হয়েছেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে ভীষণ ভালোবাসতেন। চাকরি করতেন ঠিকই, কিন্তু সেই চাকরিতে বেশিদিন মন বসেনি। সময়টা তখন ২০১৭ সাল, হঠাৎ খবরের কাগজে চোখে পড়ে এক বিজ্ঞাপন। সেখানেই খুঁজে নেন জীবনের বড় চ্যালেঞ্জটা। সেই সময় তানিয়া সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। স্বপ্ন ছিল, আমলা হবেন। উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তরও করেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি চলতো নিয়মিত শরীর চর্চা। স্কুল স্পোর্টসেও পিছিয়ে ছিলেন না। পারদর্শী ছিলেন শাস্ত্রীয় নৃত্যে। কিন্তু বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়তেই মনটা একটু অন্যরকম হয়ে যায়। যেখানে লেখা ছিল, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন ফায়ার সার্ভিস পদে কর্মী নিচ্ছে। সেই সময় দাঁড়িয়ে ভারতের কোন বিমান বন্দরে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কোন মহিলা অফিসারই ছিলেন না। একটা বিজ্ঞাপন পাল্টে দেয় দমদমের সিঁথির তানিয়ার সান্যালের জীবন। পরীক্ষার প্রিপারেশন শুরু করে দেন। একে একে লিখিত পরীক্ষা সহ শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাতে পাশ করেন। তারপর চলে প্রশিক্ষণ। ট্রেনিং হয়েছিল ৫৫ জনের, কিন্তু তাদের মধ্যে তানিয়া ছিলেন একমাত্র মহিলা।
দমকল বাহিনীতে কাজ করা মানেই তো জানেন, ঠিক কতটা রিস্ক। বিন্দুমাত্র দেরি করা যাবে না। নিজের জীবনের কথা ভাবার সময় নেই। বিশেষ করে বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তো ঝুঁকির শেষই নেই। মাত্র দুই মিনিট ১৮ সেকেন্ডের মধ্যে বিমান কর্মী এবং যাত্রীদের উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। এই সময়টাকে বলা হয় সারভাইভাল টাইম। এই সময়ের মধ্যে যদি উদ্ধার কাজ ঠিকমতো না হয়, তাহলে সবাই পুড়ে মারা যেতে পারে। রীতিমত জীবন মরণ লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে সফল তানিয়া। তাইতো গোটা দেশের মহিলাদের কাছে আজ তিনি আইকন। আর আমাদের বাংলার কাছে তিনি গর্ব । এখন তিনি একজন প্রশিক্ষক। তার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্যান্য মহিলারা যোগ দিচ্ছেন বিমানবন্দরের দমকল বাহিনীতে।তানিয়াকে এই কাজের জন্য আয়ত্তে করতে হয়েছে প্রচুর টেকনিক। যখন নজল দিয়ে জেট গতিতে জল বেরোয়, তখন ঠিক নিশানায় ধরে রাখার টেকনিকটা তাকে শিখতে হয়েছে, ফোমের ক্ষেত্রেও একই।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/720100033645930/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
এ কাজের অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন তিনি? একটা সময় টিভিতে বসে দমকল কর্মীদের কাজ দেখতেন। দেখতেন, প্রাণ বাঁচাতে যে যেমন ভাবে পারছে পালাচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অন্য মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচাচ্ছে। হোসপাইপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আগুনের দিকে। মেয়ের ইচ্ছার প্রতি কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াননি তানিয়ার বাবা-মা। তারা সবসময় চেয়েছেন, তাদের মেয়ে নিজের ইচ্ছা মতন বাঁচুক। আর বাবা-মায়ের এই প্রশ্রয়টাই তানিয়ার কাছে সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম