হিরোশিমা-নাগাসাকিও ফেল, বোমা দিয়ে বাঁধা এই দেশ! তছনছের মূলে যুক্তরাষ্ট্র? প্রতিটা সেকেন্ড কাটে আতঙ্কে

।। প্রথম কলকাতা ।।

বোমার স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে কোন দেশ? কোন দেশ ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বোমা হামলার শিকার? মুহুর্মুহু ক্লাস্টার বোমা বর্ষণ। দুর্ধর্ষ অঘটনের সাক্ষী জাপান, ইউক্রেন নাকি লাওস? রসাতলে যাচ্ছে কে? জানেন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে ভেতরে ভেতরে কোন দেশ ধসে গেছে? তছনছ হয়ে গেছে। বোমা হামলার স্থায়ী ক্ষত জেগে আছে এই দেশের বুকে। যে দেশে প্রত্যেকটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড কাটে আশঙ্কায়। এই দেশে ১৯৬৪ মানেই বিভীষিকা। জানলে অবাক হবেন ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বোমা হামলার শিকার হওয়া দেশের তালিকার আশেপাশেও নাম নেই ইউক্রেনের। ইউক্রেন তো দূরস্ত। জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিকেও হারমানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দেশ লাওস।

লাওস কী পরিমাণ বোমাবর্ষণের শিকার হয়েছিল? জানেন? শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে। পুরো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যত বোমাবর্ষণ হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি বোমাবর্ষণের শিকার লাওস। যুক্তরাষ্ট্র কুড়ে কুড়ে খেয়েছে দেশটাকে। দেশটার কমিউনিস্টদের শায়েস্তা করতে লাওসে অভিযান শুরু করেছিল মার্কিনিরা। বাইরে থেকে নিরপেক্ষতা প্রকাশ করলেও ভেতরে ভেতরে চালিয়েছিল কঠিন ষড়যন্ত্র। তারপর ঝোপ বুঝে কোপ। ১৯৬৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী লাওসে বোমাবর্ষণের গোপন অভিযান শুরু করে। এসি-১৩০ এবং বি-৫২, এই দুটি বোমারু বিমান দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে ক্লাস্টার বোমা বর্ষণ শুরু হয়। আনুমানিক ২ মিলিয়ন টন বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল ওই অভিযানে। নিক্ষেপ করা বোমার একটি বড় অংশ অবিস্ফোরিত থেকে গিয়েছিল। সেসব বোমার কবলে পড়ে পরবর্তীতে বিশ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএ আকাশপথে প্রায় ৫ লাখ ৮০ হাজার বার অভিযান পরিচালনা করেছিল।

আল জাজিরার হিসাব মতে, নয় বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে প্রতি আট মিনিট পর পর বোমা হামলা চালানো হয়েছিল দেশটিতে। পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ডের সামরিক ঘাঁটিগুলো থেকে হামলা পরিচালনা করা হয়। তাহলে, সেই দেশে আর কিছু থাকে? একদিকে গৃহযুদ্ধ অন্যদিকে মার্কিনিদের বোমা হামলা, তছনছ হয়ে গেছিল লাওস। লাওসের গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ১৯৭৫ সালে‌। কিন্তু আমেরিকার নির্মম বোমা হামলায় প্রাণ হারায় দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-দশমাংশ‌। বোমা হামলায় মৃত ব্যক্তিদের ৯৮ শতাংশই বেসামরিক মানুষ। প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ বোমাবর্ষণে আহত হয়, যারা পরবর্তী জীবনে বোমা হামলার দুঃসহ স্মৃতি সঙ্গী করে বেঁচেছিলেন। চার ভাগের এক ভাগ মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন এই বোমা হামলার কবল থেকে বাঁচতে।

আসলে, লাওসের মার্কিন বোমা হামলা একটি স্থায়ী ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে দেশটির বুকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বোমা হামলার ক্ষয়ক্ষতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এখনও লাওসের বিভিন্ন এলাকায় অবিস্ফোরিত বোমার পাওয়া যায়, যেগুলো উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে যুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরেও।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version