সত্তরেও ক্লান্তিহীন, স্কুলই সংসার শিক্ষিকা মহামায়ার, কম পারিশ্রমিকে পড়িয়েই চলেছেন

।। প্রথম কলকাতা ।।

বয়স ৭০ ছুঁইছুঁই। চার দশক ধরে স্কুলে পড়িয়ে চলেছেন। না, কোনও দিনই পাকা হয়নি চাকরি। তাতে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। এখনও নিয়ম করে স্কুলে আসেন। স্কুলই তাঁর সংসার। ছাত্রীরা তাঁর কাছে নিজের কন্যাদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। চেনেন এই শিক্ষিকাকে?

তিনি মহামায়া মালাকার। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জালুইডাঙা গোপালচন্দ্র পাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। অবসরের কথা ভাবতে পারেন না আজও।১৯৭৪-এ এসটিকেকে রোডের পাশে গড়ে ওঠে স্কুলটি। তার ১২ বছর পরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করানোর সরকারি অনুমোদন পায় স্কুল। এখন সেখানে পড়ানো হয় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। ছাত্রীর সংখ্যা ৬০০। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাস থেকে স্কুলে পড়ানো শুরু করেন সংস্কৃত অনার্স নিয়ে পাস করা কালনা কলেজের ছাত্রী মহামায়া। পরে বিএড ডিগ্রিও অর্জন করেন। তাঁর সঙ্গে স্কুলের পাঁচ জনের চাকরি স্থায়ী হলেও তা পাকা হয়নি মহামায়ার। আজ শিক্ষক শিক্ষিকাদের সকলেই মোটা বেতন পান। তর পরও তাঁদের অনেকের মধ্যে পড়ানোর অনীহা চোখে পড়ে। কোনও রকমে ক্লাসে সময় কাটান তাঁদের অনেকে। বেতন না পেয়েও মহামায়া যেন তাঁদের ব্যতিক্রম।

প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসেন তিনি। বাসভাড়া ও টিফিনের খরচ বাবদ স্কুলের তহবিল থেকে এক সময় মাসে ১০০ টাকা করে দেওয়া হত মহামায়াকে।এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার টাকা। কোনও কোনও সময় বাস না মিললে অন্য যানবাহন ভাড়া করে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। তবে তা নিয়ে আক্ষেপ নেই মহামায়ার।কোনও দিন তিনটি, কোনও দিন চারটি ক্লাস নিয়ে বাড়ি ফেরেন। যত্ন নিয়ে পড়ান তিনি। তাঁর ক্লাসের অপেক্ষায় থাকে পড়ুয়ারা। অঙ্ক, সংস্কৃত সহ নানা ক্লাস নেন সাগ্রহে।

এক সময়ে স্কুলে করণিক পদ ফাঁকা ছিল। ক্লাস নেওয়ার পরে মহামায়া করণিকের কাজও করতেন। স্বামীর স্বল্প আয়ে দুই মেয়ের পড়াশোনা এবং সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হতো না। প্রয়োজন ছিল বাড়তি অর্থের। রোজগার বাড়াতে মহামায়া স্কুল ছুটির পরে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন।সন্ধ্যা ৭টার বাস ধরে বাড়ি ফিরতেন। ১২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। দুই মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করে তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন। এখন একাই থাকেন। যদিও একাকিত্ব অনুভব করেন না মহামায়া। স্কুলই তো তাঁর সংসার।

শ্রেণিকক্ষে পৌঁছলেই শরীরে জোর চলে আসে। যতদিন পারবেন পড়িয়ে যাবেন তিনি। ছাত্রীদের প্রতি তাঁর স্নেহ-মমতা তুলনাহীন। স্কুলঅন্ত প্রাণ তিনি। শিক্ষকতার পেশাকে আদর্শ করে এখনও পড়িয়ে চলেছেন অস্থায়ী শিক্ষিকা মহামায়া মালাকার। বর্তমানের মোটা বেতনের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছেও আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছেন নিজের অজান্তেই। কাজের প্রতি একাগ্রতা, ভালোবাসাই শেষ কথা, অর্থ সেখানে কোনও বাধা নয় বুঝিয়েছেন তিনি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version