Iraq: শুকিয়ে কাঠ ইরাক! জলের জন্য হাহাকার, সর্বনাশের মূলে আমেরিকা?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Iraq: জলের ছিটেফোঁটাও নেই, ধুঁকছে ইরাক। ইরাকের নদনদী খালবিল শুকিয়ে কাঠ, তীব্র জলসঙ্কটে ভুগছে দেশটা। কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়েও জলের দেখা মিলছে না। জল নিয়ে কাটাকাটি মারামারির মতো পরিস্থিতি। ইরাক ছেড়ে চলে গেছে কত মানুষ। যা করা উচিত ছিল তা কি করতে পারছে ইরাক? কি কারণে তৈরি হলো এই পরিস্থিতি? কি বলছেন আবহবিদরা?

জলের জন্য ইরাক আর ইরানের মধ্যে ১০ বছর ধরে যুদ্ধ চলার পরেও। ভালো নেই ইরাক। রীতিমতো খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঘরবাড়ি মাঠঘাট সবকিছুই খাঁ খাঁ করছে। খাল ফেঁটে চৌচির। একটু জলের আশায় কোদাল দিয়ে প্রতিদিন মাটি খোঁড়ে ইরাকের মানুষ। কিম্বা জলের জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটেও ফিরতে হয় খালি হাতে। জল সংকটের কারণে কমে গেছে শস্য উৎপাদন। বৃষ্টি নির্ভর ফসলের উৎপাদন কমেছে অনেকটাই। চাষীদের মধ্যে জলের জন্য বিরোধ তৈরি হচ্ছে। জলের অভাবে কত মানুষ ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরেই মারাত্মক খরার মুখে ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চল। বর্তমানে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে। বসরার দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন শাত আল আরব ইরাকের খুব গুরুত্বপূর্ণ নদী। এর তীরে অবস্থিত বসরা শহরটি ওই নদীর সঙ্গে অনেকগুলো খাল দিয়ে যুক্ত। কয়েক বছর ধরে বসরার খাল গুলো মরে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ জল বাহিত রোগে আক্রান্ত। আসলে, শুধু বসরা নয়, এই ছবি কমবেশি গোটা ইরাকের। আবহবিদদের মতে ইরাকে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ। জল সংরক্ষণের পরিমাণ বছরে ৭০ বিলিয়ন ঘন মিটার হওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। দুর্বল ব্যবস্থাপনা, অবৈধভাবে জল সরবরাহ এগুলোর কারণেই এই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ।

এর বাইরেও আরও কিছু কারণ আছে। ইরাকের জলের মূল উৎস ইউফ্রেটিস আর টাইগ্রিস। দুটো নদী এক হয়ে তৈরি করেছে শাত আল আরব নদী, যা পারস্য উপসাগরে গিয়ে মিশেছে। নদী দুটোর জল, তীরবর্তী শহরের মানুষের প্রয়োজন আর ক্ষেত খামারে কৃষিকাজের চাহিদা মেটালেও, দেশটার বাকি অংশ শুকিয়ে কাঠ, যেন একপ্রকার মরুভূমি। নগর ব্যবস্থা আর কৃষিকাজ কে সচল রাখতে নদী দুটোর উপর অনেকগুলো বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, খাল কাঁটা হয়েছে। বলতেই হচ্ছে, ইরাকের মানুষ এই দুটো নদীর উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। নদী দুটোর জন্ম তুরস্কে, উৎস থেকে ৭১% জল আসে। সিরিয়া আর ইরান থেকে যুক্ত হয় ১০% জল। এই তিনটে দেশ নদীর জল প্রয়োজন মতো ধরে রাখছে। ইউক্রেটিস টাইগ্রিস নদী দুটোতে প্রচুর বাঁধ দিয়েছে তুরস্ক, সিরিয়া। আরও বাঁধ তৈরি চলছে। ফলে, নদীগুলোর স্বাভাবিক জলপ্রবাহের খুব কমই ইরাকে পৌঁছতে পারছে।

ইরাক পাচ্ছেনা মিঠা জল, বাড়ছে দূষণ। জলপ্রবাহ কমে যাওয়ায় পারস্য উপসাগর থেকে নোনা জল শাত আল আরব দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে ইরাকের মালভূমিতে। বুঝতে পারছেন বিপদ টা কোথায়? মারা যাচ্ছে মিঠা জলের মাছ আর শস্য। সবমিলিয়ে, চরম বিপদে ইরাক। ইরাকে জল সংকটের শুরু ১৯৯০ সালে। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকের হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ সহ অসংখ্য অবকাঠামো ধ্বংস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক জুড়ে ফের আক্রমণ চালায়। ইরাকের ৪০ শতাংশ মানুষ খাওয়ার জল থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করে। এককথায় ইরাকে, নদীভিত্তিক অবকাঠামো আর পরিষ্কার জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলা ভালো, ধ্বংস হয়ে গেছে। ইরাক সেগুলো এখনো নতুন করে তৈরি করতে পারেনি। শুধু ইরাক নয়, এখনও যদি আমরা সতর্ক না হই তবে ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। জীবনের সংকট মেটায় যে জল, সেই জলই এখন তীব্র সঙ্কটে। মনে রাখবেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি কখনো বাঁধে, তা জমি বা এলাকার দখল নিয়ে নয়, জলের জন্য বাঁধবে বলছেন গবেষকরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version