।। প্রথম কলকাতা ।।
খালিস্তানের সাথে সরাসরি পাক যোগ। একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস। হরদীপ সিং নিজ্জরের সঙ্গে কিনা আইএসআই কানেকশন? পাকিস্তানে বসে আইইডি ট্রেনিং। কানাডা থেকেই সন্ত্রাসে মদত। পঞ্জাবে একাধিক বিস্ফোরনের নির্দেশ, একের পর এক খুন। জঙ্গি নিজ্জরকে চেনার আরও বাকি আছে। আগেপিছে না ভেবেই কী এতো বড় রিস্ক নিলেন ট্রুডো? নিজ্জর ডোবাবে কানাডাকে মিলিয়ে নেবেন।
প্রথমেই জেনে রাখুন, ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় থাকা হরদীপ সিং নিজ্জরের একটাই পরিচয়।একজন খালিস্তানী জঙ্গি। যার বিরুদ্ধে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী দলের খাতায় গুচ্ছেক মামলা ছিল হরদীপের জীবনকাহিনী হার মানায় হিন্দি সিনেমাকেও। পঞ্জাবের জলন্ধরের বার সিং পুরা গ্রাম থেকে গ্যাংস্টার নিজ্জরের জীবন শুরু। ১৯৮০ থেকেই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে নিজ্জর। গ্যাংস্টার গুরনেক সিং ওরফে নেকার হাত ধরেই অপরাধ জগতে হাতেখড়ি তার।
পবে অপরাধ জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ১৯৮০-৯০ পর্যন্ত পঞ্জাবের খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে জড়িত ছিল। ভারতে থেকে না পালালে চরম বিপদে পড়বে, সেই আশঙ্কায় ১৯৯৬ সালে জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে
কানাডার আশ্রয় নেয়। সামান্য ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। এরপরই আসল চমক, হরদীপের সঙ্গে পাক যোগ সামনে চলে এলো। কানাডা মুখ লুকোবে কোথায়? হ্যাঁ অস্ত্র-আইইডির ট্রেনিং নিতে নিজ্জর সোজা পৌঁছে যায় পাকিস্তানে। নিজ্জরকে পাকিস্তানে অস্ত্র-শস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে সাহায্য করেছিল সেই দেশেরই গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। ওখানে বসেই ভারতে হামলা চালানোর নির্দেশ দিত নিজ্জর। ট্রেনিং এর পর ফিরে এলেও বরাবরই পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই হরদীপের। ৪ সদস্যের সমন্বয়ে একটি কেটিএফ মডিউলও স্থাপন করেছিল এই হরদীপ। এরপরেও কী বলবেন ট্রুডো?
২০১০ সালে পাতিয়ালার একটি মন্দিরের কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ব্রিটেনের খালিস্তানি নেতা পরমজিং সিং পামা জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে! নিজ্জরের নির্দেশেই সেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে অনুমান ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ২০১২ সালের পর নিষিদ্ধ সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্সের নেতা জগতার সিং তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে নিজ্জর। বিভিন্ন সময়ে একাধিক জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে হরদীপ সিং নিজ্জরের। এছাড়াও একাধিক খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল নিজ্জর। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সচ্চা সৌদার দফতরে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করে নিজ্জর। সেইবার বড় কিছু ঘটে যেত বাই এনি চান্স, সফল হয়নি!
সেই সময় ভারতে পৌঁছতে পারে নি নিজ্জর। এরপর সে তার গোষ্ঠীর লোকজন প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ ইজহার আলম, পঞ্জাবের শিবসেনা নেতা নিশান্ত শর্মাকে খুনের নির্দেশ দেয়। ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে বিস্ফোরণেও নিজ্জরের হাত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে! সেই বিস্ফোরণে ৪২ জন আহত হন। ২০১৮ সালে পাঞ্জাবের তৎকালীল মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের একটি তালিকা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে তুলে দিয়েছিলেন। সেখানেও হরদীপ সিং নিজ্জরেরও নাম ছিল বড় অক্ষরে লেখা।
নিজ্জরের ওঠাবসা ছিল গ্যাংস্টারদের সাথে হরদীপ এর ডানহাত ছিল পঞ্জাবের মোগার গ্যাংস্টার অর্শদীপ সিং গিল ওরফে অর্শডোলা। ২০২০ সালে, নিজ্জরকে ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করে। খালিস্তানি নেতা হরদীপ আবার ছিল গুরুদ্বারের সভাপতিও ছিল। চলতি বছরের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় এক গুরুদ্বারের সামনেই গুলি করে খুন করা হয় নিজ্জরকে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একটা ডসিয়ার তৈরি করেছে হরদীপ সিং নিজ্জরের। যেখানে বলা হচ্ছে, কানাডায় অস্ত্র ও মাদক পাচার চক্র থেকে আসা টাকাই সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে ইনভেস্ট করত নিজ্জর। একাধিক খালিস্তানি নেতাদের নিয়ে কানাডায় একটি গ্যাং তৈরির প্ল্যান ও করেছিল। কানাডায় নিজস্ব ট্রেনিং ক্যাম্পও খুলেছিল। নিজ্জর নিষিদ্ধ সংগঠন খালিস্তনি টাইগার ফোর্সে কমবয়সিদের নিয়োগ করত, সেখানে তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত। তরুণদের মগজধোলাই করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত। দেওয়া হতো একে-৪৭, স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল ব্যবহারের ট্রেনিং।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসে-র সঙ্গেও হরদীপ সিং নিজ্জর যুক্ত ছিল। তলে তলে ভারতের জন্য আরও বড় ক্ষতির মারাত্মক প্ল্যান সাজাচ্ছিল? তদন্তকারীদের দাবি, কানাডার শিখদের মধ্যে খালিস্তান ভাগের প্রস্তাবন পাশ করানোর কাজ করছিল হরদীপ। সেই প্রস্তাবনা পাশ করানোর সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন ভারতেই অথচ, এত কিছু জেনেও কেন একটা জঙ্গিকে সমর্থন করছেন ট্রুডো? আপাতত এই প্রশ্নেই জেরবার কানাডা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম