।। প্রথম কলকাতা ।।
ওয়াগনার এর ব্যর্থ বিদ্রোহের পর রাশিয়া কি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে? নাকি যে পরিস্থিতি তৈরি হলো তা রাশিয়ার জন্য নতুন কোনো বিপর্যয়? কোন খাতে বইছে জল? রাশিয়ার অন্দরেই শুরু পুতিনের শুদ্ধি অভিযান। ওয়াগনার কী তলে তলে নতুন কোনো ছক কষছে? রাশিয়ায় নিখোঁজ জেনারেল, কী চলছে মস্কোতে? রাশিয়াকে দুর্বল ভেবে বড় ভুল করছেন না তো জেলেনেস্কি? পুতিনের দুর্বলতাই কিন্তু খুব বেশি বিপজ্জনক। কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? আগে জানতে হবে এই মুহূর্তে ওয়াগনার বাহিনীর স্ট্যাটাসটা কী?
প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য নিয়ে ওয়াগনার বাহিনীর প্রিগোজিন এখন বেলারুশে রয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান বলেছেন, ওয়াগনার সেনারা আর ইউক্রেনে যুদ্ধ করবেন না। এদিকে এরই মধ্যে ওয়াগনার সেনাদের জন্য নতুন একটি ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে বেলারুশে। কারণ, মস্কোতে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে চুক্তি করেই সেখানে পাড়ি জমিয়েছে ওয়াগনার। সেক্ষেত্রে, রাশিয়া যে চুক্তির পথে হেঁটেছে সেটা কতটা সফল হচ্ছে, এটা একটা বড় প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে প্রথমত, ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত ওয়াগনারকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বলে মনে করছে, সেই কারণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে প্রিগোজিন ও তার অনুসারীদের বেলারুশে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ক্রেমলিন ওয়াগনারকে নিজের মতো করে ছেড়ে দেওয়াকেই সমাধান মনে করছে, এতে প্রিগোজিন ও ওয়াগনার তাদের খোলনলচে বদলে ফেলার সুযোগ পাচ্ছে। কেননা, রাশিয়ার বাইরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকছে। যদিও, ক্রেমলিনের এই নীতি নিয়ে অলরেডি রাশিয়ার অন্দরে জোর সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। কোথাও গিয়ে কি পুতিনের এই নীতি ফেল করছে?
দেখুন রাশিয়ায় যাঁরা যুদ্ধ-সংক্রান্ত সংবাদ দেন, যাঁরা সাধারণত পুতিনকে সমর্থন করেন, তাঁরা ওয়াগনার বিদ্রোহ যেভাবে মীমাংসা হয়েছে, তা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাঁদের কেউ কেউ ওয়াগনারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারায় প্রকাশ্যে পুতিন ও সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছেন। রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি এবং পুতিনের প্রতি তাঁদের সমর্থন কতটা টলায়মান, তা বোঝার জন্য সম্ভবত এটাই সেরা মাপকাঠি। সেই অনুযায়ী দেখতে গেলে, সত্যিই তো প্রিগোজিন এখন মুক্ত আর সমানভাবে উদ্ধত। এমনকি নিজের ডালপালা মেলারও যথেষ্ট সুযোগ পেয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে, পুতিন ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট এর মধ্যেকার চুক্তি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
অন্যদিকে, এই খবরও পাওয়া যাচ্ছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের মধ্যে যাঁরা ওয়াগনারের পৃষ্ঠপোষক, তাঁদের বিরুদ্ধে একটা শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান কতটা গভীর হবে, তা বলার সময় এখনই আসেনি। আবার ইউক্রেনে যখন একটা মরণপণ যুদ্ধ চলছে, সেই সময় পুতিন তাঁর সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার রিস্ক কতটা নেবেন, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
তবে, রাশিয়ার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন সম্পর্কে জল্পনা বেড়েই চলেছে। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। কেউ কেউ বলছেন তাকে গ্রেফতার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর সাথে কী ঘটতে পারে তার কোনো স্পষ্ট ধারণা মেলেনি। ফলে সব মিলিয়ে রাশিয়া একটা নতুন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেছে বলা যায়। তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ, পুতিনের সিস্টেমে যে গভীর ফাটল প্রকাশ পেয়ে গেছে, সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পুতিন পুরো পরিস্থিতিকে কিভাবে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুজন বিশেষজ্ঞ বলছেন পুতিন দুর্বল হয়েছেন এটা মনে করলেও ভুল করবে শত্রুরা। কারণ বিশেষজ্ঞরা তো বলছেন, শক্তিশালী পুতিনের চেয়ে দুর্বল পুতিন বেশি বিপজ্জনক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম