।। প্রথম কলকাতা ।।
Oil: ভারতীয় অর্থনীতিতে নয়া শঙ্কা। এবার কি মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে ভারতের অর্থনীতি? কেন এই প্রশ্নটা উঠছে? রুশ তেলের জন্য নিজেদের কোন বিপদ ডেকে আনছে ভারত? তাহলে, এবার কি ভারতকে পস্তাতে হবে? রুশ তেলে তৈরি ভারতীয় জ্বালানি নিয়ে কীসের ইঙ্গিত দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন? আশঙ্কা সত্যি হলে কতটা ভুগবে ভারত? কি বলছেন বিশ্লেষকরা? রাশিয়া ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমীকরণও কি এফেক্টেড হতে পারে? নজরে ভারত-ইইউ ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল যা বলেছেন তাতে চিন্তা বাড়বে বই কমবে না। কেন? ঠিক কি বলেছেন তিনি?
রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল থেকে তৈরি ভারতীয় জ্বালানি আমদানি এবার নিষিদ্ধ করবে ইউরোপ। ভারত রাশিয়া থেকে কেনা তেল পরিশোধন করে তা যেন ইউরোপে বিক্রি করতে না পারে সেই ব্যবস্থাই নেবে ইইউ। হ্যাঁ, অলরেডি এই কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাশিয়া থেকে ভারতের কম দামে তেল কেনার সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানে ইইউ রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে তেলের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আপত্তি করে না, করছেও না। তবে ডিজেল সহ পরিশোধিত জ্বালানি হিসেবে রুশ তেল যেন ইউরোপে বিক্রি না হয় সেটা নিশ্চিত করার সময় এসে গেছে। কিন্তু, রাশিয়ার তেল থেকে তৈরি জ্বালানি বিক্রির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে ভারতকে কতটা ভুগতে হবে? কি বলছেন বিশ্লেষকরা?
এরকম কিছু ঘটলে, তা জাতীয় অর্থনীতিতে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাছাড়া এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের শক্তিশালী সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বড় এফেক্ট ফেলতে পারে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ইউরোপ? পরোক্ষভাবে রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতেই কি এই নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে চাইছে তাঁরা? অথচ, কদিন আগেও কিন্তু পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম ছিল। পরিশোধিত তেল কেনার ক্ষেত্রে ইউরোপের ভরসা ছিল ভারত।
শুরুটা হয়েছিল রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেই। ঠিক সেই সময়, রাশিয়া থেকে তেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ।
অন্যদিকে তেল রফতানির পরিমাণ অব্যাহত রাখতে অশোধিত তেলের দাম কমিয়ে দেয় রাশিয়া। বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম যখন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী, সেই সময় পশ্চিমা দেশগুলোর আপত্তি অগ্রাহ্য করেই রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা চালিয়ে যায় ভারত। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য তো বটেই, বিদেশেও এই তেল রফতানি করার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপের দেশগুলো তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের উপর এতটাই নির্ভর হয়ে পড়েছিল যে, দিনে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল ভারত থেকে রফতানি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্কটটা উভমুখী। রুশ তেলের অভাব পূরণের জন্য তারা যেমন বিকল্প তেল রফতানিকারী দেশের সন্ধান করছে, তেমনই রাশিয়ার দামে অপরিশোধিত তেল কেনার জন্যও তারা উদ্যোগী। আর, ইউরোপের কাছে দু’টো সমস্যারই সমাধান হয়ে উঠেছিল ভারত সেই সময়, ভারত কম দামে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনে তা পরিশোধিত করে বেশি দামে জ্বালানি সঙ্কটে ভোগা ইউরোপে রফতানি করার সিদ্ধান্ত নেয় অবশ্যই এতে ভারতের বিরাট মুনাফা হয়। কিছুদিন আগে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ঋণদাতা ব্যাংক অব বরোদা এক রিপোর্টে জানায়, রাশিয়া থেকে ভারতে তেল আমদানির পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। হিসেবটা শুনলেই বুঝবেন। ২০২১ সালে ভারত বছরে যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছিল, তার মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ ছিল রাশিয়ার তেল। আর বর্তমানে সেই হার প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়ে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত প্রায় ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করেছে। মানে আন্দাজ করতে পারছেন তো গ্রাফটা তড়তড়িয়ে কোথা থেকে কোথায় উঠে গেছে।
অথচ এরমধ্যেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ইউরোপ যে পথে হাঁটতে চলেছে, তাতে ভারতের জন্য বিশেষ আশার আলো দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে জয়শঙ্কর ভারত-ইইউ ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকের জন্য ব্রাসেলসে রয়েছেন। সেখানেই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আলোচনার সময় বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। তাই, আপাতত নয়াদিল্লির নজর সেদিকেই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম