মুর্ছা পাহাড় থেকে ভেসে এল তোপধ্বনি! শুরু হলো মল্ল বংশের ঐতিহ্যময় পুজো!

।। প্রথম কলকাতা ।।

মুর্ছা পাহাড় থেকে পর পর ভেসে এল তোপধ্বনি। ঢোল আর সানাইয়ের মিলিত নহবতের শব্দে মল্ল কূলদেবী মৃন্ময়ীর মন্দিরে পা রাখলেন ‘বড় ঠাকরুন’! ১,০২৭ বছরের প্রাচীন রীতি মেনে পুজো শুরুর ১০ দিন আগেই বিষ্ণুপুরের মল্ল কূলদেবীর মন্দিরে মহা সমারোহে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজা। কামানের নির্ঘোষ মল্লভূম জুড়ে ঘোষণা করল আগমনী বার্তা। এ রাজ্যের প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের কুলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। রাজপরিবারের বংশধরদের দাবি, চলতি বছর এই পুজো পা রাখল ১,০২৭ বছরে। প্রাচীন মল্ল রাজত্বের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে দেবী মৃন্ময়ীর ইতিহাস। এক সময় মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল বাঁকুড়ারই জয়পুর ব্লকের প্রদ্যুম্নপুর গড়ে। জনশ্রুতি আছে , ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের কোনও এক সময় তৎকালীন মল্লরাজা জগৎমল্ল শিকারে বেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘন জঙ্গলে ঢাকা বিষ্ণুপুরে। একটি বটগাছের ছায়ায় ক্লান্ত ও অবসন্ন জগৎমল্ল ঘুমিয়ে পড়েন। এই সময় বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকান্ডের সাক্ষী হন তিনি।

কথিত আছে সেই সময়েই দেবী মৃন্ময়ী রাজার সামনে আবির্ভূত হয়ে বটগাছের পাশে মন্দির প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরের নির্দেশও দেন দেবী। সেই নির্দেশ মেনে রাজা জগৎমল্ল জঙ্গল কেটে বিষ্ণুপুরের সেই স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন মৃন্ময়ী মন্দির। পাশেই তৈরি করেন রাজপ্রাসাদ। প্রদ্যুম্নপুর থেকে রাজধানী সরিয়ে আনা হয় বিষ্ণুপুরে। রাজ কুলদেবী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত মৃন্ময়ীর মন্দিরে শুরু হয় দুর্গাপুজা। এক সময় মল্ল রাজারা শাক্ত ছিলেন। ফলে দেবীর পুজো হত তন্ত্র মতে। সে সময় নাকি হত নরবলিও! ষোড়শ শতকে রাজা বীর হাম্বির শ্রীনিবাস আচার্যর সান্নিধ্যে এসে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। বৈষ্ণব ধর্মকে মল্ল রাজত্বে ‘রাজধর্ম’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই নরবলি বন্ধ হয়। শুরু হয় সঙ্গীতের অষ্টরাগে দেবী আরাধনা ।

এখন সেই মল্ল রাজারাও নেই, নেই রাজ্যপাটও। কিন্তু ভাঙ্গাচোরা রাজবাড়ির দেওয়ালে কান পাতলে আজও যেন শোনা যায় মল্লরাজাদের অতিসমৃদ্ধ ইতিহাসের পদধ্বনি। প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্য মেনে ‘পট পুজো’ই এখানকার বৈশিষ্ট্য। দেবী পক্ষের চতুর্থীর দিন থেকে রাজপরিবারের মেজ ঠাকরুন অর্থাৎ দেবী সরস্বতী ও সপ্তমীর দিন থেকে ছোটো ঠাকরুন অর্থাৎ দেবী মহাকালীর পুজো শুরু হয়। বড়, মেজো ও ছোটো ঠাকরুন এই তিনজনই দেবী মহামায়ার রুপ হিসেবে মল্লরাজাদের হস্ত লিখিত বলীনারায়নী পুথি অনুযায়ী পূজিতা হন।

অতীতের আড়ম্বর না থাকলেও পুজোর আচার, আচরণে, নিয়মে বা ঐতিহ্যে ভাঁটা পড়েনি এতটুকুও। পুরনো রীতি মেনেই রাজপরিবারে ঠাকুর দালানে দেবীর পুজোর আয়োজন করেন এই পরিবারের সদস্যরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version