বর্ধমানের মা সর্বমঙ্গলা ভীষণ জাগ্রত! সাধারণ এক পাথরে বাস করছেন দেবী

।। প্রথম কলকাতা ।।

বর্ধমানের রাজপরিবারে মা দুর্গা পূজিতা হন সর্বমঙ্গলা রূপে। জাগ্রত মায়ের পুজো শুরু হয়ে যায় প্রতিপদ থেকেই
নবমীতে ৯ টি রূপে পূজিত হন দেবী। রাজপরিবারে পুজোর চারদিন আর কী কী নিয়ম মানা হয়? বাগদিরা পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি শিলামূর্তি পেয়েছিলেন। সেটিকে সাধারণ পাথর ভেবে তার উপরে শামুক–গুগলি থেঁতো করতেন তারা। শামুকের খোলা নেওয়ার সময় শিলামূর্তিটি চলে যায় চুন ভাটায়। তখন শামুকের খোলের সঙ্গে শিলামূর্তিটি পোড়ানো হয়। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে সেই সময় শিলামূর্তিটির কোনও ক্ষতি হয়নি। আসলে ওই পাথরে যে মা দুর্গার বাস।

বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবি। পরে বাড়ির বউ হিসেবে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন পরিবারে নানা সংস্কৃতি, লোকাচারের মিশেল হয়েছে এখানে। প্রতিবার প্রতিপদে শুরু হয় মা সর্বমঙ্গলার পুজো। কৃষ্ণসায়র থেকে আচার মেনে জল ভরা হয়। এরপর হয় ঘটস্থাপন। বহু প্রাচীন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসেবেই মানেন গোটা পূর্ব বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা।

রোজ দেবী পুজো পেলেও দুর্গাপুজোয় বিশেষ পুজোর আয়োজন করে রাজপরিবার। প্রতিদিনই নিয়ম মেনে দেবী সর্বমঙ্গলার পুজা চলে। দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। এখানে দেবীমূর্তি কষ্টিপাথরের। অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী। আগে সন্ধিপুজোয় কামান দাগার রীতি ছিল যা এখন আর নেই। পুজোর দিনগুলিতে রাজবেশ ও দামী গয়নায় সাজিয়ে তোলা হয় সর্বমঙ্গলাকে। শোনা যায়ৎরাজা তেজচাঁদের আমলে এই মন্দির নির্মাণ হয়েছিল। মন্দির ঘিরে অনেক কাহিনী রয়েছে। সব কটি উৎসব রাজ-আমল থেকে পালিত হয়ে আসছে।

১৭০২ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়ে চুনুরীদের কাছে থাকায় দামোদর নদের পার থেকে দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তি উদ্ধার করেন বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ। তার পর এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী মা সর্বমঙ্গলা। এখন মন্দিরে ঢুকতে গেলে দেখা যাবে প্রবেশ পথে তিনটি স্তরে পোড়া মাটির মূর্তি রয়েছে। মুল মন্দিরের সামনে নাট মন্দির। দক্ষিনের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে দুধারে দুটি শিব মন্দির রয়েছে। পায়েস, পোলাও ও মাছের টক সহ নানা পদ দিয়ে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। পুজো, মঙ্গলারতির মাঝেই চারবেলা চলে ভোগ। এসবের মধ্যেও পুজোয় আড়ম্বর থাকে দ্বিগুণ। মালসাভোগ নিতে ভক্তরা ভিড় করেন। নিয়ম মেনে এখানে নব কুমারী পুজো হয়।দিন পেরিয়েছে। তবুও রীতি মেনে এখনও পুজো হয় মা সর্বমঙ্গলার। ধুমধাম করেই পুজোর আয়োজন হয় বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version