দাঁত ভাঙা অঙ্ক জলভাত, মাথা কাজ করে কম্পিউটারের মতো! এই বাঙালি বউকে চেনেন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

প্রথাগত পড়াশোনা ছাড়াই যে কোনও জটিল অঙ্ক তাঁর কাছে ছিল জলভাত। মাথা যেন হার মানায় কম্পিউটারকেও। নম্বরের ভেলকিতে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছেন বারে বারে। হাতে গুনে নয়, মনে মনে হিসেব করতেন কম্পিউটারের গতিতে। মানব কম্পিউটার আখ্যা পাওয়া এই বাঙালি বাড়ির বউকে চেনেন আপনি? তাঁর কথা যত শুনবেন আশ্চর্য হবেন ততই। তিনি শকুন্তলা দেবী। গোটা বিশ্ব এখনও তাঁকে মনে রেখেছে অপার বিস্ময়ে। কীভাবে ঝড়ের গতিতে কঠিন অঙ্ক জল ভাত করে ফেলতেন? স্কুল কলেজে সেভাবে পড়াশোনা ছাড়া তা কি করে সম্ভব! কোন সিক্রেটে শিখলেন নম্বরের ভেলকি!

সময়টা ১৯২৯। বেঙ্গালুরুর এক রক্ষণশীল হিন্দু পরিবারের জন্ম শকুন্তলা দেবীর। ঘরের প্রতি খুব একটা মায়া ছিল না। বাইরে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসতেন। শেখার তাগিদ ছিল প্রচন্ড। ছোটবেলাতেই মনে রাখার ক্ষমতায় টেক্কা দিতেন বাবাকেও। তাঁর বাবা ছিলেন সার্কাসের নাম করা খেলোয়াড়। সার্কাসের তাঁবুতে একরত্তি শকুন্তলা নিজের আয়ত্তে আনেন প্রচুর ম্যাজিক। শিখে নেন নম্বরের ভেলকি। মুখে মুখে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করে ফেলা কোন ব্যাপারই ছিল না। অথচ বয়স তখন মাত্র ৫। আঙুলে অঙ্ক কষা যেন তার ধাতে নেই। বাবা তাই ছোট্ট মেয়েকে আদর করে ডাকতেন ক্যালকুলেটর। সেই নামেই মেনে নেয় গোটা বিশ্ব। আস্তে আস্তে নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা ব্যাঙ্গালুর জুড়ে। তারপর দেশের গণ্ডি পেরিয়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। মাত্র ছয় বছর বয়সে ১৮ বছরের ছাত্রের অঙ্ক কষে দিয়েছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক স্তরে পেয়েছেন খ্যাতি।

তারপর ঘুরেছেন গোটা বিশ্ব। হংকং, জাপান, শ্রীলঙ্কা, ইতালি, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখিয়েছেন নিজের ট্যালেন্ট। দেখে হতবাক নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসররা। তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্বব্যাপী শুরু হয় প্রদর্শন। এমনকি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক তাঁর উপর গবেষণা করেন। গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে শকুন্তলা দেবীর নাম ওঠে মানব কম্পিউটার নামে। আবার অনেকেই তাঁকে বলেন হিউম্যান ক্যালকুলেটর। বিয়ে করেছেন কলকাতার আইএস অফিসার পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অল্পদিনেই রপ্ত করে নিয়েছিলেন বাঙালি পরিবারের সমস্ত আদব-কায়দা।

যে অঙ্ক দেখে বহু পড়ুয়া ভয় পায়, সেই অঙ্কই তার কাছে ছিল বাঁয়ে হাত কা খেল। অথচ ছিলনা পোক্ত প্রথাগত শিক্ষা। কি আশ্চর্য না! কয়েক বছর আগেই শকুন্তলা দেবীর জীবন নিয়ে সিনেমা তৈরি করেছেন চিত্র পরিচালক অনু মেনন। যেখানে মূল ভূমিকায় ছিলেন বিদ্যা বালান।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version