কালো দুর্গার পুজো! স্বপ্নাদেশে মা বলেন, মুখের রং কালো করেই আমার পুজো কর

।। প্রথম কলকাতা ।।

কখনও শুনেছেন মা দুর্গার গায়ের রং কালো? মায়ের ইচ্ছাতেই নাকি তাঁর এমন রূপে পুজো হয় এখানে। ৪৩৮ বছরের এই পুজো ঘিরে রয়েছে নানা রকম অদ্ভুত নিয়ম। অথচ প্রথমে ছিল দেবীর একদম অন্যরূপ। কেন প্রতিমার রঙে বদল এল? বাংলার এই পুজোর ইতিহাস জানুন। ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য পরিবারের পূর্বপুরুষরা এই পুজো শুরু করেছিলেন। এই পুজোর জন্মভূমি বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের পাইনখাড়া গ্রামে। প্রথমে মা পূজিত হতেন গৌর বর্ণা রূপেই। তবে মায়ের এই বিশেষ রূপের পুজো শুরু ২২০ বছর আগে।

দুর্গা মণ্ডপের পাশেই ছিল মা মনসা মন্দির। ঠাকুরমশাই আগে মনসা পুজো করে, তারপর করতেন দুর্গা পুজো। একদিন মনসা পুজো করে তিনি যাচ্ছিলেন দুর্গা পুজো করতে। হঠাৎ একটি কাক মনসা মন্দির থেকে জ্বলন্ত প্রদীপের সলতে নিয়ে উড়ে যায়। আর সেই সলতে গিয়ে পড়ে দুর্গা মন্দিরের। শণের চালের উপর। জ্বলে যায় মন্দির এবং সাথে মায়ের মূর্তি। এই ঘটনার পর পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ির লোকজন কিন্তু এই সময়ে বাড়ির গৃহ কর্তা রামাকান্ত ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পান মা স্বপ্নে জানান কোনও ভাবেই পুজো বন্ধ করা যাবে না। তবে তাঁর মুখের রং কালো করতে হবে, গায়ের রং হবে বাদামি।
এই রূপেই মা পূজিত হতে চান। তারপর থেকেই সেইভাবেই পুজো চলছে।

যে কাঠামোয় মাকে গড়া হয় সেই কাঠামো বিসর্জনের তিনদিন পরে জল থেকে তুলে রাখা হয়, পরের বছরে একই কাঠামোয় আবার পূজা হয়। দেশ যখন ভাগ হয় তখন বাংলাদেশ থেকে ভট্টাচার্য পরিবার নদীপথে বাংলার ক্যানিংয়ে চলে আসে, সঙ্গে আনেন মায়ের সেই কাঠামো। মহানবমীতে আতপ চাল দিয়ে কাল্পনিক মানুষের মূর্তি বানিয়ে তাকে বধ করা হয়। বর্তমান বংশধরেরা কাজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। আগের মতো জাঁকজমক আর নেই। তবে ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য পরিবার নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গেই আজও করে চলেছে পুজোটি।

শুধু ক্যানিং এলাকার নয়, আশপাশের এলাকা সহ দূর দূরান্ত থেকে এই বাড়ির প্রতিমা দর্শন করতে বহু মানুষ আসেন এখানে। আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির তুলনায় এই ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। মায়ের এই রূপের টানেই পুজোর চারদিন বহু মানুষ পুজো দিতে আসেন। ভক্তিভরে আরাধনা করলে মা আপনার কথা শুনবেনই। এমনটাই স্থানীয়দের বিশ্বাস। দুর্ঘটনা তার জেরে পুড়ে গিয়েছিল ত্রিনয়নীর মুখখানি। দেবীর রোষের মুখে পড়তে হবে। এই ধারণার বশে দশভুজার আরাধনা বন্ধ রেখেছিলেন প্রবীণরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version