Sri Lanka: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেউলিয়া শ্রীলঙ্কা, মজবুত হচ্ছে অর্থনীতি! কোন জাদুতে বাজিমাত করল?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Sri Lanka: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেউলিয়া শ্রীলঙ্কা! পাশে ভারত বাংলাদেশ জাপান সহ একাধিক রাষ্ট্র। শূন্য থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ানো মুখের কথা নয়, শ্রীলঙ্কা বদলে ফেলেছে নিজের স্ট্র্যাটেজি। ভরসা নেই চীনের উপর। শক্তিশালী করছে পর্যটন খাতকে, কমাচ্ছে ব্যয়। টার্গেট এখন বৈদেশিক মুদ্রা।

শ্রীলঙ্কা দেখিয়ে দিয়েছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। চিনা ঋণের ফাঁদে থেকেও একটু একটু করে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। যে দেশকে নিয়ে একসময় বিশ্ব জুড়ে দেউলিয়া দেউলিয়া রব উঠেছিল, আজ সেই শ্রীলঙ্কা পাচ্ছে প্রশংসা। ২০২২ সালে অক্টোবরে দেশটির মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৭০.৬ শতাংশে, ওই একই বছরে এক মাসের ব্যবধানে নভেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় ৬৫ শতাংশে। টানা এক বছর শ্রীলঙ্কার মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। সেই সময় দাঁড়িয়ে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ শ্রীলঙ্কার গভর্নর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ২০২৩ এর শেষ নাগাদ দেশটির মূল্যস্ফীতি মাত্র চার থেকে পাঁচ শতাংশে নেমে আসবে। সেই দিন হয়ত বেশি দূরে নেই।

শ্রীলঙ্কাকে আবার শক্ত করতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকটি রাষ্ট্র, এই সাহায্য না পেলে শ্রীলঙ্কা এত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারত না। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত বাংলাদেশ জাপান সহ বহু রাষ্ট্র।

ভারত
পড়শি দেশের দুর্দিনে মুখ ঘুরিয়ে থাকেনি ভারত। শ্রীলঙ্কার চরম বিপদে জাহাজ ভর্তি পণ্য সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছে। শ্রীলঙ্কাকে ঋণ পুনর্গঠনে আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় জানান, ভারত দেশটির সঙ্গে জ্বালানি, পর্যটন ও পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগে বেশ আগ্রহী। ২০২৩ এর ১৬ই জানুয়ারি শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে ভারত সরকার চিঠি পাঠিয়েছে আইএমএফকে। যেখানে অর্থ যোগানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনে সহায়তা করতে প্রথমে এগিয়ে এসেছে নয়া দিল্লি।

জাপান
ভারতের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে কিছুটা ভূমিকা রয়েছে জাপানের। শ্রীলঙ্কার চরম বিপদে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণদাতাদের এক টেবিলে বসাতে চেয়েছিল জাপান। যদিও সেই সময় অন্য দেশগুলোর তরফ থেকে এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। জাপানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যে বৈঠকের কথা বলা হয় সেখানে শীর্ষ ঋণ দাতা চীন যোগ দেবে কিনা সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় ছিল প্রায় ৯৭ বিলিয়ন অর্থাৎ ৯৭০০ কোটি ডলার। যার মধ্যে জাপান, চীন, ভারত, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া দ্বিপাক্ষিক ঋণের পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নেওয়া সার্বভৌম ঋণ। জাপান এখনো শ্রীলঙ্কার ঋণ সংকট সমাধানে ব্যাপকভাবে আগ্রহী।

বাংলাদেশ
ঢাকা ও কলম্বোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিদায়ী হাইকমিশনারের একটি বৈঠক হয়। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য, ওষুধ, সামুদ্রিক যোগাযোগ ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও জানান, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেয়। দুই দেশের মধ্যে এক ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে। শ্রীলঙ্কার সংকটের সময় বাংলাদেশ প্রায় কুড়ি কোটি টাকার ওষুধের সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধে প্রায় এক বছরের সময় দেয় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। ২০২১ সালে ৩ মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধের শর্তে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি চরমে থাকায়, সেই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।

সোজা কথায় বলতে গেলে, শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানো একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ। সময় সাপেক্ষ। ২০২২ এর শুরু থেকে শ্রীলঙ্কার মানুষ অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ সময় পার করে এসেছে। এখন দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শ্রীলঙ্কার মানুষ সংগ্রাম করে চলেছে। এখনো পর্যন্ত জীবন যাত্রার ব্যয় অসহনীয়। তরতরিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ক্ষেত্রেও অর্থ সংকট রয়েছে। তবে দেশটির সরকার ব্যয় সংকোচনের জন্য নানান পরিকল্পনা করেছে। সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে আনারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় ৩ লক্ষ ১৭ হাজার সেনার বিশাল বাহিনীর প্রায় তিনভাগের এক ভাগ কমিয়ে ১ লক্ষ ৩৫ হাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানোর জন্য। খাদ্য নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে শ্রীলঙ্কা জোর দিয়েছে কৃষি এবং ভ্রমণ খাতে। দেশটি বারংবার আইএমএফ এর সাহায্য চাইছে। এই সময় শ্রীলঙ্কার ঋণ সহায়তা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। অপরদিকে দেশটিকে ধীরে ধীরে সুদ পরিশোধ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিজের পায়ে বেশি ভরসা করছে শ্রীলঙ্কা। তাই দ্রুত সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাত। এটা শ্রীলঙ্কার জন্য বিরাট সুখবর। শ্রীলঙ্কা প্রতিবছর যত পরিমাণে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে তার অন্যতম খাত পর্যটন। ২০২১ সালে দেশটিতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৯৪ হাজার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লক্ষ ১৯ হাজারে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া, ভারত ও যুক্তরাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক পেয়েছে। শ্রীলঙ্কার জিডিপি প্রায় ১২ শতাংশ আসে এই পর্যটন খাত থেকে। ২০২২ সালে এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে শ্রীলঙ্কার আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭০ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, ২০২৩ সালে পর্যটন খাত থেকে শ্রীলঙ্কা আয় করবে প্রায় ২৩০ কোটি ডলার। পর্যটন খাতে আয় বাড়াতে শ্রীলঙ্কার মাল্টিপল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসা ৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এটি প্রযোজ্য হবে প্রায় ৩৫ টি দেশের জন্য। এর মাধ্যমে পর্যটকরা প্রায় ছয় মাস শ্রীলঙ্কায় থাকতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে, দেশটির পর্যটন শক্তিশালী হলে অর্থনীতিও ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াবে। ঋণের বোঝা কাটিয়ে আবার ফিরে আসবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। যদিও অর্থনৈতিক হাল ফেরাতে শুধু পর্যটন নয়, শ্রীলঙ্কাকে বহুমুখী খাতে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version