।। প্রথম কলকাতা ।।
বাংলাদেশের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে রয়েছে স্পেশাল হাতিয়ার। সিক্রেটটা হল বস্ত্র শিল্প। যার সাহায্যে আজ বাংলাদেশ খাচ্ছে ভারতের চাকরি। ZARA , LEVIS, H & M এর মতো প্রচুর বড় বড় কোম্পানি কাপড় বানানোর জন্য পছন্দ করছে বাংলাদেশকে। এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর, কিন্তু ভারতের জন্য নয়। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের থেকে ভারত কিন্তু অনেক অনেক এগিয়ে। কিন্তু যখন বস্ত্র শিল্পের রপ্তানির প্রসঙ্গ আসে, তখন ভারতকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু কীভাবে? বাংলাদেশের এই সিক্রেট ফ্যাক্ট গুলো হয়ত আপনার জানা নেই।
আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, আমরা বাংলাদেশের কথা কেন বলছি? এখানে কিন্তু বিন্দুমাত্র ভারতের সমালোচনা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের সাকসেস স্টোরির কিছুটা অংশের কথা। কয়েক বছর আগে, করোনা মহামারীর কারণে একটা খবর ভীষণ চর্চায় আসে। বাংলাদেশের জিডিপি পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারতের জিডিপিকে। এটা বাংলাদেশের কাছে স্থায়ী সাকসেস ছিল না, কারণ পরের বছরই ভারতের জিডিপি বাউন্স ব্যাক করে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ স্থায়ী ভাবে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্ববাণিজ্যে মাত্র ৩ শতাংশ বিনিয়োগ করে, আর বাংলাদেশ করে ৬ শতাংশ, মানে ভারতের ডবল।
সময়টা ১৯ শতক, তখন কলকাতায় কটন মিল তৈরি হচ্ছে। ব্রিটিশ জমানায় কানপুর ফরিদাবাদ আহমেদাবাদ মুম্বাই সহ বেশ কয়েকটা শহরকে বলা হত ম্যানচেস্টার অফ দ্য ইস্ট। সেই সময় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ দেশ ভাগের আগে আজকের বাংলাদেশ ছিল মসলিনের জন্য ফেমাস। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের দৌরাত্ম্যে বস্ত্র শিল্প ধ্বংস হতে থাকে। সেই সময় ভারতের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভব হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে। যার শুরুটা হয় ১৯৭৪ সালে মাল্টিফাইবার এগ্রিমেন্টের দ্বারা। এই এগ্রিমেন্টে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর কিছু লিমিটেশন চাপিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে উন্নয়নশীল দেশ একটা উন্নত দেশকে নির্দিষ্ট পরিমাণে রপ্তানি করতে পারবে। কিন্তু শর্ত ছিল না বাংলাদেশের উপর। তখন বাংলাদেশ সবেমাত্র স্বাধীনতা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের গণ্ডির কাছেও পৌঁছায়নি। এই সুযোগে সাউথ কোরিয়ার কোম্পানি ডাইউ বাংলাদেশের ‘ দেশ ‘ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। যেখানে তারা বাংলাদেশে কাপড় বানাবে এবং তা এক্সপোর্ট করবে। তার জন্য বাংলাদেশের বহু মানুষকে ট্রেনিংও দেয়া হয়। পরবর্তীকালে সেই ট্রেনিং প্রাপ্ত বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের দেশে কোম্পানি খোলে । ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রপ্তানির পরিমাণ।
১৯৮১ সালে বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি ছিল ৩.৫ মিলিয়ন। ২০০৭ সালে তা মিলিয়ন নয়, দাঁড়ায় বিলিয়নে, প্রায় ১০.৭ বিলিয়ন ডলারে। পার্থক্যটা ভাবতে পারছেন! এটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে একমাত্র কোটা সিস্টেমের কারণে। কারণ ভারত সহ বহু দেশের উপর যে লিমিটেশন ছিল সেই লিমিটেশন ছিল না বাংলাদেশের উপর। তারপর ১৯৯৫ এর পর আমেরিকা হঠাৎ বাংলাদেশ দেশকে ‘লিস্ট ডেভেলপিং নেশন’ ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়। এটা ছিল বাংলাদেশের কাছে জ্যাকপটের মতো। জিএসপির আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি হয়ে যায় ট্যাক্স ফ্রি। বাংলাদেশের কাপড় হয় আরও সস্তা। এইভাবে বিভিন্ন দেশের মাটিতে আজ পাওয়া যাচ্ছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কাপড়।
তাহলে এখানে ভারতের অবস্থানটা কোথায়? ২০২২ এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ এর মার্চের মধ্যে ভারতের বস্ত্র রপ্তানি হয়েছে ১৬ বিলিয়ান ডলার, আর সেই জায়গায় দাড়িয়ে বাংলাদেশ জুলাই২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৩ এর মধ্যে রপ্তানি করেছে ৩৮.৫৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভারত পিছিয়ে কেন? ভারত অনেকটা বড় দেশ। কাঁচা মাল ফ্যাক্টরি থেকে পৌঁছাতে তারপর তা বাজারজাত করতে প্রচুর সময় লাগে। কিন্তু বাংলাদেশ ছোট্ট একটা দেশ। একদিনেই সবটা হয়ে যায়। বাংলাদেশ তাই পোশাক শিল্পকে স্ট্র্যাটেজিকালি ডিজাইন করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে যা সম্ভব নয়। ভারতের সাপ্লাই চেইন আর লজিস্টিক কস্টে চলে যায় জিডিপির প্রায় ১৪ শতাংশ । বাংলাদেশের কিছু কিছু অসুবিধা সব থেকে বড় সুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত তিন বছরে ভারত বস্ত্র শিল্পে প্রচুর উন্নতি করেছে, কিন্তু দেশের জনসংখ্যা প্রচুর হওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদাও প্রচুর। তাই রপ্তানি করা সেভাবে হয়ে ওঠে না। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা এক্কেবারে বিপরীত।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম