‘বাংলাদেশের মায়ের পুজো’ এক বেদীতে মা মনসা-দুর্গা! গায়ে কাঁটা দেয়

।। প্রথম কলকাতা ।।

ভারতের পুজোর দালানে বাংলাদেশের হাওয়া। দেশভাগের জ্বালা ভোলায় এই পুজো। মিলেমিশে একা একাকার ওপার বাংলার আবেগ। পুজোর আগে গাছের তলায় ছড়িয়ে থাকত মোহর। একই আসনে পূজিতা হন দেবী দুর্গা ও মনসা। এখানে কান পাতলে শোনা যায়, বাংলার প্রাণের সুর। অনুভব করতে পারবেন পদ্মার ঢেউয়ের স্পন্দন। দুই বাংলাকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে বীরভূমের বসাক বাড়ির পুজো। ‘বাংলাদেশের মায়ের পুজো’য় রয়েছে আশ্চর্য নিয়ম। জানলেই গায়ে কাঁটা দেয়।

দুর্গাপুজোয় দুই বাংলার একাত্মার হদিশ মেলে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বসাক বাড়ির দুর্গাপুজোয়। শুরুটা কিন্তু হয়েছিল বাংলাদেশে। যদিও তখন একটাই দেশ ছিল। বছরের পর বছর সেই ঐতিহ্য টিকিয়ে আসছে সিউড়ির বসাক বাড়ি। দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে বাংলাদেশের ধামরাই গ্রাম থেকে দুর্গা মায়ের পুজো নিয়ে সিউড়িতে চলে আসে বসাক পরিবার। এই বাড়ির পুজো মানুষের কাছে ‘বাংলাদেশের মায়ের পুজো ‘নামে পরিচিত। বাংলাদেশের পুজোর ঘট থাকে বেদির নিচে। জানলে আশ্চর্য হবেন, এই পুজোতে এক বেদিতে থাকেন দুর্গা এবং মনসা। সাথে থাকে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী এবং সরস্বতী। পঞ্চমীর দিন রীতিমত ধুমধাম করে মা মনসার পুজো হয়।

কথিত আছে, মোহর বিক্রি করে এই পুজোর খরচা উঠত। সেই মোহর আসত ভীষণ ইন্টারেস্টিং ভাবে। যামিনী কান্ত বসাকের বাংলাদেশে ছিল নিজস্ব বাড়ি। ছিল সুন্দর নাটমন্দির। ওই মন্দিরের পাশে ছিল একটা বড় পুকুর। আর সেই পুকুরের পাশে গাছের তলাতেই ছিলেন নাকি মা মনসা। প্রতিবছর দুর্গা পুজোর খরচ সবই দিতেন তিনি। সেটা কীভাবে? ওই গাছের তলাতে পুজোর আগে গেলেই পাওয়া যেত পুজোর বাসন-কোসন থেকে শুরু করে মোহর। গাছের তলায় পড়ে থাকত। সেই মোহর বিক্রি মিলত পুজোর খরচ। কিন্তু এখন সেটা পাওয়া যায় না। সেটা নিয়েও রয়েছে আর এক আশ্চর্য গল্প। শোনা যায়, একবার পুজোর বাসন যথাস্থানে রেখে আসা হয়নি। উপরন্তু তুলে নেওয়া হয়েছিল বেশি মোহর। পরের বছর থেকে গাছের তলায় আর মোহর পাওয়া যায়নি। তারপরেই ভাগ হয়ে যায় দেশ। ওপার বাংলার পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে চলে আসেন এপার বাংলা। তারপর থেকে এখানেই প্রতিবছর নিয়ম করে দুর্গার আরাধনা করার হয়। তবে নিয়মের ক্ষেত্রে বেশ অনেকগুলো বৈচিত্র্য। পুজোর যাবতীয় আচার থেকে শুরু করে জিনিস বানান পরিবারের সদস্যরা। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর আয়োজনও করেন বাড়ির সদস্যরাই।

নয় নয় করে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। এই পুজোর সূচনা করেছিলেন যামিনী কান্ত বসাক। দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন সবই হয় ওপার বাংলার নিয়মে। পঞ্চমীর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় আরাধনা পর্ব। তবে বদলে গেছে মায়ের মৃন্ময়ী রূপ। দুর্গা প্রতিমার বদলে আরাধনা করা হয় ধাতুর মূর্তিকে। এই পুজোয় কোন বলি নয়, বৈষ্ণব মতে হয় আরাধনা। নবমীতে হয় মহাযজ্ঞ। দশমীতে ঘট বিসর্জন। মা দুর্গার প্রসাদের পাশাপাশি মনসার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয় দুধ কলা। পুজোর দিনগুলোতে উপস্থিত থাকেন ওপার বাংলার আত্মীয়রা। পুজো প্রাঙ্গণে মিলেমিশে এক হয়ে যায় দুই বাংলা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version