।। প্রথম কলকাতা ।।
Putul Nach: মঞ্চে নেচে নেচে অভিনয় করছে তারা। হাত পা নাড়াচ্ছে মানুষের মতোই। আনন্দে নাচছে কোমর দুলিয়ে। সুতোয় বাঁধা সকলেই। আড়াল থেকে নাচানো হচ্ছে তাদের। পুতুল নাচ। এক সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল প্রবল। পুতুল নাচ ছিল যে কোনও মেলার মুখ্য আকর্ষণ। আজও অনেকের কাছে পুতুল নাচ নস্টালজিয়ার আর এক নাম।পুতুল নাচের কথা বললেই অনেক বয়স্কের চোখ চিকচিক করে ওঠে। মনে পড়ে যায় ছোটবেলার সেই দিনগুলির কথা। আজও গ্রাম বাংলার অনেক মেলায় দেখা মেলে পুতুল নাচের। পুতুল নাচ শুধু এই রাজ্যের হারিয়ে যেতে বসা এক সংস্কৃতি নয়। এক সময় পুতুল নাচের কদর ছিল দেশজুড়েই। জানেন কি কোন রাজ্যে পুতুল নাচকে কী নামে ডাকা হয়?
একদিকে বাজছে ঢোল, খঞ্জনি। তার সঙ্গে আঙুলের সাথে জড়ানো সুতোয় আটকে নাচতে থাকা সুসজ্জিত পুতুলগুলি আমাদের কতই না আনন্দ দেয়! এই পুতুলগুলি আসলে কাঠের তৈরি। এখন অবশ্য পুতুল নাচ অনেক আধুনিক হয়েছে। এখন হিন্দি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে দেখা যায় পুতুলদের।
অনেকের মতে, যোধপুরের কাছে নাগৌরে প্রথম এই পুতুলের ধারণা এসেছিল। এটি সেখানকার ভাট সম্প্রদায়ের একটি বিনোদন ছিল। রাজস্থানের পরিবর্তিত জলবায়ু ভাট সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কৃষিকাজ কেড়ে নেয়। তখন সংসার চালানোর জন্য সমাজের লোকেরা কাপড় ও কাঠ দিয়ে পুতুল তৈরি করা শুরু করে। তারা এই পুতুল বিক্রি করতে কবিতা ও গল্পের সাহায্য নিত। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রথমে সেই পুতুল হাতে নাচানো হতো। পরে সুতোয় বেঁধে নাচানো শুরু হয়। তারপর ভাট সম্প্রদায়ের লোকেরা ধীরে ধীরে এটিকে কর্মসংস্থান হিসেবে গ্রহণ করে। শুরু হয় পুতুল নাচ।
এই খেলাটিকে সমাজের উচ্চশ্রেণির মনে জায়গা করে দিতে উদ্যোগী হয় ভাট সম্প্রদায়। সেজন্য পুতুলের মাধ্যমে রাজপরিবারের গল্প এবং রাজস্থানের রাজাদের বীরত্বের গল্প বর্ণনা শুরু হয়। এর ফলে রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা পায় এই লোকশিল্প। ধীরে ধীরে তা দেশজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইতিহাসেরও এই শিল্পের উল্লেখ আছে। এই প্রাচীন শিল্প প্রধানত চার প্রকারের। সুতো কাঠপুতুল, ছায়া কাঠপুতুল, দস্তানা কাঠপুতুল এবং ছড়ি কাঠপুতুল।
অন্ধ্র প্রদেশের পুতুল নাচকে বলা হয় থোলু বোম্মালথা এবং কোয়া বোম্মালথা। রাজস্থান আসামে বলা হয় পুতুল নাচ। বিহারে তার নাম ইয়ামপুরী। কর্ণাটকে বলা হয় গোম্বা আত্তা এবং তোগালু। কেরালার পুতুল নাচকে বলা হয়, ওভা জায়াতগার এবং টোল পাব্বাকুথু। মহারাষ্ট্রে আবার তার নাম কালসূত্রীর আধিপত্য ও চাম্মাদ্যাছে আধিপত্য। ওড়িশায় পুতুল নাচ মানে কান্দি নাচ, রাবানা ছায়া, কাঠি কুন্ডি এবং গোপালীলা কামাধেরি তামিলনাড়ুতে পুতুল নাচকে বলা হয় বোম্মলাত্তম এবং বোম্মালত্তম। পশ্চিমবঙ্গে তা পুতল নাচ, তারের বা সুতার পুতুল এবং বানের পুতুল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম