জীবন্ত রেলগেট ননীদা, ভরসা পান ট্রেনের চালক! হাতের ইশারায় বাঁচাচ্ছেন শত শত প্রাণ

।। প্রথম কলকাতা ।।

লাইন পারাপার করছেন শত শত মানুষ। অথচ নেই রেলগেট। দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে ট্রেন। ভাবতে কেমন বুকটা কেঁপে ওঠে। না ভয়ের কিছু নেই। এই পৃথিবীতে এমনও মানুষ আছেন যারা অন্যের ভালোর জন্য নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে দেন। কখনো রোদে পুড়ে, কখনো বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছেন ননীদা। যেন জীবন্ত রেল গেট। বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্য আর সহানুভূতি ভরা দুটো হাত। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, নদীয়ার বেলডাঙা রেললাইন পারাপারে ননীদাই ভরসা।

নদীয়ার শান্তিপুর বাগদিয়া বাজারের বেলডাঙা মোড়ে রয়েছে বিপ্পজনক রেল রাস্তা। কোন গেট নেই অথচ মানুষ অনায়াসে রেল লাইন পারাপার করতে পারেন। তাই সারাদিন মানুষের নিরাপত্তার গুরু দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন ননীগোপাল দেবনাথ। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তিনি এই কাজই করে আসছেন। লাইনের পাশেই অর্ধেক টালি আর অর্ধেকটা টিনের চালের ঘুপচি দোকানটা তার। সেখানেই সাজিয়েছেন স্বপ্নের চায়ের দোকান। ঘুপচি হলে কি হবে, ভীষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ননীদার হাতের বানানো চা আর কাচের বয়ামে রাখা বিস্কুটে আলাদা তৃপ্তি।

ট্রেন আসার আগেই হাতের কাজ ফেলে লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। কাউকে লাইন পারাপার করতে দেন না। যতক্ষণ না ট্রেন নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রেনের চালকও জানেন ননীদা ঠিক সময় ঠিক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবেন । তাই তিনিও দেখান ভরসার হাত। করোনার আগে চলত চারটি ট্রেন। এখন সারা দিনে চলে দুটো ট্রেন। কিন্তু ননীদার দায়িত্বে কোনো খামতি নেই। কাজটা করেন ভীষণ ভালোবেসে। এর জন্য কিন্তু মাস গেলে মোটা মাইনে পান না। সবটাই তার উদার মনের পরিচয়।

রেললাইনের উপর দিয়ে এই রাস্তাটি চলে গিয়েছে একদম নদীয়ার শেষ সীমান্ত ফতেপুর বাংলাদেশ বর্ডার পর্যন্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীরা যাতে সহজে যাতায়াত করতে পারে, তাই রাস্তাটা তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে এই রাস্তা দিয়ে প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। এলাকাটাও বেশ জনবহুল।

দোকানের সামনে দিয়েই হুশ করে বেরিয়ে যায় শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর ট্রেন। ৮ টা ৪৯ নাগাদ যে একটা ট্রেন আসে, সেই ট্রেনটা ফিরে যায় ৯ টা ৪৫ নাগাদ। ট্রেন আসার আগে কিছুটা কম্পন অনুভব করেন দোকানে থাকা ননীদা, সেই দু কিলোমিটার দূরত্ব আগে থাকতেই ট্রেন হর্ন দেয়। মুহূর্তে দেরি না করে চায়ের কাপ খরিদ্দার ফেলে হন্যে হয়ে ছুটে যান খোলা ক্রসিং এর দিকে। রক্ষা করেন যানবাহন, স্কুল ছাত্র ছাত্রী এবং পথচারীদের। প্রকৃতি যেমনই হোক না, ঝমঝম বৃষ্টি কিংবা কড়া রোদ, ননীদা তার কর্তব্যে অনড়।

এলাকাবাসী বহুদিন ধরেই এখানে একটা গেট নির্মাণের দাবি করে আসছেন। কিন্তু হয়নি। সেই কাজটা দায়িত্ব সহকারে করছেন ননীদা। তিনি কিন্তু এর বিনিময়ে চাকরি কিংবা অন্য কোন সুবিধা দাবি করেননি। বরং রেল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ, রেলের জায়গায় এখন।দোকান করে তার পরিবারের অন্ন সংস্থান হচ্ছে। ননী বাবুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা এলাকা। টানা ২৮ বছর ধরে এই আত্মত্যাগ কি মুখের কথা নাকি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version