Russia-United States: ইরানের পর আফ্রিকা, মাটি হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র! রাশিয়ার চালেই বাজিমাত

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Russia-United States: যখন মধ্যপ্রাচ্যে কোনঠাসা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ঠিক তখন আফ্রিকায় কী হচ্ছে জানেন? সেখানেও মাটি হারাতে চলেছে জো বাইডেনের দেশ। ইরান না হয় শক্তিশালী রাষ্ট্র, কিন্তু আফ্রিকার অধিকাংশ দেশই তো অনুন্নত। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন হাল কেন? রাশিয়ার কোন চালে বাজিমাত ওয়াশিংটন? ছোট ছোট দেশগুলোতেও, সবাই মিলে রুখে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনার বিরুদ্ধে। শেষমেষ তবে কি হার মানতে হচ্ছে দুর্বল কিছু দেশের কাছে? আফ্রিকার বহু দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েন রয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সেই আধিপত্য মানতে চাইছে না। সরাসরি নাকচ করে দিচ্ছে। যার জেরে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার দেশটার পররাষ্ট্রনীতির তাল কাটতে চলেছে আফ্রিকাতেও।

 

আফ্রিকার নাইজার যুক্তরাষ্ট্র নয়, আপন করে নিল রাশিয়াকে

এক পাশে সাহারার ধুধু মরুভূমি। আর অন্যদিকে রয়েছে জঙ্গল। তার মাঝে আফ্রিকার ছোট্ট একটা দেশ নাইজার। সেখানে ঘাঁটি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা আর যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের যেন সহ্য করতে পারছে না। শুধু তাই নয় রাস্তায় বেরিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে রাশিয়ার সৈন্যদের। যদিও শুধু নাইজারই, নয় সারা বিশ্বে প্রায় আশিটি দেশে ৭৫০ টির বেশি ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যার মধ্যে ১২০টির বেশি ঘাঁটি রয়েছে শুধুমাত্র জাপানে। যেখানে অবস্থান করছে ৫৩ হাজারের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য। জাপানের পাশাপাশি তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, পানামা, সৌদি আরব, ইটালি, নরওয়ে, কিউবা, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রচুর দেশ। এই দেশগুলোতে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ এর কম সৈন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। প্রায় ৮০ টি দেশ মিলে যুক্তরাষ্ট্রের পৌনে ২ লক্ষ সেনা রয়েছে। কিন্তু নাইজারে গিয়ে এত বড় সমস্যা হল কেন? কেনই বা সেখানে রাশিয়া খুব সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা কেড়ে নিচ্ছে?

 

আসলে, নাইজারের বাসিন্দাদের আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি এখানে নাকি কিছু সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী বাসিন্দাদের টাকার লোভ দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দেয। আর তারাই গিয়ে নাকি হামলা করে ইউরোপে। আর সেই জঙ্গিদের ছায়া থেকে বাঁচাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তাই সেখানে ঘাঁটি করেছে ওয়াশিংটন। আরেকটা কথা বলে রাখি, হতে পারে নাইজার অনেক অনুন্নত দেশ কিংবা আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া একটা দেশ। কিন্তু দেশটা ইউরেনিয়ামে সমৃদ্ধশীল। ২০২২ সালে প্রায় ২ হাজারের বেশি টন ইউনেরিয়াম উৎপাদন হয়েছিল। বলা হয়, গোটা বিশ্বে উৎপাদিত ইউরেনিয়াম খনিজের ৫ শতাংশ আছে শুধুমাত্র এই দেশে। একটা সময় ফ্রান্স তার দেশের মোট ইউরেনিয়ামের ১৫ শতাংশ আমদানি করত নাইজার থেকে। এছাড়াও দেশটা সোনা আর তেল উৎপাদনের জন্য বেশ বিখ্যাত। কিন্তু ফ্রান্সকে এখানে টিকতে দেয়নি নাইজার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন টিকে গেলেও সেখানেও দেখা দিয়েছে সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, তারা নাইজারে শান্তি ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু নাইজারের সেনারা তা চাইছে না। তারা চাইছে রাশিয়াকে। এখানেই রয়ে গিয়েছে একটা বড় প্রশ্ন। শুধু মাত্র নাইজারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, নাকি রাশিয়া ইউরেনিয়াম বিশাল ভান্ডারের দখল নেয়ার জন্য আফ্রিকার এই দেশটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল। তবে হ্যাঁ, এই দেশের মাটিতে রাশিয়ার কাছে পরোক্ষভাবে হার মানতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

 

নাইজারে যুক্তরাষ্ট্রের করুণ হাল, কারণটা কী?

অবাক লাগলেও এটাই সত্যি, রাশিয়ার কূটনীতির কাছে মাঝে মাঝে প্রায় হারের মুখে পড়ছে পশ্চিমি দুনিয়া। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার থেকে ইতিমধ্যেই নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে, আফ্রিকার ওই দেশটি থেকে প্রায় এক হাজার সৈন্য তারা প্রত্যাহার করে নেবে। যা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে। কিন্তু হঠাৎ এমন হাল কেন? শুধুমাত্র নাইজার নয়, আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে কিন্তু ওয়াশিংটনের এমন চিত্র। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আফ্রিকার দেশগুলো ক্রমশ ঝুঁকছে রাশিয়ার দিকে। আর সেখানে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে ওয়াশিংটন। নাইজারের রাজধানী নিয়ামে থেকে প্রায় ৯২০ কিলোমিটার দূরে মার্কিন সেনারা একটা বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করে আসছিল। যেটা মনুষ্যবাহী এবং মনুষ্যবিহীন নজরদারি ফ্লাইটসহ অন্যান্য অপারেশনের জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সমস্যা বাঁধে, যখন নাইজারে সামরিক শাসন শুরু হয়। তখন থেকে, ওয়াশিংটন ওই স্থানের পরিবর্তে পশ্চিম আফ্রিকার অন্য কোথাও নিজেদের ড্রোন ঘাটি নির্মাণের জন্য আলোচনা করছে। এমনি থেকেই, নাইজারের অভ্যন্তরে চলছে তুমুল গন্ডগোল।

 

দেশটার কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ঠিক সময় ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত, কিছু সামরিক প্রশিক্ষক এবং একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্ক আরো গভীর করা। এই তো গত বছরের কথা, যখন নাইজার থেকে নিজেদের সেনাপ্রত্যহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন মিত্র ফ্রান্স। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশগুলোতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর এমন অবস্থা, পশ্চিমা মিত্রদের জন্য বেশ খারাপ খবর। আবার পশ্চিমি দেশের সমালোচকরা এই খবর শুনে বেশ খুশি। কেউ বা বলছেন সঠিক কাজ হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের নিপাত ঘটছে। আবার কেউবা বলছে, রুশ কৌশলে ধরাশায়ী হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেনারা নাইজারের রাজধানী নিয়ামির কাছে যে ঘাঁটিতে থাকছিল, সেখানে এখন অবস্থান করছে রুশ সেনা। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যে সমস্ত সেনাপ্রত্যহার করা হয়েছে সেই সমস্ত সেনাকে আফ্রিকারই কোন একটা দেশে মোতায়েন করা হবে।

 

তবে কোন দেশে পাঠানো হবে তা এখনো স্পষ্ট করে বলা হয়নি। আসলে মূল সমস্যাটা শুরু হয়েছিল যখন গত বছরে নাইজারের প্রেসিডেন্টকে অবরুদ্ধ করে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নাইজারের প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা। তারপর নাইজারের প্রধান হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখার প্রধান জেনারেল আব্দুর রহমান চিয়ানি। সে সময় ইউরোপের বহু দেশ কিন্তু এই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করলেও, পরোক্ষভাবে সমর্থন জানিয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশ বুরকিনা ফাসো আর মালি। আর অপরদিকে সমর্থন পেয়েছে রাশিয়া আর চীনের। বুঝতে পারছেন, কোথাও গিয়ে যেন পশ্চিমি দুনিয়ার বিরুদ্ধে জোট বাঁধছে আফ্রিকার দেশগুলো। আর সেখানে মদত রয়েছে রাশিয়া চীনের মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর। দেশটার সামরিক শাসকরা তো ঘোষণা করে বলেই দিয়েছে, নাইজারে নাকি মার্কিন সেনার অবস্থান অবৈধ। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের যুক্তরাষ্ট্র নাইজারের সাথে হওয়া সামরিক চুক্তিও বাতিল করে দেয় তারা। এ থেকে স্পষ্ট, আপাতত পশ্চিম আফ্রিকার নাইজার সহ বুরকিনা ফাসো আর মালিতেও কমছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপত্তি।

 

নাইজারের পর চাদের পালা, বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা!

সম্প্রতি আফ্রিকার আরেক দেশ চাদও মার্কিন সেনাদের বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। চাদ সরকার মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে একটা চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে মার্কিন সেনাবাহিনীকে সরাসরি চাদ ছাড়ার নির্দেশ না দিলেও মার্কিন বাহিনীর সকল সদস্যকে এনজামেনায় অবস্থিত ফরাসি ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। যদিও এক মার্কিন কর্মকর্তার মতে, চিঠিটি নাকি স্বীকৃত কূটনৈতিক মাধ্যম থেকে পাঠানো হয়নি। তবে কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, চাদের মাটিতেও তলে তলে বাড়ছে মার্কিন বিরোধিতা। এই মুহূর্তে চাদে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অবস্থান হারানো সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, আফ্রিকার দেশগুলোতে দিনের পর দিন সামরিক অভ্যুত্থানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেন কোন মতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। ১৯৫০ সালের পর থেকে আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ২০০ বারেরও বেশি এইরকম সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ঘটেছে। আর প্রত্যেকটা দেশের মানুষ চাইছে তাদের নিজস্ব নীতিতে চলতে। কোন পরাশক্তির আধিপত্যের কাছে মাথা নত করতে চাইছে না।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version