।। প্রথম কলকাতা ।।
মাটিতে পড়ে ১ টনের দৈত্যাকার বোমা। কখন ফাটবে কেউ জানে না। যে কোন মুহূর্তে কেঁপে উঠবে পুরো দেশ। আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি করছে হাজার হাজার মানুষ। নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানি। না, এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। মহা চিন্তায় জার্মানি। মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর বোমা। যুদ্ধ মিটেছে কবে, কিন্তু এখনও ঘুরপথে শত্রুতা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র! দেশটাকে কোন ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে?
জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরের পরিত্যক্ত এলাকায় উদ্ধার হয়েছে দৈত্যাকার বোমা। ঘর ছাড়া ১৩ হাজার মানুষ। চিড়িয়াখানা নির্মাণের কাজ চলছিল ঠিক তখনই বোমাটি চোখে পড়ে। একবার ভাবুন তো, এক টন ওজনের বোমা যদি একবার বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে প্রলয় ঘটে যাবে। বোমাটির ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা সমস্ত মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকা। বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটা ট্রেন। বন্ধ ট্রাম রাস্তা। সব রাস্তায় গাড়ি ঢুকতেও পারছে না। সবকিছু মিলিয়ে জার্মানিতে এখন হুলস্থুল কাণ্ড। বোমাটি নিষ্ক্রিয় হলে তবেই বিধি নিষেধ তোলা হবে। কখন ফাটবে কেউ জানে না। কাজ করছে চাপা উত্তেজনা। এই বুঝি কিছু হয়ে গেল। এর আগে ২০১৭ সালের ফ্রাঙ্কফুর্টের পরিত্যক্ত স্থান থেকে প্রায় ১.৪ টনের বোম উদ্ধার হয়েছিল। তখন রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় ৬৫ হাজার মানুষকে। ২০২১ সালে মিউনিখ রেল স্টেশনেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহৃত বোমা পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন ৪জন।
কিন্তু কেন? কোন শত্রুতায় জার্মানি এত ভুগছে? যেখানে গোটা বিশ্বজুড়ে বারংবার যুদ্ধ নয় শান্তির কথা বলা হয়, সেখানে বোমা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে জার্মানি। জার্মানিতে এত পরিমাণে অতিকায় বোমা কোথা থেকে আসে এটা জানতে গেলে ফিরে যেতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। প্রায় ৭০ বছর আগে জার্মানির নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্র বাহিনী। কয়েক হাজার যুদ্ধবিমান নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানির দিকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছিল প্রচুর গোলাবারুদ। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মার্কিন এবং ব্রিটিশ বিমান বাহিনী ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২.৭ মিলিয়ন টন বোমা ফেলেছিল। যার অর্ধেকটা ফেলেছিল শুধুমাত্র জার্মানিতে। যার অধিকাংশ এখনো রয়েছে মাটির নিচে। তার মধ্যে কোনোটা বিস্ফোরণ ঘটে, আবার কোনোটা উদ্ধার হয়। মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। বর্তমানে জার্মান সেনাবাহিনীর বিশেষ রোবট রয়েছে। যেটি বোমা নিষ্ক্রিয় করার কাজ করে।
বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের হিসাব নিকাশ। যুদ্ধের শেষে চুক্তি অনুযায়ী এখনো দাবি মিটিয়ে যাচ্ছে জার্মানি। আর কিছু কিছু দেশ ক্ষতিপূরণ এখনো পুরোপুরি দিতে পারেনি। আশ্চর্যের বিষয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়েছিল জার্মানির উপর। কিন্তু ঠিক কতটা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা আজও অস্পষ্ট। ইউরোপ সহ মিত্রশক্তির দেশগুলো নানান সময় ভিন্ন ভিন্ন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে এসেছে। শুধু ক্ষতিপূরণই নয় জার্মানিকে খর্ব করতে হয়েছে নিজের শক্তি। জার্মানির মতো একইভাবে ক্ষতিপূরণের বোঝা বইতে হয়েছে জাপান, ইতালি, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া সহ বেশ কয়েকটা দেশকে। একদিকে ক্ষতিপূরণ, তার উপর বোমা আতঙ্ক, যা জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত ভুলতেই দেয় না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম