Netaji Subhash Chandra Bose: দেশপ্রেম ছাড়া সুভাষের জীবনে জায়গা নিয়েছিল এক বিদেশিনী, জানা আছে তাঁর পরিচয়?

।। প্রথম কলকাতা।।

Netaji Subhash Chandra Bose: স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে মানুষের মনে চিরদিন বেঁচে থাকবেন তিনি। তবে তিনি কি শুধু দেশের স্বাধীনতায় মনোযোগী হয়েছিলেন? নাকি সেইসঙ্গে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছিলেন কোনও মহিলাকে? কে সেই মহিলা, যে নেতাজির (Netaji Subhash Chandra Bose) মনে দেশবাসীর পাশাপাশি নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন? স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন একজন মহান চরিত্র। নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন এই সংগ্রামে। তবে সেইসঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমিক মানুষ ছিলেন নেতাজি। কেউ কি এমিলি শেঙ্কলের নাম শুনেছেন! যদিও এই নাম না শোনারই কথা। কারণ স্কুল-কলেজের পাঠ্য বই থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলা হয়েছে বহুদিন। তবে জানা যায়, ১৯৩৭-এর ২৬ ডিসেম্বর দেশবাসীর সব থেকে পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করে এমন এক দেশকে শ্বশুরবাড়ি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, যা ছিল তাঁর প্রাণ।

নেতাজির সঙ্গে ৭ বছরের বৈবাহিক জীবনে তিন বছর পেয়েছিলেন তাঁকে। এরপর ছোট্ট মেয়ে ও স্ত্রীকে এই কথা দিয়ে উনি বেরিয়ে পড়েন যে, আগে ভারত মাকে ব্রিটিশদের থেকে মুক্ত করে নি, তার পর সারাটা জীবন একসঙ্গে থাকব। কিন্তু তাঁর সেই কথা রাখা আর হয়ে ওঠেনি। দেশকে ইংরেজদের থেকে মুক্ত করতে পারলেও ভারত মাতার সেই পুত্রকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পর দেশের ক্ষমতা চলে যায় নেহরুর হাতে। ওই সময় এমিলির বয়েস খুবই কম ছিল, চাইলেই উনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু উনি সেটা করেন নি। সংঘর্ষ করে নিজের জীবন কাটিয়েছেন। সামান্য বেতনের একটি ক্লার্কের চাকরি করে বড় করেছেন কন্যাকে। কারোর কাছে এই নিয়ে কোনও অভিযোগ জানাননি তিনি, আর না কিছু দাবি করেছেন। শুধু একবারের জন্য ভারতবর্ষে আসতে চেয়েছিলেন, যার জন্য তাঁর স্বামী প্রাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু শোনা যায়, ভারতের ভিসা পান নি তিনি।

এমিলি শেঙ্কলের পুরো নাম ছিল- শ্রীমতি এমিলি শেঙ্কল বসু, যিনি নেতাজির ধরমপত্নী। শোনা যায়, সুভাষ চন্দ্রের বয়স যখন ৩৭ বছর, যখন তাঁর সব ধ্যান-জ্ঞানই ছিল ভারতকে স্বাধীন করার দিকে, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয় মিস শেঙ্কলের। তাঁকে সহকারী হিসেবে কাজে নিয়োগ করেছিলেন সুভাষ। তিনি কখনও ভাবতে পারেননি যে, একজন অস্ট্রিয় যুবতী তাঁর জীবনে ঝড় তুলতে পারবেন। সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভাই শরৎ বসুর (Sarat Bose) নাতি ও প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সুগত বসু নিজের বই ‘হিজ ম্যাজেস্টিজ অপোনেন্ট- সুভাষ চন্দ্র বসু অ্যান্ড ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল এগেইনস্ট এম্পায়ার’-এ লিখেছেন এমিলির সঙ্গে দেখা হওয়ার পরেই পরিবর্তন এসেছিল নেতাজির জীবনে। তার আগে জীবনে প্রেম বা বিয়ে সংক্রান্ত বেশ অনেক প্রস্তাবই পেয়েছিলেন সুভাষ। কিন্তু আগ্রহ দেখাননি। তবে এমিলির সৌন্দর্য তাঁর ওপর যাদু করেছিল। এমিলির প্রেমে তিনি কতটা ডুবেছিলেন, তা প্রকাশ পায় একটি চিঠিতে। সুগত বসু নিজের বইতে লিখেছেন, প্রেমের আভাস এসেছিল সুভাষের দিক থেকেই। ১৯৩৪-এর মাঝামাঝি সময় থেকে পরের বছর দুয়েক অস্ট্রিয়া আর চেকোস্লোভাকিয়ায় থাকার সময় তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও মধুর হয়েছিল। ইমিলির বাবা প্রথমে এক ভারতীয়র অধীনে মেয়েকে কাজ করতে দিতে রাজি হয়েছিলেন না। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ইমিলি নেতাজিকে ‘মিস্টার বোস’ বলে সম্বোধন করতেন, আর সুভাষচন্দ্র তাঁকে ‘মিস শেঙ্কল’ বা ‘পার্ল শেঙ্কল’ বলে সম্বোধন করতেন। তাঁরা দু’জনেই মেনে নিয়েছিলেন যে, তাঁদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা সাধারণ সম্পর্কের মতো হবে না। সেখানে থাকবে নানা অসুবিধে। তাঁদের বিবাহের কথা শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধু জানতেন। এতটাই গোপনীয়তার সঙ্গে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল যে, সুভাষের ভাইপো অমিয় বসু বিয়ের সময়েই বাদগাস্তিনে গিয়ে এমিলিকে দেখে নিজের কাকার সহকারী ছাড়া অন্য কিছু ভাবেননি। সুভাষ ও এমিলির প্রেমপর্বের ওপরই একটা বই লিখেছেন তিনবার ভারতের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ডক্টর কৃষ্ণা বসু। এমিলিকে নেতাজি ভালোবেসে ‘বাঘিনী’ বলতেন। ভাবা যায়, দেশবাসী ছাড়া যে কিছু ভাবতেন না, তাঁর কাছে গুরুত্ব পায় একজন নারী। সুভাষ একজন প্রকৃত আদর্শবাদী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ছিল শুধু দেশের স্বাধীনতা। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর মাঝে তিনি ভালবাসতেন এমিলিকে। একেবারে তাঁর প্রেমে ডুবে গিয়েছিলেন তিনি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version