।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Palestinian conflict: ভয় পাচ্ছেন নেতানিয়াহু, ঘায়েল ঘরের রাজনীতিতে! যে কারণে যুদ্ধ বিরতি চাইছেন না। ভয় পাচ্ছেন নেতানিয়াহু? ঘরের রাজনীতিতেই ঘায়েল ইসরায়েল। ঠিক কোন কারণে গাজায় এতদিন হামলা অব্যাহত রেখেছেন, জানেন? মনে মনে কাজ করছে বিশাল একটা ভয়। গদি ধরে রাখতে অন্দরে অন্দরে যুদ্ধ করতে হচ্ছে নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে। গাজায় হামলা বন্ধ করলেই নেতানিয়াহুর বিরাট লস। মুহূর্তে হারিয়ে ফেলতে পারেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটা। তাই তো মিলছে না বাইডেনের মতের সঙ্গে। ইসরায়েল কেন যে যুদ্ধ বিরতি চাইছে না, আর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি নিয়ে কেনই বা এত আগ্রহী, জানা গেল তার আসল কারণ।
ঘরের রাজনীতিতে বলি গাজার মানুষ! বড় লস নেতানিয়াহুর
ঘরের রাজনীতি সামলাতেই ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্র যেন বলি দিচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষকে। কথাটা শুনতে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগছে। ভাবছেন, এটা আবার কীভাবে সম্ভব? যুদ্ধ তো হচ্ছে হামাস আর ইসরায়েলের, যেখানে কখনো প্রত্যক্ষভাবে, কখনো বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ছে মার্কিন কূটনীতি। যুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনাকে বারংবার নাকোচ করে দিয়েছেন নেতানিয়াহু। আসলে মূল ফ্যাক্টর টা তো এখানেই লুকিয়ে। নেতানিয়াহু চাইলেই, যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করতে পারেন। হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। কিন্তু তাতে আখেরে বড় লস খাবেন তিনি। এমনকিই তার গদি নিয়েও টানাটানি হতে পারে।
বর্তমানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ যা অবস্থা, তাতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে নেতানিয়াহুর। একই সমস্যার ভুক্তভোগী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। আন্তর্জাতিক পরিসরে এমনি থেকেই ইসরায়েল এখন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। যদিও বৈদেশিক কূটনৈতিক চাপকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর পাখির চোখ, কীভাবে তার গদি তিনি ধরে রাখবেন। তাই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে। আর সেখানে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব। খেয়াল করবেন, প্রথম থেকে ইসরায়েল কিন্তু দুটো শর্ত দিয়ে এসেছে। যা এখনো পর্যন্ত পরিবর্তন করেনি। তা হল, সব জিম্মির মুক্তি দিতে হবে, আর হামাস ধ্বংস করতে হবে। এটা শুধু নেতানিয়াহুর দাবি নয়, বরং ইসরায়েলের বেশিরভাগ মানুষের দাবি। আর এই দাবি যদি নেতানিয়াহু পূরণ করতে না পারেন, তাহলে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে হামাস যখন ইসরায়েলে আক্রমণ করে, বহু ইসরায়েলি নাগরিককে জিম্মি করেছিল। তখন থেকেই, একপ্রকার বিশ্রী চাপে পড়েন নেতানিয়াহু। আর এখন যদি তিনি সব জিম্মিকে হামাসের হাত থেকে মুক্তি করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে পারছেন? ফলটা কেমন হবে? ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ তখন নেতানিয়াহুকে ছেড়ে কথা বলবে না। ইতিমধ্যেই কিন্তু দেশটার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে। যুদ্ধ বিরতিতে রাজি না হয়ে নেতানিয়াহু যেন তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে থাকা উগ্র দক্ষিণপন্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যদি বাইডেনের কথা শুনে নেতানিয়াহু যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনেও নেন, তার অর্থ এই যুদ্ধে কি পেল আর কি পেল না তার হিসেব কষতে শুরু করে দেবে ইসরায়েলের মানুষ। কারণ যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে স্পষ্ট বলাই আছে, গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে অর্থাৎ এই যুদ্ধে তখন ইসরায়েলের প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। মাঝখান থেকে গাজায় বেসামরিক মানুষদের উপর হামলা করে, শুধু মাত্র নিন্দাই কুড়োলেন নেতানিয়াহু।
যুদ্ধ বিরতিতে হ্যাঁ মানেই, গদি হারাবেন নেতানিয়াহু? রয়েছে বড় রিস্ক ফ্যাক্টর
বিগত কয়েক মাস ধরেই কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তররে, বহু নাগরিক এই যুদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের দাবি, যাতে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সমস্ত জিম্মি ফিরে আসে। কিন্তু এখানেই রয়েছে একটা বড় ঘোটালা। যদি এই যুদ্ধ বিরতিতে নেতানিয়াহু রাজি হয়ে যান, তাহলে তাঁর নেতৃত্বাধীন যে ক্ষমতাশীল কোয়ালিশন বা জোট সরকার রয়েছে সেখান থেকে দক্ষিণপন্থীরা সরে যাবে। তার মানে শক্তি ক্ষয় হবে ইসরায়েলের সরকার পক্ষের। তখন কিন্তু সরকার পতন হতে বেশি সময় লাগবে না। কারণ ২০২২ সালে যখন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় আসেন, তার আগে চারটি নির্বাচনে কিন্তু কোন ধরনের শক্তিশালী জোট সরকার গঠন করতে না পারার কারণে ইসরায়েল পড়েছিল বড় রাজনৈতিক সংকটে। দেশটার পার্লামেন্টের প্রায় ১২০ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশন সরকারের আসন প্রায় ৬৪ টা। বুঝতে পারছেন, এখান থেকে যদি কোন রাজনৈতিক দল নেতানিয়াহুর বিরোধিতা করে বেরিয়ে যায়, তাহলে নেতানিয়াহুর গদি ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
আর একটা বড় রিস্ক ফ্যাক্টরে রয়েছে। তিনি এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে কিন্তু নেতানিয়াহুর দল লিকুড পার্টির জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। আর নির্বাচনে যদি তিনি জয়ী না হতে পারেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলো তাঁকে ছেড়ে কথা বলবে না। এখনো পর্যন্ত আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে অব্যাহত রয়েছে সেইসব মামল । এখন হামাসের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের নাগরিকদের যে প্রতিবাদ ছিল, সেটা এখন একটু কমেছে। কিন্তু যদি যুদ্ধ বিরতি ঘটে, পুরো উল্টো ঘটনা ঘটে যাবে। তখন বৈদেশিক নীতি নয় বরং ঘরের নীতি সামলাতে হিমশিম খাবেন নেতানিয়াহু। একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়বে তাঁর রাজনৈতিক ভাগ্য। ইসরায়েলের মানুষ হয়তো এটাই ধরে নেবে, যে যুদ্ধে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল, প্রায় ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হল, আহত হলো লক্ষ লক্ষ মানুষ, সেই যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রাপ্তি বলতে কিছুই নয়। আপরদিকে ইসরায়েল হারালো প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক।
উপরন্তু জিম্মি থাকা অবস্থায় মারা গেছেন অনেকে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছে ইসরায়েলের প্রায় কয়েকশো সৈন্য। আন্তর্জাতিক স্তরে বহু দেশের সঙ্গেই ইতিমধ্যেই সম্পর্ক খারাপ করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর পশ্চিমা দুনিয়ার হাতেগোনা কয়েকটা দেশ ছাড়া ইসরায়েলের পাশে কিন্তু সেভাবে শক্ত দেশ নেই বললেই চলে। ইসরায়েল যে নীতিতে এখন চলছে, সেই নীতি বিশ্বের বহু দেশের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে দেগে দিয়েছে গণহত্যা বলে। যে হামাসকে একটা সময় কেউ বলতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, কেউ বলতো জঙ্গিগোষ্ঠী, সেই হামাসের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ভাবতে অবাক লাগলেও, এটাই হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। গাজায় বেসামরিক মানুষদের উপর হামলা হামাসের চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। উল্টে সমর্থন বাড়ছে ফিলিস্তিনের দিকে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু শেষ পর্যন্ত যদি হাল ছেড়ে দেন, তাহলে নিজের দেশের মানুষের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘরের রাজনীতিতে যুদ্ধ বিরতির দাবি, দুর্বল বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি!
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে প্রাণে চাইছে যুদ্ধ বিরতি। যার অন্যতম কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। ডেমোক্রেটিক পার্টি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে, ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন সরকারের প্রথম থেকে সমর্থনের কারণে ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে দলটা। তবে হ্যাঁ, ইসরায়েলের প্রতি সাপোর্টের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি কিংবা রিপাবলিকান পার্টির নীতির খুব একটা ফারাক নেই। কিন্তু গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে পড়ুয়াদের ক্ষোভ বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আন্দোলন সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মার্কিন প্রশাসনও। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের বহু মানুষ মনে করছেন, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের পক্ষে যা করছে, তা কিছুটা অতিরিক্ত।
যা বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আর অপরদিকে বাইডেনের ঠিক দুর্বল পয়েন্টগুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করে টার্গেট করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরও কিন্তু জনপ্রিয়তা কম নেই। তবে বর্তমানে যেভাবে ইসরায়েলের উপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমছে, তাতে বহু কূটনীতিক মনে করছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি হয়ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এটা বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতা বলেও প্রমাণ হতে পারে। যা বাইডেন প্রশাসনের কাছে পরিণত হয়েছে একটা নেতিবাচক বিষয় হিসেবে। যখনই ভোট ময়দানে পররাষ্ট্রনীতির কথা উঠবে, তখন কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে পারেন বাইডেনকে। তাই ইসরায়েল যখন যুদ্ধ বিরতির বিপক্ষে, তখন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বিরতির পক্ষে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম