Netaji-Rashbihari : রাসবিহারীর ইচ্ছাতেই সুভাষের আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ, সেনাপতি ছিলেন কে ?

।। প্রথম কলকাতা।।

Netaji-Rashbihari : ভারতের স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাসে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ( Subhashchandra Bose) এবং তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর নাম। এই বাহিনী যদিও সেই সময় দিল্লিতে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু ভারতের মুক্তি আন্দোলনে তাঁরা যেটুকু সময় লড়াই চালিয়েছিল তা প্রশংসা কুড়িয়েছে তৎকালীন বিপ্লবীদের। স্বয়ং গান্ধীজি আজাদ হিন্দ ফৌজ ( Azad Hind Fauj) নিয়ে গর্ববোধ করতেন। আমরা সকলেই জানি, আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু । কিন্তু আজাদ হিন্দ বাহিনী তাঁর হাতে গড়ে ওঠেনি । এই বাহিনী প্রথম গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাংলার ওপর এক বীর সন্তান।

তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ( Rasbihari Bose) । আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করার জন্য তাঁর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোহন সিং ( Mohan Singh) । যদিও ১৯৪৩ সালে রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রকে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান । তাঁর ডাকে অবশ্য সারা দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু । সেই বছর ২৫ অগাস্ট আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তিনি । আর সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোহন সিং।

সালটা তখন ১৯৪০ । জুলাই মাসের ২ তারিখে সুভাষচন্দ্র বসুকে ভারতরক্ষা আইনের অধীনে গৃহবন্দী করা হয়। নিজের বাড়িতেই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সুভাষচন্দ্র মহম্মদ জিয়াউদ্দিন নামক এক ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। দেশত্যাগ করেন তিনি । যদিও তাঁর দেশ ত্যাগ করার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বিদেশী সাহায্য লাভ করা। তিনি ভারতকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য দেশ ছেড়ে প্রথমে রাশিয়ায় পাড়ি দেন । সেখানে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন । কিন্তু তৎকালীন রুশ ( Russia) রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের কাছ থেকে কোনরকম সাহায্যের আশ্বাস তিনি পাননি।

সেখান থেকে সুভাষচন্দ্র বসু এসে উপস্থিত হন জার্মানিতে ( Germany) । মাত্র কুড়ি জন ভারতীয়কে নিয়ে ১৯৪১ সালে তিনি ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার গড়ে তোলেন। সুভাষচন্দ্র বসু সেই সময় জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেন ট্রপের সঙ্গে দেখা করেন । ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সুভাষের মাথায় যে সকল পরিকল্পনাগুলি ছিল সেগুলি পেশ করা হয়। তবে জার্মান সরকার সুভাষ চন্দ্রের পরিকল্পনার বেশ কিছু শর্তও মেনে নিয়েছিল । কিন্তু ভারত যে স্বাধীন হবে সেই সম্পর্কে কোন প্রতিশ্রুতি তাঁরা দেয়নি। পরবর্তীতে নেতাজি গিয়ে উপস্থিত হন জাপানে ( Japan) । তিনি ১৯৪৩ সালের ১৩ জুন টোকিওতে আসেন। দেখা করেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তোজোর সঙ্গে । দুপক্ষের বৈঠকের পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাপান পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে এমনটাই আশ্বাস মেলে ।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর গঠন:

১৯৪২ সালে ভারতের বিপ্লবী সন্তান রাসবিহারী বসু জাপানের সকল ভারতীয়দের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে একটি সম্মেলনের আহ্বান জানান । ওই সম্মেলনে রাসবিহারী বসুর সভাপতিদের গঠন করা হয় ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ বা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ । পরবর্তীতে ১৯৪২ সালের ১ সেপ্টেম্বর মোহন সিংয়ের সহযোগিতায় সিঙ্গাপুরের মাটিতে ২৫ হাজার ভারতীয় সেনা নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রথম গঠিত হয়। পরবর্তীতে যদিও সেনা সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০ হাজার। আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন রাজবিহারী বসু এবং মোহন সিং। এরপর ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র যখন জাপানে আসেন তখন আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব রাজবিহারী বসু তাঁর হাতেই তুলে দেন।

আজাদ হিন্দ ফৌজের পুনর্গঠন:

এই বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সুভাষচন্দ্র সেটি পুনর্গঠন করেন। পাঁচটি ব্রিগেডে বিভক্ত করা হয় এই ফৌজকে ঝাঁসির রানী নামক একটি নারী ব্রিগেড গঠন করা হয়েছিল লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে । আর বাকি চারটি ব্রিগেড ছিল গান্ধী , নেহেরু ও আজাদ নামে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনুগামীদের অনুরোধ রাখতে সুভাষ ব্রিগেডও গঠন করতে হয়েছিল নেতাজিকে। এরপর আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করে ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে সর্বপ্রথম স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করেন নেতাজি। আন্দামান থেকেই ভারত অভিযান শুরু করে আজাদ হিন্দ ফৌজ। তাঁরা ব্রহ্মদেশ অতিক্রম করে ভারতের মাটির স্পর্শ করে। মনিপুরে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

আজাদ হিন্দ ফৌজের আত্মসমর্পণ:

প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং একাধিক কারণে শেষের দিকে আজাদ হিন্দ ফৌজের সব প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ লগ্নে ইঙ্গ- মার্কিন বাহিনী জাপানের উপর আক্রমণ করে । আর সেই আক্রমণ ঠেকাতে না পেরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে জাপান। তাই আজাদ হিন্দ ফৌজ জাপানের কাছ থেকে আর সাহায্য পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয় । আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্য অস্ত্র , খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জাপানিরা। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বল করে দেয় এই বাহিনীকে । অবশেষে আত্মসমর্পণ করতে হয় সুভাষের স্বপ্ন আজাদ হিন্দ ফৌজকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version