Azad Hind Fauj: নেতাজির কাছে ছিল বিদেশি শক্ত ঘুঁটি! শেষমেষ আজাদ হিন্দ বাহিনীর পরাজয়ের কারণটা কী?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Azad Hind Fauj: আজাদ হিন্দ ফৌজ(Azad Hind Fauj) ছিল এমন এক বাহিনী যেখানে বালক, বালিকা, নারী, পুরুষ, হিন্দু, মুসলিম সবাই দলে দলে যোগদান করেছিলেন। এই দলে বিশেষ বিশেষ কিছু নামে কয়েকটি ব্রিগেড অর্থাৎ সেনাবাহিনী ছিল। যেমন আজাদ ব্রিগেড, নেহেরু ব্রিগেড, গান্ধী ব্রিগেড, বাল-সেনাদল এবং ঝাঁসির রানি ব্রিগেড। এই ঝাঁসির রানি ব্রিগেডে ছিলেন মহিলারা। এটি তৈরি হয়েছিল শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে। আজাদ হিন্দ বাহিনীতে বাছা বাছা সেনাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল সুভাষ ব্রিগেড। যদিও এই ব্রিগেড তৈরির ক্ষেত্রে নেতাজির খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। সুভাষ ব্রিগেড সর্বপ্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিল শানওয়াজ খানের নেতৃত্বে।

পাশাপাশি আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুইজন বিশিষ্ট সেনাধ্যক্ষ ছিলেন, জি.এস ধিলন আর পি.কে. সেগল। আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মাত্র ২ দিন পর ব্রিটেনের বিরুদ্ধে এই সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৪৩ এর ২১শে অক্টোবর স্বাধীন ভারত সরকার অর্থাৎ আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছিলেন নেতাজি। ঠিক তার ২ দিন পর অর্থাৎ ২৩শে অক্টোবর এই সরকার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

ভারতকে স্বাধীনতা দেবেন বলে নেতাজির যে লড়াই, তা আজীবন মনে রাখার মতো। তাই তো ভারতবাসীর চোখে নেতাজি একজন ভগবানের সমান। শুধুমাত্র দুঃসাহসের উপর ভর করে ১৯৪৩ সালের জুনে তিনি জার্মানি থেকে জাপানে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারত মুক্তির সাহায্য করার জন্য আশ্বাস দেন। অপরদিকে বিদেশের মাটিতে ইংরেজ বিরোধী রণতরী সাজাচ্ছিলেন রাসবিহারী বসু। তিনি তাঁর ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগের দায়িত্ব তুলে দেন সুভাষ চন্দ্রের হাতে। ১৯৪৩ এর আগস্ট মাসে সুভাষচন্দ্র বসু আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

শুধুমাত্র দেশকে স্বাধীনতা দেবেন বলেই নিজের দেশ ত্যাগ করে বিদেশে ছুটে গিয়েছিলেন নেতাজি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভারতের অভ্যন্তরে চলা বিপ্লব গুলো ধীরে ধীরে গতিহীন হয়ে পড়ছে। তাই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক শক্তির সাহায্যে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পরিকল্পনা নেন। তিনি খুব ভালো ভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার কখনই ভারতীয়দের স্বাধীনতা দেবে না। ব্রিটিশ সরকারও সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্দেশ্য কিছুটা আঁচ করতে পেরে ভারত রক্ষা আইনে তাঁকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীকালে তিনি কারাগারে অসুস্থ হলে কলকাতায় নিজ বাড়িতে পাহারায় রেখে দেওয়া হয়। অসুস্থ শরীরে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে ১৯৪১ সালে সেখান থেকে পালিয়ে তিনি সোজা পৌঁছান আফগানিস্তান, তারপর রাশিয়া। সেখানে গিয়ে রুশ সরকারের কাছে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সাহায্য চান। তবে সেই সময় রুশ রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন স্ট্যালিন। তিনি ইংরেজদের থেকে বন্ধুত্বের আশা করেছিলেন। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার হয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে এমন কোন আশা ছিল না। তাই নেতাজি রাশিয়া থেকে পৌঁছে যান জার্মানি, সেখানে হিটলারের সঙ্গে দেখা করেন। তারপর ইটালিতে মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় জার্মান সরকার তাঁকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল। ১৯৪২ এর প্রথম দিকে বার্লিনে আজাদ হিন্দুস্তান বলে একটি বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখান থেকে সুভাষচন্দ্র নিয়মিত ভারতের স্বাধীনতার জন্য প্রচার চালাতেন। জার্মানির হাতে বন্দি ছিল প্রায় ৪০০ ভারতীয় সৈন্য, তিনি তাদেরকে একত্রিত করে একটি সেনা দল গঠন করেন। আর এই সেনা দল ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের প্রথম ধাপ।

এতকিছু পরিকল্পনার পরেও হঠাৎ করেই যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হয়ে যায়। নিজের দেশ বাঁচাতে জাপানি বিমানবহর আর সেনাবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগর অভিমুখের দিকে এগিয়ে গেলে আজাদ হিন্দ বাহিনীতে বিমানের অভাব দেখা যায়। যার কারণে প্রবল অসুবিধার মুখে পড়ে সেনাবাহিনী। তার উপর সৈনিকদের প্রয়োজনীয় খাবার ফুরিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই নামে বর্ষা। প্রকৃতির কাছে হার মানতে হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীকে। একদিকে খাদ্যাভাব, অপরদিকে ম্যালেরিয়া, পার্বত্য অঞ্চলের বিষাক্ত পোকামাকড়ের কামড়, রোগ, শীত সব মিলেমিশে প্রায় কয়েক হাজার সৈন্যের মৃত্যু ঘটে। ১৯৪৫ এর ১৫ই আগস্ট জাপান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, অপরদিকে আরো দুর্বল পরে হয়ে পড়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ। তবে নেতাজি আত্মসমর্পণ করেননি। বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর অন্তর্ধান নিয়ে বহু বিতর্ক রয়ে গিয়েছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version