Israel-Hamas War: হামাসকে সুস্থ করছে তুরস্ক! লণ্ডভণ্ড গাজা, ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel-Hamas War: ফিলিস্তিনিদের পাশে শক্ত হাতে দাঁড়াল তুরস্ক। তুরস্কের মাটিতে চিকিৎসা চলছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের। যাকে কেন্দ্র করে, গোটা বিশ্বজুড়ে হৈচৈ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যা বললেন শুনে অবাক হয়ে যাবেন। তাহলে কি, তুরস্কেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে আহত হামাস সেনারা? তলে তলে হামাসের শক্তি জোগাচ্ছে তুরস্ক? তুরস্ক হামাসকে এত সাপোর্ট করছে কেন? দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাস কেটে গেল, এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলের কাছে মাথা নত করেনি হামাস। রীতিমত দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে গাজা। তাও হার মানেনি। ফিলিস্তিনের কাছে তুরস্ক এখন বড় সাপোর্টের জায়গা। বড় বিশ্বাসের জায়গা। যেখানে চোখ বন্ধ করে ভরসা করছে হামাস। এই মুহূর্তে গাজার অবস্থানটা কেমন ঠিক জানেন? লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতিউতি ছুটে বেড়াচ্ছেন। ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়টা গোটা বিশ্ব হয়ত এবার দেখতে চলেছে। আর সেটা হতে পারে হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে।

 

হামাসের ভরসা তুরষ্ক, এরদোয়ানের বড় দাবি

সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, তুরস্কের বিভিন্ন হাসপাতালে নাকি চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় এক হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধা। পাশাপাশি তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের কর্মকান্ডকে অভিহিত করেন,একটা বড় প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবে। সম্প্রতি গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি। এও বলেছেন, গ্রিস হামাসকে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখে, যা তাঁকে ভীষণ পীড়া দেয়। তাঁর এহেন বক্তব্যের পর কিন্তু ব্যাপক বিতর্ক ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তার মানে কি সরাসরি তিনি হামাসকে সাপোর্ট করছেন? যদিও পরবর্তীকালে এক তুর্কি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তুরস্কে হামাস যোদ্ধা নয়, বরং চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তাদেরকে হামাসের যোদ্ধা হিসেবে ভুল ভেবেছেন। ওদিকে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী জানান, গাজার যুদ্ধের বিষয়ে কখনোই গ্রিস আর তুরস্ক একমত হতে পারবে না। তবে গাজায় যে এই মুহূর্তে একটা দীর্ঘকালীন যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন, সে বিষয়ে গ্রিস একমত। যদি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে তাকান, তাহলে কিন্তু তুরস্ক আর গ্রিস উভয় রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য। দুই রাষ্ট্র একই জোটের সদস্য, কিন্তু নানান বিষয়ে এক মতে গিয়ে পৌঁছাতে পারে না। যার জেরে প্রায়ই তৈরি হয় উত্তেজনা। আর সেই উত্তেজনা নিরসনের জন্য, সম্প্রতি তুরস্কে গিয়েছিলেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী। তখনই কথা প্রসঙ্গে চলে আসে ফিলিস্তিনিদের কথা।

 

ফিলিস্তিনিদের বিপদে বড় ঢাল তুরষ্ক, কারণটা কী?

এই প্রথম নয়, এর আগেও কিন্তু ফিলিস্তিনিদের পাশে বারংবার দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। করোনা মহামারীর সময় ফিলিস্তিনিদের জন্য চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছিল এই দেশ। যদিও তখন তুরস্ক ইসরায়েলকেও চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়ার কথা বলে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্ক সেই সময় দিয়েছিল প্রায় এক লক্ষ মাস্ক, ৪০ হাজার টেস্ট কিট, দুই টন হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বহু চিকিৎসা সামগ্রী। যখন ইসরাযেল গাজা আক্রমণ করেনি, তখনও তুরস্ক সরকার জানিয়েছিল তারা গাজায় তুর্কি ফিলিস্তিন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎসারত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের তুরস্কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। কারণ জ্বালানি সংকটে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর ইসরায়েল গাজা আক্রমণ করলে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই উপত্যকার জন্য নির্ধারিত ওষুধ আর চিকিৎসা সামগ্রীও পাঠিয়েছিল এই দেশ। এছাড়াও তুরস্ক পাঠিয়েছিল ২০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল।

 

এভাবেই বারংবার গাজার ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে এরদোয়ান। তিনি শুধু এখানেই থেমে থাকেননি, মেনে নেননি গাজার বেসামরিক মানুষদের উপর ইসরায়েলের হামলা। বরং তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের সাথে স্থগিত করেছেন সব ধরনের বাণিজ্য। নেপথ্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কে। তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় বাধাহীন এবং যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ প্রবাহ অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তাদের এই পদক্ষেপ বহাল থাকবে। অথচ তুরস্ক আর ইসরায়েলের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। তুরস্ক সেই মোটা অঙ্কের হিসেব না করে, আগে ভাবছে গাজার কথা।

 

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে গাজা, সামনে আরো কঠিন সময়, ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের দপ্তর ইউএনআরডব্লিউ রীতিমত সতর্ক করে বলেছে, ফিলিস্তিনের মানুষদের অবস্থা ভীষণই করুণ। তারা ক্রমাগত ক্লান্তি, ক্ষুধা আর ভয়ের মধ্যে রয়েছে। অনেকটা বেঁচে থেকেও মরে যাওয়ার মত। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকছে, এই খবর পাওয়া মাত্রই গত এক সপ্তাহে রাফা ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ফিলিস্তিনি। সংখ্যাটা কিন্তু অনেকটা। রাফার পূর্বাঞ্চলে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। যেখানে এখনো আশ্রয় নিয়ে রয়েছে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। আর যদি গাজার উত্তর অঞ্চলের কথা বলেন, সেখানেও কিন্তু বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরো এক লক্ষের মতো মানুষ। আপাতত ইসরায়েলি সৈনদের টার্গেট, জেইতুন আর জাবালিয়া। ইসরায়েলের দাবি, এখানে পুনরায় সংঘটিত হচ্ছে হামাস। অথচ পাঁচ মাস আগেই ইসরায়েল দাবি করেছিল, এখানে হামাসের যে স্থানীয় ব্যাটালিয়ন রয়েছে তা ধ্বংস করে দিয়েছে।

 

এখনো হামাসকে সমূলে নির্মূল করতে পারেনি ইসরায়েল। গাজার এক একটা এলাকা হামাসমুক্ত করলেও কয়েক দিন পর আবার সেই এলাকায় ফিরে আসছে হামাসগোষ্ঠী। কিন্তু সমস্যাটা কি বলুন তো? যুদ্ধ হচ্ছে হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে। আর মাঝখানে অসহায় হয়ে মার খাচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষ। সেই তালিকার অধিকাংশটাই কিন্তু নারী আর শিশু। অপরদিকে হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ। নেতানিয়াহু এত যুদ্ধ করেও সাত মাসে নিজের দেশের সমস্ত জিম্মি নাগরিককে হামাসের হাত থেকে মুক্ত করতে পারেননি। যতজন জিম্মি রয়েছেন, তারা আদৌ বেঁচে আছে কিনা, তাও এখনো জানা যাচ্ছে না। গত ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ১২০০ ইসরায়েলি মানুষের। হামাস জিম্মি করে আরো ২৫২ জন নাগরিককে। তারপর ইসরায়েল সেই যে গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করলো, তা এখনো থামার নাম নেই। ইতিমধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি। প্রত্যেক ২৪ ঘন্টায় পাল্টে যাচ্ছে সংখ্যাটা। আপডেট হচ্ছে নতুন সংখ্যায়।

 

ইসরায়েল পূর্ব রাফার জাবালিয়াতে সামরিক অভিযানের আগে বেসামরিক নাগরিকদের জায়গা খালি করতে বলেছে। ইসরায়েলের যুক্তি, নিরাপত্তার খাতিরে এমনটা করতে হবে। যার জেরে বর্তমানে গাজায় বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশের কাছাকাছি। সম্প্রতি জাতিসংঘের তরফ থেকে রাফা শহরের কিছু খালি রাস্তাঘাটে ছবি পোস্ট করা হয়। যেখানে দেখা যায় ইসরায়েলের অভিযানের আগে ছিল প্রচুর তাঁবু আর অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র। সেখানে মানুষও ছিল। কিন্তু সেই পরিবারগুলো সেখানে এখন এই নেই। নিরাপত্তার খোঁজে পালিয়ে গিয়েছে অন্যত্র। অর্থাৎ গাজার এখন কোন স্থানই নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে একমাত্র আশা, দ্রুত যুদ্ধ বিরতি। কিন্তু যুদ্ধ বিরতি হলটা কই! দুই পক্ষই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। ওদিকে ইসরায়েল ধরেই নিয়েছে, রাফার নিয়ন্ত্রণ না নিলে আর হামাসের শেষ ব্যাটেলিয়নকে ধ্বংস না করলে যুদ্ধ জয় অসম্ভব। ইসরায়েলকে জাতিসংঘ আর পশ্চিমা শক্তিগুলো কিন্তু কম সতর্ক করছে না। বারংবার বলা হচ্ছে, একটা সর্বাত্মক অভিযান বেসামরিক নাগরিকদের উপর ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটাতে পারে। যা বড় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে বেশিক্ষণ সময় নেবে না। রাফা ক্রসিংও বন্ধ।

 

গাজায় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে জ্বালানি, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদ। সহিংসতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না ইসরায়েলের সাথে থাকা কেরেন শালম ক্রসিং। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের মতে, যদি রাফা শহরে সত্যিই ইসরায়েল বড় ধরনের সামরিক অভিযান করে, তাহলে সেটা মারাত্মক ভুল হবে । এক্ষেত্রে কৌশলগত অর্জন ছাড়াই ঝুঁকিতে পড়বে বেসামরিক নাগরিকরা। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, হামাস কিংবা ইসরায়েলের এই মুহূর্তে যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে আসা অত্যন্ত দরকার। না হলে গাজার পরিস্থিতি চোখে দেখার মত নয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় চলমান সংঘাতে এখনো পর্যন্ত অন্তত ৩৫ হাজারের বেশি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশই নারী আর শিশু।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version