।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের হুমকি। গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত যেন ইসরায়েলের শান্তি নেই। একের পর এক দেশ রুখে দাঁড়াচ্ছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে । ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করল তুরস্ক। একই সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে কলম্বিয়া আর বলিভিয়া। বড়সড় লস খেতে চলেছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের বাণিজ্যে বড় ধাক্কা। যুদ্ধ বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে কি বলছেন হামাস প্রধান? এবার কি তবে থামবে গাজা যুদ্ধ? একসময়ের কাছের বন্ধুও হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের শত্রু। নেতানিয়াহু ইহুদি বিদ্বেষীদের সহ্যই করতে পারছেন না। ব্যাপারটা কী?
এতদিন বহু দেশ মুখে বলছিল, ইসরায়েলের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাবে। কিংবা ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে তারা মেনে নিতে পারছিল না। এবার সর্বসম্মুখে এসে একের পর এক দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করছে। ইসরায়েল আর তুরস্কের সম্পর্ক কতটা তিক্ত, তা তো জানেনই। বহুবার একে অপরকে হুমকি দিয়ে এসেছে। এবার তুরস্ক জোর গলায় বলে দিল, ইসরায়েলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখবে না। কলম্বিয়াও কিন্তু একই কাজ করেছে। ওদিকে আবার গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে যেন চালকের ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বজুড়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ইজরায়েল বিরোধী আন্দোলনে নেমেছে। যেন তেন প্রকারের সবাই যেন গাজায় হামলা রুখতে বদ্ধপরিকর। স্বাভাবিকভাবেই, আর বিষয়টা হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পরিণত হয়েছে বড়সড় এক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে। যদি এসব দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর। দেখুন, আজ হয়তো ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্ত ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। আর সেই সূত্রে বহুদিন ধরেই তুরস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। এর আগেও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরায়েলকে মুখের উপর হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘বুঝে নেবে’। বলছি বছর তিনেক আগের কথা। যখন গাজায় অন্তত বেশ কয়েকটি স্কুল এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে তুরস্ক হুমকি দিয়েছিল ইসরায়েলকে। তখনই জানিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলি নিপীড়নে তুরস্ক একদমই চুপ করে থাকবে না। একইভাবে তুরস্ক হামাস ইসরায়েল যুদ্ধে হামাসের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে।
এবার সরাসরি নিয়ে নিল একটা বড় স্টেপ। ইসরায়েলের সঙ্গে যাবতীয় বাণিজ্য স্থগিত করল দেশটা। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনাকে। তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় যতদিন না পর্যন্ত বাধাহীন এবং যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ প্রবাহের অনুমতি দেবে না ততদিন পর্যন্ত তুরস্কের তরফ থেকে এই পদক্ষেপ বহাল থাকবে। হিসাব অনুযায়ী, তুরস্কের এই একটা সিদ্ধান্তে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ইসরায়েল। কারণটা কি বলুন তো, দুই দেশরই মধ্যে বাণিজ্যের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। এর আগে বহু তিক্ততার সত্বেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বজায় ছিল। কিন্তু এবার হয়ত আর শেষ রক্ষা হলো না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এমন আচরণকে স্বৈরশাসকের মতো আচরণ বলে মনে করছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, এইভাবে এরদোগান তুরস্কের জনগণ আর ব্যবসায়ী স্বার্থকে অসম্মান করছেন। উপেক্ষা করছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সমঝোতাকে। তবে তুরস্কের এমন স্টেপের পর কিন্তু ইসরায়েল হাত গুটিয়ে বসে নেই। ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের মন্ত্রণালয়ে নির্দেশ জারি হয়েছে। যাতে তুরস্কের সাথে বাণিজ্যের বিকল্পের সন্ধান খোঁজা হয়।
পাশাপাশি জোর দেওয়া হবে, স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্যান্য দেশ থেকে করা আমদানিতে। ভাবলে অবাক হবেন, একটা সময় কিন্তু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল ছিল। ১৯৪৯ সাল নাগাদ তুরস্কই ছিল প্রথম একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের অঙ্কটাই পুরো ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। সম্পর্কের অবনতি হতে হতে এখন গিয়ে ঠেকেছে একদম তলানিতে। যার শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সাল নাগাদ। সেই সময় তুরস্কর মালিকাধীন একটি জাহাজ গাজায় ইসরায়েলের সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করলে, ইসরায়েলি কমান্ডোদের সাথে সংঘর্ষ হয়। নিহত হন বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি পন্থী তুর্কি কর্মী। এই ঘটনায় বেজায় ক্ষেপে তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০১৬ সাল নাগাদ পুনরায় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক হয়। কিন্তু, ঠিক তার ২ বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৮ সাল নাগাদ দুই দেশ একে অপরের শীর্ষ কূটনৈতিককে বহিষ্কার করে। তখনও নেপথ্যে ছিল গাজা সীমান্তে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনা। তারপর থেকে সম্পর্ক আর আগের মতো সেভাবে জোড়া লাগেনি। বরং তিক্ততার দিকেই এগিয়েছে। তার চূড়ান্ত রূপ নিল এখন।
ওদিকে আবার ইসরায়েলের তুরস্কের উপর রয়েছে একগুচ্ছ অভিযোগ। নেতানিয়াহুর কথায়, এক সময় এরদোগান কুর্দিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তার শাসনের বিরোধিতা করায় বিশ্ব রেকর্ড করেছিলেন সাংবাদিকদের বন্দি করে। অথচ আজ সেই ব্যক্তি নেতানিয়াহুকে নৈতিকতা শেখাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই আপাতত এখন একে অপরকে সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না নেতানিয়াহু আর এরদোগান।।ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারটা আজ শুরু হয়নি। গতবছরে গাজায় হামলার শুরুতেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সমালোচনা করে, দেশটার যুক্তি ছিল, গাজায় ইসরায়েল আক্রমণাত্মক এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। যা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
আর প্রথম দেশ হিসেবেই কিন্তু বলিভিয়া এমন উদ্যোগ নিয়েছিল অথচ বলিভিয়ার সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক যে খুব একটা খারাপ ছিল এমন নয়। ২০১৯ সালে দেশ দুটির মধ্যে স্থাপিত হয় কূটনৈতিক সম্পর্ক। বলিভিয়ার সরকার গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরোধী কার্যকর করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, গাজাবাসির জন্য সহায়তা পাঠানোর ঘোষণাও করেছিল। তারপর থেকে, একের পর এক দেশ মুখ ঘোরাতে থাকে ইসরায়েলের তরফ থেকে। কলম্বিয়া, চিলি, হন্ডুরাসহ দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু দেশ ইসরায়েল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। সম্প্রতি আবার কলম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা করেছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্র, গাজায় হামলা শুরু থেকেই কিন্তু নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। শুধু তাই নয়, তিনি অন্যান্য দেশগুলোকেও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে যোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্র, ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধানকে দেগে দেন গণহত্যাকারী হিসেবে। বলেন, গাজার এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বের কোন দেশই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে না। এমত পরিস্থিতিতে, চুপ থাকেনি ইসরায়েল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইজরাইল কাতজ রীতিমত অভিযোগ করে বলেন, কলম্বিয়া প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণা একেবারেই ইহুদি বিদ্বেষী এবং ঘৃণায় ভরা। তার এমন পদক্ষেপ হামাসের জন্য একটা বড় পুরস্কার। সোজা কথায়, কলম্বিয়াকে ঠুকে এই কথাগুলো বলে ইসরায়েল।
বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে, যদি গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদের প্রসঙ্গ আসে, তাহলে কিন্তু এখানে অনেকটা চালকের ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কেন বলছি বলুন তো, ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন পশ্চিমের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। আর তীব্রমাত্রা ধারণ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ইতিহাস বলছে, প্রায় ৬০ বছর আগে সিভিল রাইটস মুভমেন্টসের সমর্থনে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গুলো। সেই ঘটনারই আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মূলত এই আন্দোলনের দাবি, অবিলম্বে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলকে আর্থিক সহায়তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করেও কিন্তু আন্দোলন থামাতে পারছে না। উপরন্তু বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলপন্থী বিরোধী দলগুলো।
গতবছরের ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের হামাসগোষ্ঠী। আহত এবং নিহত হন ইসরাইলের বহু নাগরিক। এছাড়াও হামাসের হাতে জিম্মিও হন অনেকে। সেই হামলায় প্রতিক্রিয়ায় হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার শেষ হয়নি। হামাসের সমস্ত ব্যাটালিয়ানকে ধরতে পারেনি ইসরায়েল। আর এই যুদ্ধে মাঝখান থেকে মার খাচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষ। যাকে মানবতার বিপর্যয় বলে মনে করছে গোটা বিশ্ব। আপাতত একটাই সমাধান, দুই পক্ষের যুদ্ধ বিরতি। সেটা নিয়ে চেষ্টা করতে কোন খামতি রাখছে না যুক্তরাষ্ট্র। সব শেষ আশা প্রস্তাবের বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীরা এখন হামারসের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। শোনা যাচ্ছে শেষ প্রস্তাবে, ৪০ দিনের যুদ্ধ বিরতির কথা বলা হয়েছে। যার বিনিময়ে ইসরায়েল জিম্মি ও ফিলিস্তিনি কিছু বন্দি মুক্তি পেতে পারেন। তবে ইসরায়েলের এই যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবটিকে হামাস ইতিবাচকভাবে দেখছে বলেই জানিয়েছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। চলমান যুদ্ধ বিরতি আলোচনা শেষ করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি মিশরেও যাবেন বলে জানান। হামাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিশরের পাশাপাশি যেভাবে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব আসছে, সেই বিষয়টি হামাস ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই পর্যালোচনা করছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম