বঙ্গোপসাগরের নীচে বাংলাদেশের গুপ্তধন! ব্লু ইকনোমিকে সাক্সেস দেবে হীরে-মুক্তো-জহরত ? ভারতেও বড় সুযোগ

।। প্রথম কলকাতা ।।

বাংলাদেশের এতো এতো গুপ্তধন, বঙ্গোপসাগরের ভেতরে থরে থরে সাজানো। জানেন অতল সাগর থেকে মাছ ছাড়া কোন কোন সম্পদ বের করে আনে বাংলাদেশ? ব্লু ইকোনমির ভরসায় একটা যুগ কাটিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশ? ভারতের হাতেও অঢেল সুযোগ। সমুদ্রের গভীরে পদ্মা পাড়ের দেশটার জন্য হীরে, মুক্তো, জহরত?
কেন এবার থেকে সমুদ্রের ভরসায় বাঁচবে গোটা পৃথিবী? মর্মটা জানে ভারত, ডিপ ওসিয়ান মিশন দেখাবে অন্য জগৎ। কেন অন্যান্য সাগর-মহাসাগরের থেকে এতো দাম বেশি বঙ্গোপসাগরের? কিভাবে সাগরের বুকে সাক্সেসের মুখ দেখছে ভারত বাংলাদেশের নীল অর্থনীতি? বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের জন্য অ্যাসেট। কি নেই এর তলায়? ভারতও সমুদ্র সম্পদ তুলে আনার লক্ষ্যে সাগরের তলায় তোলপাড় করছে। ডিপ ওসিয়ান মিশন সাকসেসফুল করতে রীতিমতো মরিয়া মোদী সরকার। কিন্তু সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে যে বিরাট সম্ভাবনা, সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারছে ওপার বাংলা? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন শুনলে বলবেন এত দামি সম্পদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের নীচে রয়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুত কিন্তু এখনও সেখানে নিজেদের সার্ভে চালাতে পারেনি বাংলাদেশ। এরই মধ্যে মিয়ানমারের আরাকান উপকূলীয় এলাকায় বড় বড় অনেক গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান মিলেছে। বাংলাদেশ অংশেও রয়েছে এর সম্ভাবনা। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের সুবিশাল জলরাশির ভেতরেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট ছাড়াও ২২০ প্রজাতির সি-উইড বা শ্যাওলা, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস রয়েছে। অতএব এটা স্পষ্ট খাদ্যের বিশাল উৎস বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশে ব্যবহৃত নুনের মূল উৎস বঙ্গোপসাগর, প্রাকৃতিক গ্যাস সহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ পাওয়ার সম্ভাবনা এখানে ১০০%। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য ব্লু ইকোনোমি হতে পারে অপার সম্ভাবনার খাত। ব্লু ইকোনমি মানে নীল অর্থনীতি। সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতি। গভীর সমুদ্রের বিশাল জলরাশি এবং সমুদ্রের তলদেশের সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে ব্লু ইকোনোমি।

আর বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের ব্লু ইকনোমি ফুলে ফেঁপে ওঠার চান্স বিশাল। শুধু প্রাকৃতিক গ্যাস তেল তো নয়, চুনাপাথর, মূল্যবান খনিজ বালু রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। তাছাড়া সিমেন্ট বানানোর উপযোগী প্রচুর ক্লে রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। তাই বাংলাদেশ সরকার ব্লু ইকনোমিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে সম্ভাবনার খুব সামান্যই কাজে লাগাতে পারছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্লু ইকোনমি থেকে প্রাপ্ত সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে বঙ্গোপসাগরই হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সব চাহিদা পূরণের উৎস। আর গভীর সমুদ্র ক্ষেত্রে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন, মহাসাগরে জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবার বিকাশ, গভীর সমুদ্রে জীব বৈচিত্র অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, গভীর মহাসাগর পর্যবেক্ষণ, মহাসাগর থেকে বিদ্যুৎ ও মিষ্টি জলের উৎপাদন, মহাসাগরীয় জীববিজ্ঞানের জন্য উন্নত উপকূলীয় কেন্দ্র ভারতের ফোকাস মূলত এগুলোতে। তবে, বাংলাদেশের জন্য যে এত অপার সম্ভাবনা রয়েছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ওপার বাংলার জেলেরা কিন্তু বঙ্গোপসাগর থেকে কয়েক লক্ষ টন মাছ আর চিংড়ি ধরে বেশি। কিছু মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়ে যায়, কিছু আবার শুঁটকি হয়, রপ্তানি হয়। আবার ইদানীং অনেক জায়গায় অক্টোপাস, স্কুইড, ক্যাটলফিস, কাঁকড়া বা ঝিনুক খাওয়ার চল হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে এগুলোর চাহিদা কম থাকলেও এগুলোও প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়। কারণ এসব মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়। শুধু ভারত বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বে বছরে তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য চলছে সমুদ্রকে ঘিরে। বিশ্বের ৪৩০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। পৃথিবীর ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানী তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাবার যোগান দিতে বিশ্ববাসীকে তাকিয়ে থাকতে হবে সমুদ্রের দিকেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট বড় আশার খবর হলো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে সমুদ্র নির্ভর ব্লু-ইকোনোমির দৌলতে। মনে করা হয় বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোনো সাগর-উপসাগরে নেই।

অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের অবদান মাত্র ৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অথবা ৬ শতাংশ
তাই আরো অনেক এগোনোর সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। ভারত ও ডিপ ওশিয়ান মিশন থেকে চোখ সরাচ্ছে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করতে চেয়ে বাংলাদেশ ভারত অনেক আগে থেকেই একসাথে ব্লু ইকোনোমি নিয়ে কাজ করছে। ধীরে ধীরে ব্লু ইকোনোমি দিয়ে গোটা দেশ সমৃদ্ধ হওয়ার অপেক্ষা।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version