।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশ জুড়ে ঘন ঘন লোডশেডিং এর আসল কারণ ফাঁস। ভ্যাপসা গরমে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট, জেরবার বাংলাদেশ। কিন্তু, এই পরিস্থিতি তৈরির নেপথ্যে কোন কারণ লুকিয়ে? সংকট সমাধানে বিকল্প ব্যবস্থাই বা কী? ভাবনাতেই কি গলদ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? বাংলাদেশ জুড়ে বিদ্যুতের বিরাট ঘাটতি। কিন্তু এই পরিস্থিতি তো একদিনে তৈরি হয়নি। তাহলে, কি গোড়ায় গলদ? বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন?
বিদ্যুত সংকটের জন্য তাঁরা আমদানি করা জ্বালানির ওপর অতি নির্ভরশীলতাকেই দায়ী করছেন। কিরকম? দেখুন পুরোটা হচ্ছে চেইন সিস্টেমে। বুঝতে হবে, ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি নেই বাংলাদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোতে। জ্বালানি আনতে না পারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আর তাতেই তৈরি হচ্ছে ঘাটতি। তৈরি হয়েছে বিদ্যুত সংকট। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫১.০৫ শতাংশ গ্যাস নির্ভর, ফার্নেস অয়েলের ওপর নির্ভরশীল ২৮.১৫ শতাংশ, ডিজেল চালিত কেন্দ্র থেকে ৫.৭৪ শতাংশ আর কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৭.৮৬ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে।
অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক এবং আমদানি করা এলএনজি। কয়লা ভিত্তিক এবং তেল চালিত যেসব কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোরও অধিকাংশই আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। কেন? কারণ, পরিবেশের কথা ভেবে কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ এসব কেন্দ্রের পুরো জ্বালানি বিদেশে থেকে আমদানি হয়। তবে এটাও তো ঠিক যে কাকতালীয়ভাবে এগুলো হয়নি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন্তাভাবনা করেই আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতি নেওয়া হয়েছিল। কয়লা, তেল বা এলএনজি, দেশে অনুসন্ধান করে উত্তোলনের চেয়ে আমদানি করে আনা সহজ ছিল। তাই, ধীরে ধীরে বাংলাদেশ আমদানি করা জ্বালানির দিকে ঝুঁকে যায়। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে পরিস্থিতি এরকম হয়ে দাঁড়াবে সেটা তখন কল্পনাও করা যায় নি।
তাহলে, ভুলটা কি তখনই হয়েছে? আসলে সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস এবং কয়লার দাম কম ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হয়েছিল, দেশে গ্যাস বা কয়লা উত্তোলন করতে যে খরচ হবে, সেই অনুযায়ী আমদানি করলে খুব বেশি পার্থক্য হবে না। তাই আমদানি নির্ভর কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি নীতি তৈরি করা হয়। কিন্তু, এখন পরিস্থিতি একেবারে অন্যরকম। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, তেল, কয়লার দাম বাড়া বা কমার প্রভাব পড়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকেই বিশ্ব বাজারে তেল, এলএনজি এবং কয়লার দাম বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে শুরুতে যেভাবে হিসাব করা হয়েছিল, সেই তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। সব মিলিয়ে, বাড়তি দামের কারণে বিশ্ব বাজার থেকে ডিজেল, এলএনজি এবং কয়লা কিনতেও হিমশিম খেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সরকার।
বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্লেষকদের মতে জ্বালানির খুব বেশি মজুদ না থাকায় একসময় বাংলাদেশ কে আমদানির দিকে যেতেই হতো, কিন্তু তারপরেও নিজেদের দেশে জ্বালানি অনুসন্ধানের চেষ্টাটাও থাকা দরকার ছিল। যেটা করা হয়নি, বরং অবহেলা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন বিকল্প ব্যবস্থা কি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট কাটাতে দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির ব্যবস্থা কিভাবে করা যেতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। সরকারের উচিত সৌর বিদ্যুতের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। একইসঙ্গে গ্যাস অনুসন্ধান আরও জোরদার করা দরকার। মোদ্দা কথা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে পাওয়ার সেল বলছে বাংলাদেশ সোলারের ওপর গুরুত্ব বাড়াচ্ছে, নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করছে। আমদানির পাশাপাশি দেশের সম্পদও কাজে লাগাচ্ছে, চেষ্টা করছে কিন্তু পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হতে পারে? সেই উত্তরের অপেক্ষাতেই তো অধীর আগ্রহে বসে আছে বাংলাদেশের মানুষ। এই মাসের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর, তারও আগে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাংলাদেশ খানিক রেহাই পাবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম