Pakistan: পাকিস্তানকে বাঁচাতেই লড়ছে মুসলিম বিশ্ব, পাক মাটিতে সৌদি-চীনের প্রতিযোগিতা !

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

 

Pakistan: পাকিস্তানকে বাঁচাতে লড়ছে মুসলিম বিশ্ব, সৌদি -আরব আমিরাত -চীনের মহাজোট। পাকিস্তানের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বড় সাহায্য। চীন দিল পাশে থাকার আশ্বাস। বন্ধু দেশগুলো পাকিস্তানকে আদৌ বাঁচাতে পারবে তো? এই মুহূর্তে কীভাবে অর্থনীতি চাঙ্গা করবে দেশটা? পাকিস্তানের মাটিতে চলছে সৌদি আর চীনের তুমুল লড়াই। জিতবে কে? সুকৌশলে খেলাটা খেলছেন শাহবাজ শরীফ। নিজের ঘর না সামলালে বিদেশি সাহায্য সবটাই বেকার। চাই প্রচুর ডলার। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে তো?

 

বিপদের কুয়োয় পাকিস্তান, হাল ফেরাবে মুসলিম বিশ্বের দেশ!

বহুদিন ধরেই পাক অর্থনীতির বেহাল দশা। আর সেই অর্থনীতির হাল ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন শাহবাজ শরীফ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে বারংবার যাচ্ছেন, শুধুমাত্র একটু সাহায্যের আশায়। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশ সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপর পাকিস্তানের বড় ভরসা। সাথে আছে চীন। পাকিস্তান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, চীন, সৌদি আরব আর সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটাকে বাঁচিয়ে দেবে। কিন্তু সত্যি কি তাই? মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো আদৌ পাকিস্তানকে নিয়ে ভাবে তো? নাকি শুধুই মুখের কথা? কাজের বেলা হয়ত সবটাই ফাঁকি! কারণ আছে। সৌদির সাথে পাকিস্তানের সমস্যা থাকলেও সেই সৌদি কিন্তু বারংবার পাকিস্তানকে আশ্বাস দিয়েছে। এমনিতে দেশটার রাজনীতির মতই অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। আর সেই পরিস্থিতির ফেরে পাকিস্তান এখন ঘুরছে তার বন্ধু দেশগুলোর দরজায়। বেজিং এর কাছে ফের হাত পেতেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান শুধুই চাইছে ডলার, আর কিছু নয়। একমাত্র কোটি কোটি ডলারই পারে পাকিস্তানকে উদ্ধার করতে। প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অনুদান চেয়ে চীনের কাছে গিয়েছিল পাকিস্তান। একইভাবে সৌদি আরব কিংবা আরব আমিরাতও কিন্তু পাকিস্তানকে আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ কতটা হল? শোনা যাচ্ছে, চীন ছাড়াও নাকি মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার থেকেও সাহায্যে এসেছে। কিন্তু তারপরেও পাকিস্তান তার নিজের পরিস্থিতির সামলাতে পারেনি। দরকার আরো ডলার। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো বিপদের কুয়ো থেকে পাকিস্তানকে টেনে বের করতে পারবে তো?

 

পাক মাটিতে সৌদি-চীনের প্রতিযোগিতা, মেপে চলছেন শাহবাজ শরীফ

বলে রাখা ভালো, এই পাকিস্তানের মাটিতে সৌদি আর চীনের একটা মারাত্মক কম্পিটিশন রয়েছে। বিশেষ করে ভূ রাজনৈতিকগত দিক থেকে এই দুই দেশ পাকিস্তানকে হাতে রাখতে চায়। তাই কিছুটা নিজেদের স্বার্থ মেটাতে দুই দেশই পাকিস্তানের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরেও রয়ে গিয়েছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। সৌদির মনে পাকিস্তানকে নিয়ে তো খটকার শেষই নেই। সমস্যাটা শুরু হয়েছিল সেই ২০১৯ সাল থেকে। যখন সৌদি বলেছিল পাকিস্তানকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি সাহার টাকার সাহায্য করবে। তখন থেকে চীনও উঠে পড়ে লেগেছে। সেই সময় পাকিস্তানের আর্থিক উন্নয়নে শরিক হতে চেয়েছিল সৌদি। পাশাপাশি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অংশীদারও হতে চেয়েছিল দেশটা।পাকিস্তানে নিজেদের প্রকল্পের চৌহদ্দিতে সৌদির উপস্থিতি কিন্তু চীনের জন্য খুব একটা স্বস্তির নয়। কারণ সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ভালো। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে সাহায্যের বিষয়ে সৌদি আর চীন রয়েছে দুই মেরুতে। আর তাই হয়তো পাকিস্তান ডলারের থেকেও বেশি পাচ্ছে আশ্বাস।

 

যদি পাকিস্তান আর সৌদি আরবের সম্পর্কে কথা বলা হয়, তাহলে কিন্তু বিগত এক দশকে এই সম্পর্কে প্রচুর উত্থান পতন ঘটেছে। ইয়েমেন যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত সৌদি কোনদিনও ভালোভাবে নেয়নি। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন মালেশিয়াতে ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসির বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করেছিল, তখনও সেটা সৌদি আরবের খুব একটা পছন্দ ছিল না। তবে শাহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন সরকারে দুই দেশের সম্পর্ক আবার উন্নতির দিকে এগিয়েছে। তাই তো পাকিস্তান সৌদি আরবের থেকে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের আশা করতে পেরেছে। আর অপরদিকে যেহেতু পাকিস্তান কৌশলগত এবং কূটনৈতিক সহযোগী মুসলিম দেশ, তাই ইসলামাবাদে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চায় সৌদি। বিগত তিন চার দশক ধরে সৌদি প্রায় সব খাতে তেল থেকে অর্জন করা অর্থ বিনিয়োগ করে এসেছে। তবে সেই বিনিয়োগের বেশিরভাগটাই হচ্ছিল সৌদির ভিতর। তাই সৌদি আরব মিশর থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত খুঁজছে নতুন বাজার। যেখানে শুধুমাত্র মূলধন বিনিয়োগ নয়, বরং ভৌগোলিকভাবেও নিজের প্রভাব বাড়াতে পারবে। সৌদি সবসময় চেয়েছে, এমন ভাবে বিনিয়োগ করবে যাতে তারা লাভবান হবে। পাশাপাশি তাদের অর্থনীতি এবং কৌশলগত গুরুত্ব বাড়বে। সোজা কথায়, পাকিস্তানের তরফ থেকে সামরিক আর কূটনৈতিক সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে সৌদি আরবের। আর ঠিক সেই কারণে বারংবার সৌদি আরব পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তাই শাহবাজ শরীফ সৌদি আরব আর চীনের মাঝে চলছেন অত্যন্ত মেপে মেপে। পাকিস্তানের দুই কুলই চাই। কাউকে চটালে হবে না।

 

পাক ঘরে আসল বিপদ, বাঁচার একমাত্র রাস্তা নগদ সাহায্য!

যদি বলা হয় চীন আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা, সেক্ষেত্রেও কিন্তু কোন দেশ পাকিস্তানকে ফিরিয়ে দেয়নি। বিনিয়োগের সন্ধানে গত তিন মাস ধরে একের পর এক দেশ সফর করেছেন শাহবাজ শরীফ। চীন সৌদি আর আরব আমিরাতে পাকিস্তান গিয়ে বারংবার বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ঋণের জর্জরিত। একমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই মুসলিম রাষ্ট্রসহ চীন পারে অনিশ্চিত অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সজাগ করতে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আগে পাকিস্তানকে নিজের ঘর ঠিক করতে হবে। না হলে কিন্তু এই বিনিয়োগই পরে পাকিস্তানকে বড় বিপদে ফেলতে পারে। প্রশ্নটা তো এখানেই। তাহলে কি পাকিস্তানের মিত্ররা বিনিয়োগ ডলারের মাধ্যমে দেশটার অর্থনীতিকে সচল করতে পারবে না? দেখুন আপাতত সৌদির সঙ্গে পাকিস্তানের যে কথাবার্তা চলছে, তার মধ্যে কিন্তু রয়েছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের একটা বিনিয়োগ প্যাকেজ। সেটা ইসলামাবাদের জন্য কম বড় পাওনা নয়। পাকিস্তান তার তৈল শোধনাগার প্রকল্প, কৃষি, খনি, বিদ্যুৎ খাত, প্রযুক্তি এবং বিমান চলাচল সহ প্রায় ছয়টি ভিন্ন ক্ষেত্রে সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখানে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের বিনিয়োগের বড্ড দরকার।

 

ওদিকে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার হল আরব আমিরাত। শাহবাজ শরীফ সেখানে গিয়েও রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘোষণা করে, আরব আমিরাত বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু খটকার জায়গা হল, আরব আমিরাত পাকিস্তানের ঠিক কোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারে এবং উভয়পক্ষ বিনিয়োগের জন্য একটা সময় সীমার জন্য সম্মত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বিশদে বিবরণ পাওয়া যায়নি। অপরদিকে যদি চীনের কথা বলা হয়, গত ১০ বছরে চীনের উপর পাকিস্তানের নির্ভরতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । চীনের কাছে পাকিস্তানের ঋণ কম নয়, কিন্তু তারপরেও চীনের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে দেশটা। চীন সফরে গেলে শাহবাজ শরিফের সাথে বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৩ টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়া সত্ত্বেও, কোন দৃঢ় চুক্তি হয়নি। এমন কোন প্রকল্প হয়নি যা দুই দেশ অগ্রাধিকার দিতে পারে। এমনটাই বলছে আল জাজিরা রিপোর্ট।

 

তবে হ্যাঁ নিঃসন্দেহে বলা যায়, পাকিস্তানে বিনিয়োগের সংখ্যা বাড়ছে। নির্বাচনের পর দেশটাতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা শরীফ সরকারের নতুন চ্যালেঞ্জ। তারপর পাকিস্তানকে সমস্ত বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ভাবছে একটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের দরকার নগদ সহায়তা। যদি মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ আর চীনের সাথে চুক্তিগুলো সফল হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু পাকিস্তানের হাতে খুব একটা বেশি নগদ আসবে না। তাই পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অসুবিধা থেকে বেরিয়ে আসার সর্বোত্তম উপায় হল অভ্যন্তরীণ সংস্কার, বিদেশি সমর্থন নয়। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। পাকিস্তানের উচিত তার দ্বিপাক্ষিক ঋণ দাতাদের কাছ থেকে নগদ ভিত্তিক সাহায্য যাওয়া। তবেই হয়ত পাকিস্তান পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version