Fuel Oil: যুদ্ধের আগুন লাগায়! কোন দেশের ভাণ্ডারে কত তেল? কম্পিটিশন চলছে

।। প্রথম কলকাতা ।।

Fuel Oil: বিশ্ব রাজনীতিতে জ্বালানি তেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে এই তেলই ‘কী-ফ্যাক্টর’। যেসব দেশে জ্বালানি তেলের মজুত বেশি, তারা হয় কোনো দেশের শত্রু কিংবা মিত্র। জানেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেলের মজুত কোন দেশগুলোতে? কেন তেলের জন্যই গোটা বিশ্ব একের পর এক সংঘাতের মুখোমুখি?

বিশ্ব রাজনীতির একটা বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে পরিশোধিত বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। যুগে যুগে এই জ্বালানি তেল নিয়ে বেঁধেছে সংঘাত। বিশ্বায়নের এই যুগেও মহাপরাক্রমশালী দেশগুলো তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রীতিমতো কম্পিটিশন চালাচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিবিদরা প্রতি মুহুর্তে তেলের দাম এবং এর প্রাপ্যতা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। জানলে অবাক হতে হবেন, ভেনিজুয়েলা সংকট, ইরানের উপর মার্কিন অবরোধ, লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ার সংঘাত এগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সেই তেল।

গবেষকদের মতে, এই সম্পদরুপী অভিশাপ অর্থনীতিকে চাপে ফেলে। রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে। যুদ্ধকে উসকে দেয়। অর্থাৎ এটা একেবারে স্পষ্ট যে, তেলই অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে বারংবার। বর্তমানে বিশ্বের শক্তির উৎসের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সেই জ্বালানি তেলের দখলে।

কোন দেশের কাছে কত পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে?

বিশ্বের মোট উৎপাদিত তেলের শতকরা ৭২ ভাগ তেল উৎপাদন করে তালিকার শীর্ষে থাকা ১০ টি দেশ। কারা এগিয়ে, কারা পিছিয়ে?

রাজনৈতিকভাবে ডামাডোলের মধ্যে থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের মজুত রয়েছে ভেনেজুয়েলায়। পরিমাণটা ৩৩০ বিলিয়ন। মানে ৩৩ হাজার কোটি ব্যারেল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে ভেনেজুয়েলা এই তেলভাণ্ডার ব্যবহার করতে পারছে না। অথচ ১৯৯০ এর দশক ও ২০০০ এর শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলা প্রচুর তেল বিক্রি করেছে। ২০২২ সালে ভেনেজুয়েলা দৈনিক গড়ে ছয় থেকে সাত লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করেছে। রপ্তানি করেছে ছয় লাখ ব্যারেল।

এরপরেই রয়েছে সৌদি। সৌদি আরবের তেলের মজুত ২৬৭ বিলিয়ন। মানে ২৬ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী এবং ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সৌদি আরব। ২০২১ সালে তাদের দৈনিক তেল উৎপাদন ছিল ৯০ লাখ ব্যারেলের কিছু বেশি। ২০২২ সালে যা ১ কোটি ১৫ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হয়। সৌদির টার্গেট মারাত্মক, ২০২৭ সালের মধ্যে সৌদি আরব দৈনিক তেল উৎপাদন করতে চায় ১ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল। বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সৌদি আরব।

ইরানের অপরিশোধিত তেলের মজুত ২০৮.৬ বিলিয়ন। মানে ২০ হাজার ৮৬০ কোটি ব্যারেল। দৈনিক উৎপাদন হয় ২৩ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল। তবে তারা রপ্তানি করে দৈনিক ৭ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলের কিছু বেশি। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ইরানের উপর। তাই এটা হয়েছে। সম্প্রতি ইরানের তেল রপ্তানি বেড়েছে। তেলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে তাদের।

তালিকায় রয়েছে কানাডাও। কানাডা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ‌। কানাডার অপরিশোধিত তেলের মজুত ১৭১ বিলিয়ন। ১৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল, যার সিংহভাগই আসে বিটুমিন থেকে। গত বছর দেশটা দিনে ৫০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উৎপাদন করেছে। কানাডার কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য থাকলেও চাহিদা বেশি থাকায় কানাডার তেল উৎপাদন বাড়ছে। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত তেল সরবরাহকারী দেশ কানাডা।

ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরাক। ইরাকে মজুত আছে ১৪৫ বিলিয়ন। মানে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল। দৈনিক উৎপাদন ৪৫ লাখ ব্যারেল ও রপ্তানি ৩৪ লাখ ব্যারেল। উৎপাদনের দিক থেকে তারা সৌদি আরবকে ধরে ফেলার প্ল্যানে রয়েছে।

ওপেক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাদের কাছে মজুত আছে ১১১ বিলিয়ন মানে ১১ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল তেল। দিনে উৎপাদন করে ২৭ লাখ ব্যারেল তেল। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি করে ২৩ লাখ ব্যারেল। তবে এখানে একটা কথা বলতে হচ্ছে, আরব আমিরাত শুধু তেলের মধ্যেই তাদের অর্থনীতি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। নানাভাবে অর্থনীতির বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে।

ওপেকের তথ্যানুসারে, কুয়েতে তেলের মজুত ১০১.৫ বিলিয়ন। মানে ১০ হাজার ১৫০ কোটি ব্যারেল। দৈনিক গড়ে ২৪ লাখ থেকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করে কুয়েত। রপ্তানি করে ১৭ লাখ ব্যারেল। এরপর রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের‌ এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যানুসারে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের মজুত ৮০ বিলিয়ন মানে ৮ হাজার কোটি ব্যারেল‌। দিনে উৎপাদন করছে ৯৪ লাখ ব্যারেল। কয়েক বছর আগে রাশিয়া দিনে ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করত। তবে ইউক্রেনে হামলার জেরে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, তার জন্য রাশিয়ার তেল উৎপাদন কমেছে। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও জ্বালানি রপ্তানি যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরেছে।

আর যুক্তরাষ্ট্র? এখানে একটা কনফিউশন আছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত ঠিক কত, তা নিয়ে ডিফরেন্স অফ ওপিনিয়ন রয়েছে। একটা হিসাব বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট তেলের মজুত ৬৮.৮ বিলিয়ন ব্যারেল। মানে ৬ হাজার ৮৮৯ কোটি ব্যারেল। আরেকটা হিসাবে, তাদের মজুত ৭৪ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল। মজুত যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী দেশ।

অন্যদিকে, উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার মজুত আছে প্রায় ৪৮.৩ বিলিয়ন। মানে ৪ হাজার ৮৩০ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। তা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে লিবিয়ার সরবরাহ খুব কম, দিনে মাত্র ১২ লাখ ব্যারেল। লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে দেশটিতে যে রাজনৈতিক ডামাডোল চলছে, তার জেরে তারা তেল উত্তোলন করতে পারছে না। তবে সম্প্রতি ইউরোপ উত্তর আফ্রিকার এই দেশেটার দিকে আবার ঝুঁকতে শুরু করেছে। এতে তাদের তেল ব্যবসা আবারও ফুলেফেঁপে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, অর্থনীতিতেও তেলের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন দেশের শিল্প, অবকাঠামো, কৃষিতে সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠার পেছনেও জ্বালানি তেলের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তাই, তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থান দৃঢ় ও মজবুত। জ্বালানি তেলের জাদুকরী স্পর্শে অনেক দেশের দুর্বল অর্থনীতিও রাতারাতি ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। অনেক দরিদ্র দেশ তেল বিক্রি করে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধশালী হয়েছে। সেইসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে, দুর্ভাগ্যবশত এই প্রাকৃতিক খনিজ তেলের অধিকারী বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটা দেশ। তাই বাকিদের, তেলের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর উপর নির্ভর করতে হয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version