Israel vs Palestine conflict: ফিলিস্তিনিদের পাশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বড় বিপদে ইসরায়েল!

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel vs Palestine conflict: রাফায় হামলা বন্ধ না করলে বিপদে পড়বে ইসরায়েল। বড় হুমকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের। বুঝতে পারছেন , ইউরোপের দেশগুলো যদি ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে নেতানিয়াহুর দেশ? মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি তাহলে কি পশ্চিমা দুনিয়ার চক্ষুশূল হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল? সম্পর্কে ভাঙন ধরেছিল আগেই, এবার প্রকাশ্যে এল গোটা বিশ্বের সামনে। হঠাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের উপর এত রেগে গেল কেন? যে ইউরোপের দেশগুলো ইসরায়েলকে সাপোর্ট করতো, মিত্র রাষ্ট্র বলত, আজ তারাই শত্রু হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের। শুধুমাত্র গাজায় হামলাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতিতে বদলে যাচ্ছে ইসরায়েলের অবস্থান। শেষে একদম দেওয়ালে পিঠ থেকে যাবে না তো?

 

বন্ধু যখন শত্রু, মহা বিপদে ইসরায়েল

এতদিন ইসরায়েল যাদেরকে বন্ধু রাষ্ট্র বলে মনে করতো, গাজায় বেসামরিকদের উপর হামলা করে সেই বন্ধুত্বের অঙ্কটাই বদলে ফেলছে তেল আবিব। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হুমকি দিল ইসরায়েলকে। রাফায় হামলা বন্ধ না করলে, সম্পর্কের অবনতি হবে। অর্থাৎ সরাসরি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুঝিয়ে দিল, ইসরায়েলকে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে, গাজায় হামলা বন্ধ করাটা অবশ্যই দরকার। দেখুন, মধ্যপ্রাচ্যে কিন্তু ইসরায়েল অনেকটা একা। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, এতদিন সাপোর্ট পাচ্ছিল পশ্চিমা দুনিয়া সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কাছ থেকে। কিন্তু এখন তারাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলের থেকে। ইউরোপের প্রায় ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষমতা কিন্তু কম নয়। সম্প্রতি ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানান, এভাবেই যদি ইসরায়েল রাফায় সামরিক অভিযান চালিয়ে যায়, তাহলে ইসরায়েলের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অর্থাৎ ইইউর যে সম্পর্ক রয়েছে সেখানে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

 

এটা এক প্রকার ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যদি রাফায় অভিযান বন্ধ না হয় তাহলে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম আরো বেশি ভাবে ব্যাহত হবে। সর্বস্ব হারাবে আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ। দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে মানুষের দুর্দশার পরিমাণ। দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাসের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে, এখনও গাজায় চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা। লক্ষ্য একটাই, হামাসকে ধরা। স্বাভাবিকভাবেই অবরুদ্ধ গাজায় প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ২৩ লক্ষ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেক এখন ঠাঁই নিয়েছে দক্ষিণের রাফায়। তাই রাফায় হামলা বন্ধের হুমকি দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যুক্তি দিয়েছে, এক্ষেত্রে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু সামরিক অভিযান করতে হবে আন্তর্জাতিক আইন মাথায় রেখে। আগে নিশ্চিত করতে হবে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা।

 

আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন, কখন যে সম্পর্কের সমীকরণ বদলাবে তা বলা ভীষণ মুশকিল। এই তো কিছুদিন আগের কথা, যখন ইসরায়েলের উপর ইরান হামলা করেছিল। তখন ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন নিষেধাজ্ঞার উদ্যোগ নেয়। সেই সময় ইসরায়েল তার মিত্রদের প্রতি তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অনুরোধ করেছিল। সেই সময় ইসরায়েলের মিত্রদের তালিকায় ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অর্থাৎ তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাপোর্ট করছিল ইসরায়েলকে। আর আজ দেখুন। সেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন গাজা হামলাকে কেন্দ্র করে, পুরো তিনশ ষাট ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরে গেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

 

ইসরায়েলের ফাঁস ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দম বন্ধ হবে নেতানিয়াহুর!

প্রসঙ্গত বলে রাখি, তলে তলে ইসরায়েল আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক কয়েক বছর খুব একটা চলছে না। অনেকটা বজায় রয়েছে উপর উপর দিয়ে। কারণ সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনা বলে দিচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আর ইসরায়েলের সম্পর্কের ফাটলের কথা। গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলাকে কেন্দ্র করে এবার তা প্রকাশ্যে চলে এল। এইতো গত বছরের কথা, ইসরায়েলে ইউরোপ দিবস উদযাপনে কূটনৈতিক অনুষ্ঠান বাতিল করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মূল কারণ ছিল, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন গিভির। যার মতাদর্শের সঙ্গেই নাকি একদমই মেলে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতাদর্শ। অনুষ্ঠান বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ওই ইসরায়েলি নেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন অকুটনৈতিক কণ্ঠরোধের অভিযোগ। আসলে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এই সংস্থার উল্লেখযোগ্য বহু সদস্য রাষ্ট্র কট্টর ডানপন্থী মতবাদে বিশ্বাস করে না। সেই সময় বেন গিভির জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈন্য এবং ইসরায়েলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপে অর্থায়ন করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর জন্য একেবারেই সমীচীন নয়।

 

ওই সময়ও কিন্তু ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে। পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছিল ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ায়, তীব্র নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ওদিকে ইসরায়েলের যুক্তি ছিল, ওই অবকাঠামোটি নাকি ইসরায়েলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনাধীন পশ্চিম তীরের একটা অংশ তৈরি হয়েছিল, যা অবৈধ এবং অনিরাপদ। কয়েক মাস আগেই পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উপর হামলাকারি বহু ইসরায়েলি যারা বসতি স্থাপন করেছিল, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ বেলজিয়াম। অর্থাৎ এই ইসরায়েলিরা বেলজিয়ামে প্রবেশ করতে নানান বাধার সম্মুখীন হবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেক দেশ ইসরায়েলের মিত্র জার্মানিও কিন্তু নাম লেখায় সেই তালিকায়।

 

সমর্থন পাচ্ছে ফিলিস্তিন, হেরে যাচ্ছে ইসরায়েল?

আর যদি ইসরায়েলের কথা বলা হয়, তাহলে ইসরায়েলও কিন্তু মাঝেমধ্যে ইউরোপকে হুমকি দিতে ছাড়েনা। চলতি বছর যখন হামাসকে ধরতে গাজায় তেল আবিব তার হামলার পরিমাণ বাড়াচ্ছিল, তখন এই অবরুদ্ধ অঞ্চলটির সমর্থনে এগিয়ে আসে ইউরোপের চার দেশ। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয় মালটা, আয়ারল্যান্ড স্পেন আর স্লোভানিয়া। কিন্তু ইসরায়েল যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত এই দেশগুলোর এমন সমর্থনকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ইতিমধ্যেই ইউরোপের এই চার দেশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কার্টজ। তার যুক্তি, যে দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে তারা নাকি সন্ত্রাস বাদের পক্ষে। সত্যি বলতে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় যেন হাঁফিয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এই বুঝি বড়সড় যুদ্ধ বাঁধল। প্রায়ই আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশকে। কারণ যুদ্ধ বাঁধা মানেই তার মাশুল গুনতে হবে কম বেশি সবাইকে। এর আগেও রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিশ্ব সেই ফলাফল ভোগ করেছে, আর এখনো করছে । তাই হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমাতে আর গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলা বন্ধ করতে, এতটা উদগ্রীব মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দুনিয়ার বহু দেশ। এবার দেখার ইউরোপীয় ইউনিয়নের এহেন হুমকির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল কি জবাব দেয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version