Iran helicopter crash: ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা? ঘোর সংকটে মধ্যপ্রাচ্য

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Iran helicopter crash: নাশকতা নাকি পুরোটাই দুর্ঘটনা? যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারে ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। বড় বিপদে ইরান। দেশের প্রেসিডেন্টের জন্য প্রার্থনা করছেন ইরানিরা। নেই কোন প্রাণের চিহ্ন। পুড়ে ছাই ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার। কোন প্রাণের চিহ্ন নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছে ইরানের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গুলো। সত্যি হল আশঙ্কা। ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে থমথমে গোটা ইরান। দেশটা পাবে নতুন প্রেসিডেন্ট। রাইসির মতো ইরানকে সামলাতে পারবে তো? কে আসছেন ক্ষমতায়? তোলপাড় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি। রাইসির বিমান দুর্ঘটনার পিছনে শত্রু দেশের বড় ছক নেই তো? শুরু জল্পনা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারে রাইসি, কীভাবে ঘটল এত বড় দুর্ঘটনা?

ভেঙে পড়া হেলিকপ্টারের খোঁজ মিললেও ধ্বংসস্তূপে কোন প্রাণের চিহ্ন নেই বলেই জানানো হয়েছে। বিবিসির তথ্য বলছে, ইব্রাহিম রাইসিকে বহন করছিল বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার। আর এই মডেলটি নাকি তৈরি যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্রের এটি ইরানের কাছে বিক্রি করার কথা নয়। সেই হিসেবে, এই উড়োযানটি প্রায় ৪৫ বছরের পুরনো। ইরানে কিন্তু এমন ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও আকাশপথে দুর্ঘটনায় ইরানের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। বিমান কিংবা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ইরানের প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন সময় পরিবহন মন্ত্রী, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড এবং সেনাবাহিনীর কমান্ডাররা। এখানেও রয়ে গিয়েছে একটা বড় ধোঁয়াশা। তাহলে কি প্রযুক্তিগত কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে কোন বড় নাশকতা?

 

একটি বাঁধের উদ্বোধন করতে আজারবাইজান গিয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। ফেরার পথে তাঁর কপ্টারটি উত্তর-পশ্চিম ইরানের জোলফায় বিপদে মুখে পড়ে। যতদূর শোনা যাচ্ছে, হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ায় ওই হেলিকপ্টারটি ঘন কুয়াশার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল। তারপরেই বিস্ফোরণের মত একটা জোরালো শব্দ হয়। মুহূর্তে শুরু হয়ে যায় উদ্ধারকাজ। প্রাথমিকভাবে ইরানের তরফ থেকে এটিকে হার্ড ল্যান্ডিংয়ের কথা বলা হলেও পরে জানা যায় কপ্টারটি ভেঙে পড়েছে। ওই কপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ছিলেন বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহাইন, আজারবাইজানের গভর্নর সহ অন্যান্য আধিকারিক এবং রাইসির দেহরক্ষীরা। আবহাওয়াও ছিল অত্যন্ত খারাপ। তুষার ঝড়ের কারণে উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনার স্থলে পৌঁছাতে দেরি করে ফেলে। ইরানের এই বিপদে গোটা বিশ্বে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রাশিয়া। মস্কোর তরফ থেকে পাঠানো হয় দুটো বিমান, হেলিকপ্টার সহ ৫০টি উদ্ধারকারী দল। রাইসির হেলিকপ্টারটির খোঁজ পাওয়া গেলেও, সেটি অত্যন্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। যদি হেলিকপ্টারের ওই অবস্থা হয়, তাহলে হেলিকপ্টারের যাত্রীদের বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়।

 

রাইসির নীতিতেই বেড়েছে ইরানের শক্তি, মধ্যপ্রাচ্যে ঘোর সংকট

দেখুন, এই সময়টা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের কাছে। পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে শুরু করে দিয়েছে। সেই তালিকায় একদম প্রথম দিকে রয়েছে ইরান। চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখছে পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে। পরমাণু শক্তি বলুন, আর অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, সবদিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশটা। ঠিক সেই সময় এত বড় একটা দুর্ঘটনা ইরানের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ ইরান আজ গোটা বিশ্বের কাছে যে নতুন রূপে পরিচিতি পাচ্ছে, তা কিন্তু ইব্রাহিম রাইসির আমলে। সোজা কোথায়, ইব্রাহিম রাইসির হাত ধরে ইরানের ভূ রাজনীতি বলুন, আর পররাষ্ট্র নীতি, সব দিকে এসেছে আমুল পরিবর্তন। প্রশ্নটা তো এখানেই। পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে ইসরায়েলের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে ইরান, তাহলে কি রাইসির মৃত্যু, পুরোটাই একটা নাশকতার ছক? এই ঘটনা এতটা সহজ ভাবে মেনে নেওয়া যায় না, বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। একটা উন্নত দেশের রাষ্ট্রপতির এভাবে মৃত্যু মানতে পারছে না অনেকেই। কারণ কোন দেশের রাষ্ট্রপতি কোথাও যাচ্ছেন মানে, তার চারিদিকে থাকবে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী, পাশাপাশি সতর্কতা তো রয়েইছে। ইরানের এত বড় দুর্ঘটনায় কিন্তু ঘোর সংকটে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্য। সুযোগ নিতে পারে শত্রু দেশগুলো।

 

নাশকতার ছক? রাইসির শত্রু কম নয়

কেন বারংবার নাশকতার ছক একটা আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে? আসলে কি বলুন তো, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের দেশের ভিতরে কিংবা দেশের বাইরেও বেশ চাপে ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। ২০১৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তাঁকে নিযুক্ত করেছিলেন বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে। ৬৩ বছর বয়সি রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইরানের দায়িত্বে আসার পর থেকেই তিনি নৈতিকতার বিষয়ক।আইন আরো কঠোর করার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে বিবেচনা করা হত একজন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা হিসেবে। তিনি তাঁর নিজের দেশেই সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। আর যদি পারমানবিক শক্তির কথা বলেন, তাহলে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক ক্ষমতার জেরে তাকে কম চাপে পড়তে হয়নি। আবার কোন কোন কূটনৈতিক মনে করছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছিলেন রাইসি। তাঁকে নিয়ে কম বিতর্ক নেই। ১৯৮৮ সালে যখন ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে, গণহত্যা চালাতে তৈরি করা হয়েছিল একটা বিশেষ কমিটি। যাকে বলা হত মৃত্যুর দূত। তার সদস্য ছিলেন রাইসি। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের তরফে ইরানের কিছু সরকারি আধিকারিকদের উপর জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। সেখানেও কিন্তু ছিল রাইসির নাম। আর, রাইসির আমলেই রীতিমত তলা নিতে গিয়ে ঠেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক। বহু বছর ধরে যুক্ত ছিলেন ইরানের শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে। ২০১৭ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখালেও জিততে পারেননি। পরের বার বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তবে হ্যাঁ, তাঁর নামে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, ইরানের বেশিরভাগ জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা তিনি। তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন ইরান ছিল গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। সেই সময় তিনি ইরানের হাল ধরেছেন। গত কয়েক বছরের আরো জোরদার করেছেন চীন আর রাশিয়ার সঙ্গে পররাষ্ট্র নীতি। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপেক্ষিতে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার উত্তেজনার মাঝে পোক্ত করেছেন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক।

 

ইরান পাবে নতুন প্রেসিডেন্ট!

স্বাভাবিকভাবেই এখন বিশ্ব রাজনীতিতে একটা বড় প্রশ্ন। রাইসির পর কে হবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট? কে ধরবেন ইরানের হাল? আর যদি ক্ষমতার বদল হয়, তাহলে ইরানকে কি আগের মত সামলাতে পারবে? ইরানের এই মুহূর্তে তো শত্রু সংখ্যা কম নয়। সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ মানুষের প্রয়োজন। ইরানের সংবিধান বলছে, যদি রাইসির মৃত্যুর পর তাঁর পদে বসবেন বর্তমান প্রথম ভাইসপ্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার। যদিও এক্ষেত্রে প্রয়োজন দেশটির সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদনের। অর্থাৎ আয়াতুল্লাহু আলি খামেনি ঠিক করবেন, কে হবেন ইরানের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর, পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে আয়োজন করতে হবে নির্বাচনের। আর সেখানে থেকেই বেছে নিতে হবে নতুন প্রেসিডেন্ট।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version