Bangladesh : বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে গিয়েছে ব্রহ্মপুত্র, বালুচরে বিলীন নদের অতীত ঐতিহ্য

।। প্রথম কলকাতা ।।

Bangladesh: বাংলাদেশের বুক চিরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এই নদ একসময় ছিল খরস্রোতা, এখন বহু জায়গায় মরা খালে পরিণত হয়েছে। বালুচরে ঢাকা পড়েছে তার অতীত ঐতিহ্য। একের পর এক জেগে উঠছে চর। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বালুচর, যার প্রভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে জীব বৈচিত্র এবং জীবন জীবিকার আবহমান প্রবাহ। ব্রহ্মপুত্র নদ না নদী? এই নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রকে নদ বলা হয় । মূলত যে জলধারা উৎপত্তিস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত কোন শাখা নদীর জন্ম দেয়নি তাকে বলা হয় নদ, আর যে জলধারা উৎপত্তিস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত প্রচুর শাখা নদীর জন্ম দিয়েছে তাকে বলা হয় নদী। যদিও বহ্মপুত্র নদ হয়েও এই নিয়ম মানেনি। বহু জায়গায় অনেকগুলি শাখা প্রশাখার জন্ম দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র অর্থাৎ ব্রহ্মার পুত্র। উৎপত্তিস্থল থেকে এই নদ চীনের তিব্বত, ভারতের অরুণাচল আসাম হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর অংশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর গতিবিধি এক্কেবারে সাপের মত আঁকাবাঁকা। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, নরসিংদী এবং কিশোরগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ব্রহ্মপুত্র। অবশেষে এই নদ মিলিত হয়েছে ভৈরব বাজারে মেঘনার সঙ্গে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ২৭৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই নদ হাজার হাজার বছর ধরে বাংলার প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অবদান রেখে চলেছে। ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় হাট বাজার, বন্দর, নগর, গঞ্জ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, বোটানিক্যাল গার্ডেন, আরো কত কি। শীতে নৌ ভ্রমণ সহ নদীর চরে বনভোজনের বাড়তি সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধান তিন নদী প্রণালীর মধ্যে একটি হল ব্রহ্মপুত্র নদ। বছরের প্রায় ৭২৫ মিলিয়ন পলি প্রদান করে। যার কারণে বাংলাদেশের বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে চরের কোলাজ। বাংলাদেশের ইতিহাস গঠনে, জনপদ তৈরিতে, কিংবা জীবনধারা বিকাশের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ৫০ টি নদ নদীর মধ্যে অন্যতম ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্রের মাহাত্ম্য নিয়ে হিন্দু ধর্মে জনপ্রিয় পৌরাণিক গল্প রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র একসময় বিশাল স্রোতধারা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও আজ সে অতি দুর্বল। অথচ ১৭৮৭ সালের দিকে বাংলাদেশের যমুনা নামের সেভাবে কোন নদী ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল শীর্ণকায় এক খাল। পরবর্তীকালে ব্রহ্মপুত্রের স্রোত ধারা সেই শীর্ণকায় খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাংলাদেশ পেয়েছে আজকের যমুনা নদী। বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম থেকে ব্রহ্মপুত্র উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাটের কাছে এসে পৌঁছেছে। তারপর গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার হরিচন্ডী হয়ে জামালপুর আর ময়মনসিংহের দিকে এসে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে।

ব্রহ্মপুত্রের উর্বর চর বাংলাদেশের কৃষিজ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই নদের দুই তীরে গড়ে উঠেছে বহু জনপদ। তবে দুঃখের বিষয় হল, ব্রহ্মপুত্রের সেই প্রসারিত বুকে আগের মতো আর জলের খেলা নেই। এখন খরস্রোতা সেই নদ কোথাও মরা খালে পরিণত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের দুর্দশার কারণে বাংলাদেশের নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতি কিছুটা হলেও টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে বহু জেলে পল্লী। নদ অববাহিকায় আগে চাষাবাদ হলেও সেচের জলের অভাবে সেই কাজ দুরহ। উপরন্তু বর্ষায় দুকুল উপচে বন্যা হয়। বন্যার কবলে পড়ছে নদ পাড়ের জনপদ। যদিও বাংলাদেশ সরকার ব্রহ্মপুত্রের নাব্য ফেরাতে বেশ তৎপর। সেই ২০১৯ সাল থেকে বহ্মপুত্রের গর্ভে খনন কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, যদি ড্রেজিং করে নদের গভীরতা বাড়ে তাহলে নদী বুকে আগের স্রোত ফিরে আসবে। বেঁচে যাবে নদ পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন। সেই পুরনো ছন্দে জেগে উঠবে নদের দুই পাড়। ব্রহ্মপুত্রের বুক দিয়ে যাবে বণিকের জাহাজ, জেলেরা খোশ মেজাজে মাছ ধরবে, আবার নদীর জল দিয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমি হবে সবুজে সবুজ। একদিকে বাঁচবে প্রকৃতি, অপরদিকে বাঁচবেন নদ পাড়ের মানুষের জীবন।

ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ের বিস্তৃত অংশ আজ মরুপ্রান্তরে পরিণত হয়েছে। একসময় এই নদ ছিল মাছের অভয়ারণ্য, অথচ আজ তার গর্ভ শূন্য হতে চলেছে। বাংলাদেশের জামালপুর, গাইবান্ধা , কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার প্রায় হাজার হাজার একর জমিতে চাষ হত শুধুমাত্র ব্রহ্মপুত্রের জল দিয়ে। কিন্তু সেই সুখের দিন আজ অতীত। শীতকালে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্রতে বহু জায়গায় আপনি হেঁটেই পার হতে পারবেন। নদীর স্রোত না থাকায় নদীর দুপাশের জনপদে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। একের পর এক ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোগ। বহু জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবসায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পুরনো ছন্দে ব্রহ্মপুত্রের নাব্য না ফিরলে ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যেতে পারে নদের বালুচর। বালুচর দখল করে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। যার কারণে দুর্ভোগে পড়তে পারে সাধারণ মানুষ।

কোথাও বা ব্রহ্মপুত্র মরা খাল আবার কোথাও বা ভীষণ ভয়ঙ্কর। ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে প্রচুর সাজানো-গোছানো বাড়ি। একবার যদি এই নদে বন্যা হয় তাহলে আর নিস্তার নেই। তখন এই নদ এতটাই উন্মত্ত হয়ে ওঠে যে বছরের পর বছর মানুষকে নিঃস্ব দেয়। কাল যে ব্যক্তির প্রচুর জমির মালিক ছিলেন সেই ব্যক্তি ব্রহ্মপুত্রের কারণে পরের দিন নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন। এক কথায় ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে চিন্তায় আছে বাংলাদেশের বহু মানুষ। একদিকে বন্যা তো একদিকে যে জেগে উঠছে চর। একদিকে সরকার চালাচ্ছে খনন কাজ, অপরদিকে তৈরি হচ্ছে একের পর একের নতুন বালুকা ভূমি। এতদিন ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সহায় ছিল, আজ সেই নদ সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version