Israel-Hamas war: রাফায় হামলা থামাতেই হবে, দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় ফেঁসে গেল ইসরায়েল !

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Israel-Hamas war: জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মুখে বড় চাপে ইসরায়েল। রাফায় সামরিক অভিযানের নাম করে ইসরায়েল নাকি চালাচ্ছে গণহত্যা। মারাত্মক অভিযোগ নেতানিয়াহুর দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় ফেঁসে গেল ইসরায়েল। ধ্বংস হয়ে যাবে ফিলিস্তিন। ভয় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের। জারি কড়া নির্দেশ। ইসরায়েল কি আদৌ মানবে? রাফা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে তলে তলে কোন কথা বলছেন বাইডেন? রাফায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে, ঘটে যাবে বড় বিপর্যয়। আশঙ্কাই কি তবে সত্যি হবে? নেতানিয়াহুকে শাস্তি দিতে কত দূর যেতে পারে, এই আদালত? ক্ষমতাই বা কতটুকু?

 

দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় ফেঁসে গেল ইসরায়েল! আরো কঠোর নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আদেশ দিয়েছে, ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ রাফায় ইসরায়েলকে অবশ্যই সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। শুধু তাই নয়, মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তে যে রাফা ক্রসিং রয়েছে, সেই ক্রসিং বহুদিন ধরেই আটকে দেখেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। যার জেরে প্রয়োজনীয় ত্রাণ রাফাতে ঢুকতে পারছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে মানবিক ত্রাণ ঢোকার জন্য খুলে দিতে হবে সেই ক্রসিং। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করে বলেছিল, রাফাতে ইসরায়েল নাকি সামরিক অভিযানের নামে যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা গণহত্যা। যার জেরে হুমকির মুখে পড়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের অস্তিত্ব। দক্ষিণ আফ্রিকা আদালতে অনুরোধ করেছিল, যাতে দ্রুত রাফাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্নটা হল, এই যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত নির্দেশ দিল, সেই নির্দেশ আদৌ কি ইসরায়েল মানবে? বিগত কয়েক মাসে, গোটা বিশ্ব দেখেছে, ইসরায়েল কারোর কথাই শুনছে না। বন্ধু রাষ্ট্রের সতর্কতা কিংবা আন্তর্জাতিক চাপ, কোন কিছুই ইসরায়েলকে রাফা অভিযান থেকে পিছু হটাতে পারেনি।

 

তবে ইসরায়েল প্রথম থেকেই বলে এসেছে, গতবছরের ৭ই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের উপর যে হামলা চালিয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাফাতে অভিযান চালানো ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোজা কথায়, হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের শান্তি নেই। শুধু তাই নয়, ইসরায়েল প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার মামলাটাকে বলে এসেছে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটা বিষয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিচার আদালত তার কাজ করবেই। সেই অনুযায়ী, বহুদিন ধরেই চলছিল মামলাটির তদন্ত। আসলে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের কাজও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো বিশ্বের বহু দেশ যখন কোণঠাসা হয়ে পড়ে, তখন সুবিচারের আশায় দারস্ত হয় এই আদালতে। রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে বিবাদ নিরসনের জন্য এই আদালত আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক রায় দিতে পারে। জাতিসংঘের সমস্ত সদস্যই এই আদালতের সদস্য। যদি কোন রাষ্ট্র এখানে মামলা দায়ের করতে চায়, তাহলে এই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। বিশেষ করে জেনোসাইড কনভেনশন বিরোধী মামলা গুলো শুনানি হয় এই আদালতে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের নাৎসিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তাই ১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষর করেন বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতারা। সেই তালিকায় বিশেষভাবে রয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রচুর দেশ।

 

কিন্তু হ্যাঁ, এর ক্ষমতা সীমিত। এই আদালত রায় দিলেও, সেই আদেশ কার্যকর করার ক্ষমতা খুবই কম। আর সেই জন্যই কি, ইসরায়েল এই বিষয়টাকে ভীষণ হালকা ছলে নিচ্ছে? পাত্তাই দিচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলাটিকে। ইসরায়েল কিন্তু প্রথম থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। ইঙ্গিতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে, রাফায় তাদের অভিযান বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোন বড়সড় নির্দেশ আসলেও তেল আবিব তা মানবে না। ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেন্সার এই নির্দেশকে অভিহিত করেছে ‘প্রকাশ্য আত্মহত্যা’ বলে। তাদের সাফ কথা, এই পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই যা ইসরায়েলকে সেই পথে ঠেলে দিতে পারে। যেখানে দরকার এবং যখন দরকার সেখানে ইসরায়েল তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে। রাফার ক্ষেত্রেও তারা একইভাবে অভিযান চালাবে।

 

ধ্বংস হয়ে যাবে ফিলিস্তিনিরা, আশঙ্কায় জাতিসংঘ!

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত নির্দেশে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, রাফায় ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান আর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাতে ফিলিস্তিনিরা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এই হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে যাকে বলা হয় গণহত্যা বা জেনোসাইড। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, গাজায় গণহত্যা হয়েছে কিনা সেই অভিযোগের তদন্তে যদি গাজাতে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা যায়, তাহলে তাদের অবাধ প্রবেশাধিকার আর অ্যাক্সেস দিতে হবে। সোজা কথায়, গাজার পরিস্থিতি এখন বিপর্যয়কর। তার মানে, এত সহজে এই মামলা আপাতত ইসরায়েলের পিছু ছাড়ছে না। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর এই নির্দেশকে মেনে চলার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত যা বলেছে তা কোন বিতর্ক ছাড়াই বাস্তবায়ন করা হবে। কারণ এই নির্দেশটা বাধ্যতামূলক। ইসরায়েলও কিন্তু এই সংক্রান্ত কনভেনশনে সই করেছে।

 

কূটনৈতিক মহলের মতে এটি শতাব্দীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি মামলা। যে মামলাকে কেন্দ্র করে আদালতের মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল আর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা। যেদিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। প্রশ্ন ছিল একটাই, ইসরায়েল কি আদৌ গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা করছে, নাকি টার্গেটে শুধুমাত্র হামাস? যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা গণহত্যার অভিযোগে দারস্ত হয়েছিল দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে। দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা প্রায় ৮৪ পৃষ্ঠার নথিতে দাবী করা হয়, ইসরায়েলের কার্যকলাপ চরিত্রগতভাবে এক প্রকার গণহত্যাই। কারণ ইসরায়েল গাজায় থাকা ফিলিস্তিনিদের একটা বড় অংশকে ধ্বংস করতে চাইছে। যুক্তি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাখ্যা করেছিল, ফিলিস্তিনিদের হত্যা, গুরুতর মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যাতে সমগ্রভাবে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি হয়। এই নিয়ে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আটকাতে চলতি বছর তৃতীয় বারের মতো নির্দেশ ছিল এই আদালতের ১৫ সদস্যের বিচারক প্যানেল। যদিও ইসরায়েল প্রথম থেকেই বলে এসেছে, এই মামলাটির লড়তে তাদের কোন অসুবিধা নেই। আর তার থেকেও বড় কথা, হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তারাই বহন করছে এর সম্পূর্ণ নৈতিকতার দায়।

 

গত বছরের ৭ই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে, তারপর থেকে সেই যে গাজায় হামলা চলছে তা এখনো পর্যন্ত থামেনি। এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৮০০ মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে গাজার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে রাফা শহরে। আর সেখানে ৭ই মে থেকে স্থল অভিযান চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু। জাতিসংঘের হিসেব বলছে, এই অভিযানে ১৮ই মে পর্যন্ত রাফা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ। আর এই রাফা অভিযান নিয়ে এখন বড় বিতর্কে মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যেহেতু প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করেছিল, তাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকেও। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, রাফায় অভিযান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু সরকারের কাছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাফা ক্রসিং দ্রুত উন্মুক্ত করার জন্য ইসরাইয়েল আর মিশরের সাথে আলোচনার উপর গুরুত্ব নিয়েও ইসরায়েলি মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তবে রাফায় ইসরায়েলি হামলা কবে থামবে, সেই সংক্রান্ত সবকিছুই এখন সম্ভবনার মুখে। চূড়ান্ত কিছুই জানা যায়নি।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version