Egypt-Israel: ইসরাইলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের কড়া অ্যাকশন, তবে কী যুদ্ধে জড়াবে মিশর ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Egypt-Israel: মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ। একের পর এক দেশ যখন ইসরায়েলের বিরোধিতা করতে শুরু করেছে, তখন হয়তো মিশরও নিতে পারে একটা বড় পদক্ষেপ। ইসরায়েল আর হামাসের সংঘাতের পর থেকেই কিন্তু মাঝেমধ্যেই শিরোনামে চলে আসছে মিশর দেশটা। গাজা লাগোয়া দেশটার সীমানা থাকায় কম ভোগান্তিতে পড়েনি। কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, এবার যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে ইসরায়েল আর মিশরের। কিন্তু এই আশঙ্কা কতটা সত্যি? এই দুই রাষ্ট্রের শত্রুতা অতটাও তিক্ত নয়। গভীর বন্ধুত্বও যেমন নেই, তেমনি শত্রুতার খারাপ ইতিহাসও নেই। তাহলে হঠাৎ করে কেন বলা হচ্ছে, মিশর চলে যেতে পারে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে? এমনকি যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। নাকি সবটাই আশঙ্কা? গাজার হয়ে হঠাৎ মিশর এত কথা বলছে কেন? লুকিয়ে অন্য স্বার্থ।

 

ইসরায়েলের নতুন শত্রু মিশর! যুদ্ধের মোড় ঘোরাচ্ছে গাজা

আসলে কি বলুন তো, সেই ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পাল্টা ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। আর তখন থেকেই, মিশর ইসরায়েলকে সতর্ক করে আসছে, যাতে গাজা উপত্যকায় জোর করে স্থানীয়দের বাস্তুচ্যুত করা না হয়। আসলে এই মুহূর্তে, মিশর রয়েছে বিশাল চাপে। প্রথম থেকেই, কায়রো সিনাই উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের পাঠানোর পরিকল্পনাকে জোরালো ভাবে বিরোধিতা করে আসছে। রাফায় ইসরায়েল যে অভিযান চালাচ্ছে, তার বারংবার প্রতিবাদও করেছে মিশর। আসলে দেশটা মনে করছে, এই অভিযান বড় ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে ১৯৭৯ সালে হওয়া শান্তি চুক্তিকে। এই যে মিশরের মাঝেমাঝে সতর্কতা কিংবা প্রতিবাদ , তা ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে ইসরায়েলের প্রতি এক নেতিবাচক ভাবনায়। কূটনৈতিক গুঞ্জন বলছে, মিশরের নাকি কিছু সরকারি কর্মকর্তা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে দিতে পারেন।

 

শুধু তাই নয়, তেল আবিব থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে তাদের রাষ্ট্রদূতকে। মিশরের সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও বড় বড় হেডলাইন করে সমালোচনা করা হচ্ছে ইসরায়েলের। তাদের দাবি, বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে নাকি এই অঞ্চলে এমন বৈরিতা দেখা যায়নি।। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহল মনে করছে, ইসরায়েল গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সিনাইতে নিয়ে যেতে চায়, আর মিশর ইসরায়েলের এই পরিকল্পনাকে যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। কারণ ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ, মিশরের জাতীয় নিরাপত্তার কাছে বড়সড় একটা হুমকির মত। মিশরের শাসকরা আপাতত জোর দিচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজভূমিতে নিরাপদে থাকতে পারে। ইসরায়েল আর মিশরের মধ্যে তিক্ততা যে শুরু হয়েছে, তার বড় প্রমাণ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। কয়েক সপ্তাহ আগে, ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্রের কথায়, তারা মিশরকে বলেছিল যাতে ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষদের জন্য রাফা সীমান্ত খুলে দেয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে মিশর রাজি হয়নি।

 

মিশর-ইসরায়েলের জটিল সম্পর্ক, অতীতে বিস্তর জলঘোলা

আসলে কি বলুন তো, মিশর আর ইসরায়েলের সম্পর্ক না ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের, না তীব্র শত্রুতার। কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মিশর যেন এই বিষয়ে একটু বেশি সতর্ক রয়েছে। প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েল আর হামাসের সংঘাত থামাতে, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করছে। যদি পুরনো ইতিহাসের দিকে তাকান, ১৯৭০ এর দশকে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত কে যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল প্রস্তাব দিয়েছিল, নেগেভ মরুভূমিতে একখণ্ড ভূমির বিনিময়ে মিশর যেন সিনাই উপত্যকার একাংশ ইসরায়েলকে ছেড়ে দেয়। তখনও কিন্তু আনোয়ার সাদাত সেই সিদ্ধান্তে রাজি হননি। বরং বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি ইলাত বন্দর দেয় তাহলে মিশর তার বিনিময়ে সিনাই উপত্যকার কিছুটা অংশ ছাড়তে রাজি। তখন মিশরের সেই প্রস্তাবে আবার রাজি হয়নি যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েল। মোটামুটিভাবে ইসরায়েল আর মিশরের মধ্যে চাপা উত্তেজনা কম নেই।

 

তবে ইসরায়েল হাল ছাড়েনি, বহুদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের সিনাই উপত্যকায় পাঠানোর চেষ্টা করেছে। আর তার প্রতিবাদ করে গিয়েছে মিশর। সম্প্রতি গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে, একে অপরকে দোষারোপ করতেও ছাড়েনি। যখন একদিকে ইসরাইলের পররাষ্ট্র নীতি দাবি করেছে, মিশর নাকি গাজা সীমান্তে অবরোধ তৈরি করেছে, যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ সরবরাহ। এর প্রত্যুত্তরে আবার মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেদিন থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই রাফা ক্রসিংয়ের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে। গাজার সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাণ পাঠানো যাচ্ছে না। উপরন্তু, মিশর বারংবার রাফায় সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে এসেছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যে মামলা দায়ের করেছিল,সেখানেও সমর্থন দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল মিশর। সোজা কথায়, এই দুই দেশের সম্পর্ক অনেকটা শীতল শান্তির মতো। এই ভালো তো, এই খারাপ। যদি এভাবেই দিনের পর দিন ধীরে ধীরে একে অপরের প্রতি ক্ষোভ পুঞ্জিভূত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যুদ্ধ বাঁধার আশঙ্কা রয়েছে।

 

গাজা যুদ্ধে চাপে মিশর, মধ্যপ্রাচ্যে বাঁধবে বড় যুদ্ধ

গাজায় ইস্যুতে আরেক দিক থেকে বেশ বড় রকম চাপে পড়েছে মিশর। এমনি থেকেই দেশটা ক্রমবর্ধমান ঋণে জর্জরিত। মিশর সরকারের ঋন মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৯০% এরও বেশি। দিনের পর দিন কমছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই কমবে মিশরের পর্যটন আয়। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে দেশটার পর্যটন আয় কমে যেতে পারে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। একে যুদ্ধ, অপরদিকে লোহিত সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা , এই দুই মিলে গভীর সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে মিশর। যার মূল কারণ, মিশরের সঙ্গে রয়েছে গাজা আর ইসরায়েলের উভয়ের সীমান্ত। আর এই দুই পক্ষের যুদ্ধের এফেক্ট সরাসরি গিয়ে পড়ছে মিশরে। গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রেও মিশরকে কিছুটা নির্ভর করতে হয় ইসরায়েলের উপর। ঘুরপথে মিশরের অর্থনীতি জড়িয়ে ইসরায়েলের সাথে। সেখানেও কিন্তু দেশটা খাচ্ছে একটা বড়সড় ধাক্কা।

 

আর পাশাপাশি রাফায় আশ্রয় নেওয়া ১৪ লক্ষ ফিলিস্তিনির ভাগ্য মিশরের একটা বড় অস্বস্তির কারণ। মিশরে ইতিমধ্যেই রয়েছে প্রায় ৯০ লক্ষ শরণার্থী। মিশরের আশঙ্কা, যদি গাজার শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় তাহলে হামাস সহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সদস্যরাও মিশরে চলে যেতে পারে। যার ফলে আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে সিনাই উপত্যকা। এতগুলো রিস্ক জোনে থাকার কারণে মিশর গাজায় হামলার আগেই ইসরায়েলকে সতর্ক করেছিল। কূটনৈতিক মহলে ওই সময়টা গুঞ্জন উঠেছিল, কায়রো নাকি বারংবার ইসরায়েলিদের সতর্ক করে বলেছিল, গাজা থেকে বড় কোন কিছুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল ওই সতর্কতাকে পাত্তা দেয়নি। উল্টে বেশি মনোযোগ দিয়েছে পশ্চিম তীরের দিকে। যদিও ওই তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

 

অপরদিকে ফিলিস্তিনিদের মনে আরো জোরালো হচ্ছে ইসরায়েল বিরোধী ক্ষোভ। বহু ফিলিস্তিন নাগরিক মনে করছেন, ইসরায়েল বিশ্বকে পাত্তা দেয় না। ইসরায়েল এমনভাবে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে যেন তারা সমস্ত আইনের ঊর্ধ্বে। যার অন্যতম কারণ, মার্কিন প্রশাসন। কারণ ইসরায়েলের সমস্ত শাস্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। গোটা বিশ্ব এখনো পর্যন্ত ইসরায়েলিদের হাতে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধ করতে যেন প্রস্তুত নয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তে ইসরায়েল আর হামাসের দ্বন্দ্ব থামার নয়। কারণ হাজারো চেষ্টা করে সফল হয়নি যুদ্ধ বিরতি চুক্তি। দিনের পর দিন বাড়ছে ইসরায়েলের শত্রু সংখ্যা। অপরদিকে আবার, প্রকাশ্যে হাত মিলিয়েছে হামাস আর ইরান। এমত পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যে হামাস আর ইসরায়েলের সংঘাতের থেকেও বড়সড় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। সেই তালিকায় মিশর থাকাটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version