China: সৌর কোষ আর জলে বিদ্যুতের কামাল, কার্বন ক্যাপচার কাকে বলে বোঝাবে চীন! প্রকৃতির ভরসাতেই বেঁচে আছে দেশটা

।। প্রথম কলকাতা ।।

China: বিশ্বকে অবাক করে এটা কী বানিয়ে ফেলল চীন? জল আলোর পরিপূরক পদ্ধতিতে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। দীর্ঘমেয়াদি শক্তির জোগান নিশ্চিত করতে বেইজিং এর বড় পরিকল্পনা। কিন্তু, কেন কয়লার বদলে চীনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব পাচ্ছে জল, বায়ু ও সৌর শক্তির ব্যবহার? রিনিউয়েবল এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তি জোগানে চীনের চমৎকার। এবার লক্ষ লক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণ করবে হাইড্রো-ফটোভোলটাইক কমপ্লিমেন্টারি পাওয়ার স্টেশন। কিন্তু ফটোভোলটাইক বলতে কি বোঝায়? এর কাজ কী? দেশটার টার্গেট সম্পর্কে আন্দাজ আছে? একটা দুটো নয়, আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল এই পাওয়ার স্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে একের পর এক চমক।

কয়লা ব্যবহারের ওপর লাগাম টানছে চীন। আছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর নানান পরিকল্পনা। জল, বায়ু এবং সৌর শক্তির ওপর খুব বেশি করে ফোকাস করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে এই তিনের উপরেই ভরসা করতে চাইছে চীন। তাই, এবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রো-সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করল বেইজিং। অলরেডি নির্মাণ করা হয়েছে সবচেয়ে বড় হাইড্রো ফটোভোলটাইক কমপ্লিমেন্টারি পাওয়ার স্টেশন। ফটোভোলটাইক মানে সৌর কোষ।‌ বুঝিয়ে বলছি। একটি সৌর কোষ, বা ফটোভোলটাইক মানে পিভি সেল হল একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা সূর্যের আলোকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। এটা একটা ভৌত এবং রাসায়নিক ঘটনা। সৌর কোষগুলো সিলিকন, ক্যাডমিয়াম টেলুরাইড এবং কপার ইন্ডিয়াম গ্যালিয়াম সেলেনাইডের মতো অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি। চীনের হাইড্রো ফটোভোলটাইক কমপ্লিমেন্টারি পাওয়ার স্টেশনটা জল-আলোর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫৫০ কিলোমিটারের মধ্য ১৫ হাজার বৈদ্যুতিক যানকে চার্জ করার ক্ষমতা আছে। এই পাওয়ার স্টেশনটা প্রাথমিক অপারেশন চালিয়ে ফেলেছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ইয়াজিয়াং কাউন্টির গার্জের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের ইয়ালং নদীর অববাহিকায় এই প্ল্যান্টটা অবস্থিত। যা ৬ লাখ টন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান। ১.৬ মিলিয়ন টনেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে এই পাওয়ার স্টেশন। সূর্যালোকের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পিভি সৌরবিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর উৎপাদন আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই ধরনের পরিস্থিতি সহজেই সামাল দিতে পারে ফলে স্থিতিশীল এবং উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। রয়েছে একাধিক চমক। যেমন, ১৬ মিলিয়ন বর্গমিটারের বেশি এলাকা নিয়ে গঠিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২ হাজার ফুটবল মাঠের চেয়েও বড়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা ভূমি থেকে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় তৈরি করা হয়েছে, যা বিশ্বের তৃতীয় মেরু অঞ্চল শিয়াজাংয়ের আলি এলাকার উচ্চতার সমান এবং তিব্বতের লাসা শহর থেকেও ১ হাজার মিটার ওপরে অবস্থিত। এছাড়া মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার ফোটোভোলটাইক ফাউন্ডেশন পাইল পাওয়ার স্টেশনে ইনস্টল করা আছে। যার ওজন চীনের প্রথম অভ্যন্তরীণভাবে নির্মিত বড় যাত্রীবাহী বিমান ২২২ সি ৯১৯-এর সমান।

মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার ফোটোভোলটাইক ফাউন্ডেশন পাইল পাওয়ার স্টেশনে ইনস্টল করা আছে। যার ওজন চীনের প্রথম অভ্যন্তরীণভাবে নির্মিত বড় যাত্রীবাহী বিমান ২২২ সি ৯১৯-এর সমান। এই ফটোভোলটাইক পাইলগুলোকে সংযুক্ত করা হলে মোট দৈর্ঘ্য ৪০০ কিলোমিটারের বেশি হবে, যা বেইজিং-তিয়ানজিন রেলওয়ের মোট দৈর্ঘ্যের ১১ গুণ। পিভি পাওয়ার হাউসের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছিল, যা দিয়ে ২০২২ সালের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ন্যাশনাল স্টেডিয়াম বার্ডস নেস্টের মতো আরেকটা ভেন্যু তৈরি করা যেত। দুই মিলিয়নেরও বেশি ফটোভোলটাইক মডেল একত্রিত করা হয়েছিল। উপাদানগুলো চীনের অর্ধেকজুড়ে ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের পরিবহণ দূরত্বসহ তিনটি বেইজিং ড্যাক্সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এলাকাকে কভার করতে পারে।

জানিয়ে রাখি, চীন দীর্ঘমেয়াদি শক্তির জোগান নিশ্চিত করতে বিকল্প উপায় খুঁজছে। এর প্রথম উদ্যোগ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা ১৪ তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ইয়ালং নদীর ক্লিন এনার্জি তটরেখায় নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে, পাওয়ার চায়না চেংডুর ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৬ সালে কেলার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা শুরু করে, যার নির্মাণ শুরু হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। ইয়ালং নদীর লিয়াংহেকৌ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প, যা মার্চ মাসে মোট ৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট সক্ষমতা নিয়ে চালু করা হয়েছিল। কেলা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ লিয়াংহেকাউয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং তারপর পাওয়ার গ্রিডে যুক্ত হবে। দুটো মিলে একটা বিশাল নবায়নযোগ্য শক্তি জোগানের ক্ষেত্র তৈরি করবে। ১০ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে। এককথায় প্রকল্পটা, বিশ্বের বৃহত্তম সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ঘাঁটিতে পরিণত হবে। যার ফলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, জাতীয় শক্তিকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার, কৃষি ও পর্যটন শিল্পগুলোকে উন্নত করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version