।। প্রথম কলকাতা ।।
শত শত কোটি টাকার গ্যাস নিয়ে বড় বিপদে রাশিয়া। কিনবে কে? রুশ অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা। হুড়মুড়িয়ে কমছে আয়। সামাল দেবে কি করে মস্কো? চীনের উপর ভর করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন পুতিন। ইউরোপের বিকল্প বাজার খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ হবে না। বাড়তি গ্যাস নিয়ে কী করবে মস্কো? অপশন কোথায়? শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। এখনও রাশিয়ার ৯০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাসের কোনো ক্রেতা নেই। বড় নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা রুশ অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। এবছর গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ায় পাল্লা রাশিয়ার আয়ও কমছে।
যুদ্ধের পর থেকেই রাশিয়া তার গ্যাসের নতুন বাজার খুঁজেছে, অন্যদেরকে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে, রাশিয়ার ভেতর যেসব অঞ্চলে এখনো অভ্যন্তরীণ গ্যাস নেটওয়ার্ক পৌঁছেনি, সেখানে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাচ্ছে কি? যুদ্ধের আগে রাশিয়ার বাজেটের অর্থের এক-তৃতীয়াংশের বেশির উৎস ছিল এই তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে পাওয়া আয়। তেলের বাজার ঠিক থাকলেও গ্যাস-রাজস্বের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সরকার ও দেশটার সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ইউরোপের বাজার থেকে সরে আসার ধাক্কা সামলানো রাশিয়ার জন্য সহজ কাজ নয়। তবে রাশিয়া তার গ্যাস নিয়ে কৌশল বদলে চীনের দিকে মুখ ঘুরিয়েছে।
যুদ্ধের আগে ইউরোপে রাশিয়া যে পরিমাণ গ্যাস রপ্তানি করছিল, তার অতি অল্প অংশই এখন চীনে যাচ্ছে। কিন্তু এই বছরের মধ্যে এর পরিমাণ ৪২ শতাংশ বেড়ে ২২ বিলিয়ন ঘনমিটার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর ২০২৫ সাল নাগাদ রাশিয়া চীনে ৩৮ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস রপ্তানি করতে পারে। যদিও সেক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বের চালু হওয়া পাওয়ার অভ সাইবেরিয়া গ্যাস পাইপলাইনটা চীনে গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু, চীনের কাছে আরও গ্যাস বিক্রি করতে হলে ক্রেমলিনকে এই পাইপলাইনের পরিপূরক নতুন পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। জানিয়ে রাখি, ইউক্রেনে আক্রমণের আগে গ্যাজপ্রম চীনের সঙ্গে গ্যাস সরবরাহের দ্বিতীয় একটি চুক্তি করেছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী গ্যাজপ্রম চীনকে আগামী ২৫ বছর ধরে বছরে আরও বাড়তি ১০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করবে। এই গ্যাস যাবে ফার ইস্টার্ন রুট নামক দ্বিতীয় একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে, কিন্তু সেটা এখনো নির্মাণ বাকি।
যদি এই বছরের শেষ নাগাদও মস্কো-বেইজিংয়ের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হয় তাহলেও পাইপলাইন তৈরি করতে কমপক্ষে আরও পাঁচ বছর সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে আরেকটা অপশন তুরস্ক। তুরস্ক অনেক আগে থেকেই রাশিয়ার গ্যাসের বড় ক্রেতা। রাশিয়া এখন চেষ্টা করছে তুরস্ককে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপে গ্যাস পাঠাতে। তুরস্কে একটি ট্রেডিং হাব তৈরির পুতিনের পরিকল্পনাকে অলরেডি স্বাগতম জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তাছাড়াও গ্যাজপ্রম উজবেকিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। কিন্তু, তুরস্কে ট্রেডিং হাব, মধ্য এশিয়ায় নতুন বাজার, চীনমুখী নতুন পাইপলাইন এসব পরিকল্পনায় অগ্রগতির জন্য রাশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে প্রচুর কলকাঠি নাড়তে হবে। ফলে বাড়তি গ্যাস নিয়ে আপাতত কী করবে তা নিয়ে মস্কোর হাতে খুব বেশি অপশন নেই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম